অভিনব: চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন ইউতা। গোল করে সতীর্থকে উৎসর্গ ডিকার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মোহনবাগান ১ : লাজং ১
ডার্বির নায়ক কিংগসলে ওবুমেনেমে লালকার্ড দেখে তিয়াত্তর মিনিটে বেরিয়ে গেলেন।
জোড়া পেনাল্টি হল এবং তা থেকে জোড়া গোলও।
গোল করে ব্রাজিলীয় ভঙ্গিতে মোহনবাগানের দিপান্দা ডিকার অভিনব সেলিব্রেশন।
পাল্টা গোল করে শিলং লাজংয়ের স্যামুয়েল লালমুনাপুলার নাচতে নাচতে প্রতিপক্ষ গ্যালারির দিকে যাওয়া।
শিল্টন পালের অসাধারণ একটা সেভ। অসংখ্য ফাউল। রেফারির অবিরাম বাঁশি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবভারতীতে নাটকীয় ম্যাচে কোনও রসদেরই অভাব ছিল না। হাজার দশেক দর্শক অবশ্য উপভোগ্য এই লড়াইয়ের পরও ম্লানমুখে বাড়ি ফিরলেন। আর মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন পয়েন্ট হারানোর জন্য দুষলেন দলের দুই ডিফেন্ডার কিংগসলে এবং কিংশুক দেবনাথকে। বলে দিলেন, ‘‘কিংগসলের আচরণ সমর্থন যোগ্য নয়। কিংশুকের যে ট্যাকলে লাজং পেনাল্টি পেয়েছে, সেটার মানে হয় না।’’ ডিকা সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘‘পেনাল্টির গোল ছাড়া কিছু করেনি।’’
দলের কোচ তাঁর ফরোয়ার্ডকে নিয়ে চাঁছাছোলা মন্তব্য করলেও খেলার শুরুর দিকে গোল করেই রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে দৌড়েছিলেন ডিকা। তাঁর পর দলের ফিজিও-র হাত থেকে কেড়ে নিলেন বারো নম্বর জার্সি। যে জার্সি পরে ডার্বির নায়ক ইউতা কিনওয়াকি চোট পেয়ে এখন বাড়িতে বসে। ডিকা সতীর্থ জাপানি মিডিওর সেই জার্সি মেলে ধরলেন টিভি ক্যামেরার সামনে। যাতে বাড়িতে বসেই সেটা দেখতে পান ইউতা। জানা গেল, ম্যাচ শুরুর আগে ক্যামেরুন স্টাইকার তাঁর প্রিয় বন্ধুর জার্সিটা আনতে বলেছিলেন ফুটবল বিভাগের এক কর্তাকে। গোল করলে তা উৎসর্গ করবেন বলে।
তিন বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে চোট পেয়ে নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) ছিটকে গিয়েছিলেন টুনার্মেন্ট থেকে। জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর আগে নেমারের নাম লেখা দশ নম্বর জার্সি লাইন আপের সময় তুলে ধরেছিলেন দুই সতীর্থ দাভিদ লুইস আর হুলিও সিজার। নেমারের অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করার শপথ নিতে। যদিও সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল লুইস-দের। ব্রাজিলীয় ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক হয়ে রয়েছে সেই ম্যাচ সাত ১-৭ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল জার্মানির বিরুদ্ধে।
ম্যাচের পর ডিকা বা তাঁর দল মোহনবাগান হারের লজ্জা উপহার না দিলেও, যুবভারতী থেকে মাথা নিচু করেই বেরোতে হল তাঁদের। লুধিয়ানায় মিনার্ভার কাছে পয়েন্ট নষ্টের পর ফের ধাক্কা। আবারও সেই পাহাড়ি দলের কাছে হার। গত দু’বছর যেখান থেকে ট্রফি জেতার পদস্খলন শুরু হয়েছিল সনি নর্দে-দের। মোহনবাগান কোচ বলে দিলেন, ‘‘এই ধাক্কাটা দরকার ছিল। এটা আমি হারের সমানই মনে করছি। শুরুতে হয়েছে এ বার। ট্রফি জেতার রাস্তা তৈরি করার জন্য অনেক ম্যাচ এখনও রয়েছে হাতে।’’
বাগানে এতদিন বনস্পতির ছায়া দিতেন যিনি, সেই সনি খেলেননি। কুঁচকির চোটের জন্য নামেননি আনসুমানা ক্রোমাও। শিলং কোচ ববি ননগোবেট স্বীকার করলেন, ‘‘ওই দু’জনের না থাকাটা আমাদের অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছিল।’’ পাহাড়ি কোচ যা বলেছেন তা একশো শতাংশ সত্যি। ফের প্রমাণ হল, স্বদেশীরা নয়, আই লিগের ম্যাচে তফাত গড়ে দেন সনি-ব্যারোটেদের মতো তারকারাই।
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অভিষেক দাশ, কিংগসলে ওবুমেনেমে, কিংশুক দেবনাথ, রিকি লালামাওমা, শিল্টন ডি সিলভা (রানা ঘরামি), রেইনার ফার্নান্দেজ, দীপেন্দু দুয়ারি (সৌরভ দাশ) শেখ ফৈয়জ, নরহরি শ্রেষ্ঠা (নিখিল কদম), দিপান্দা ডিকা।