মোহনবাগানের ক্রোমা-কামো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অনুশীলনের শেষ পর্বে গোলকিপার ও উইঙ্গারদের নিয়ে সেট পিস অনুশীলন করাচ্ছিলেন মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী।
কল্যাণী স্টেডিয়ামের অন্য প্রান্তে তখন ডিফেন্ডাররা পালা করে গোলে শট নিচ্ছেন। গ্লাভস ছাড়াই যা খালি হাতে রুখতে গোলে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সবুজ-মেরুন শিবিরের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার কিংগসলে। যা দেখতে পেয়ে মাঠ কাঁপিয়ে চিৎকার কামোর। ‘‘তোর গোলকিপিং বন্ধ কর।’’
ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় কামোকে জিজ্ঞাসা করা হল তখন কিংগসলে-কে ডাকলেন কেন? মোহনবাগানের চুয়াল্লিশ নম্বর বলে দেন, ‘‘চোট পেলে কী হবে! তাই ডেকে নিলাম। সোমবার ডিকাকে আটকাতে হবে তো!’’
মহমেডানের বিরুদ্ধে মিনি ডার্বিতে তা হলে কি কোনও এক দিপান্দা ডিকা সবুজ-মেরুনের আতঙ্ক? বোতল থেকে কামোর মাথায় জল ঢালতে ঢালতে এ বার হো হো করে হেসে ওঠেন মোহনবাগানের পাঁচ নম্বর আনসুমানা ক্রোমা। কলকাতা লিগে এখনও পর্যন্ত ছ’গোল করা ডিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘‘পাঁচটা গোল করেছি। মহমেডানের বিরুদ্ধে গোল করে ওদের ডিকাকে ছুঁয়ে ফেলবো। আর জিতবোও। লিগটা এ বার আমাদের।’’
যাঁকে নিয়ে মোহনবাগানের একই সঙ্গে এত প্রস্তুতি এবং হুঙ্কার, সেই দিপান্দা ডিকা বক্সের সামনে থেকে নেওয়া সোয়ার্ভিং ফ্রি-কিকে বলে বলে গোল করে যাচ্ছেন এই কলকাতা লিগে। সেই ডিকাকে কড়া নজরে রাখতে তৈরি মোহনবাগান রক্ষণের বিশ্বস্ত প্রহরী কিংশুক দেবনাথ। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বড় ম্যাচ খেলতে নামছেন মহমেডানের বিরুদ্ধে। ডিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তিনি বললেন, ‘‘আমরা তৈরি আছি। ওদের ডিকা থাকলে আমাদেরও তো ক্রোমা-কামো আছে। তা ছাড়া এই ম্যাচে কিংগসলে চলে আসায় রক্ষণ আরও পোক্ত থাকবে। ওরা ফাঁকা জায়গা পাবে না।’’
বড় ম্যাচের আগে বিপক্ষের দশ নম্বর-কে নিয়ে মোহনবাগান ফুটবলারদের এই মন্তব্য শুনলে কে বলবে, অক্টোবরের প্রথম দিন থেকেই মোহনবাগান ফুটবলার হয়ে যাবেন ডিকা। আর এ কথা শুনেই হাঁ হাঁ করে ওঠেন মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। প্রথমে বলেন, ‘‘কী বলতে চাইছেন?’’ তার পর একটু থেমে বলেন, ‘‘ওরা পেশাদার ফুটবলার। জানে, এই ম্যাচের সঙ্গে কেরিয়ারের গুরুত্ব। আর শুধু ডিকা কেন? মনবীর, জিতেন, ফৈয়াজ, দীপেন্দু-দের কথা বলুন। সঙ্গে আবার কালু ওগবা। তিন পয়েন্টের জন্য কঠিন লড়াই।’’
ছয় ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট ১৬। এক ম্যাচ কম খেলে মহমেডানের পয়েন্ট ১০। ছয় ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল। অর্থাৎ সোমবার কল্যাণীতে যে দল হারবে, তারাই ছিটকে যাবে লিগের লড়াই থেকে। যা মনে করিয়ে দিয়ে মোহনবাগান কোচ বলেন, ‘‘এটাই আমাদের সুবিধা। ওরাও জিততে চাইবে। ফলে বিপক্ষ আক্রমণে এলে ওদের রক্ষণে ফাঁকফোকড় তৈরি হবে। তার সুযোগ কী ভাবে নিতে হবে তা বলে দিয়েছি ছেলেদের।’’
শেষ তিন ম্যাচের দু’টো বড় ম্যাচ। তার উপর আগের ম্যাচে ড্র। সঙ্গে সাত বছর কলকাতা লিগের দেখা নেই গঙ্গাপারের তাঁবুতে। মহমেডান ম্যাচের আগে এই চাপ সামলাবেন কী ভাবে? মাঠ ছেড়ে হোটেলে ফেরার আগে কামো বলছেন, ‘‘এই চাপটাই তো প্রেরণা দিচ্ছে আমাদের ড্রেসিংরুমকে। মহমেডানকে হারালেই লিগ জয়ের বাড়তি জোশ পেয়ে যাব।’’
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ: মোহনবাগান বনাম মহমেডান (কল্যাণী, দুপুর ২.৪৫)।