মহড়া: অনুশীলনে মগ্ন কোলাদো। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া গম্ভীর মুখে চেয়ার ছেড়ে উঠতেই মিডিয়া রুমের দরজা খুলে ঢুকে পড়লেন কিবু ভিকুনা। স্বদেশীয় সতীর্থকে দেখে যেন স্বস্তি ফিরল লাল-হলুদ কোচের মুখে। নিয়ম মেনে হাত মেলানো পর্ব শেষ হতেই জোসেবা বেইতিয়াদের কোচের কানের কাছে মুখ এনে, পিঠে হাত রেখে এমনভাবে মিনিট তিনেক কথা বললেন তিনি, যা দেখে ভিক্টোরিয়া চত্বর বা কোনও পার্কে দেখা দৃশ্যের কথা মনে
হতেই পারে।
বাঙালির দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার চিরকালীন ম্যাচ আজ, রবিবার। হোক না, আই লিগের এ বারের প্রথম ডার্বি। চ্যাম্পিয়নশিপে ফয়সালাও হবে না। হোক না দু’দলে হাতে গোনা দু’তিনজন বঙ্গ সন্তান খেলবেন। তাতে কি? পাড়ায় মোড়ে বা চায়ের দোকানে উত্তেজনার লাভাস্রোত বইছে। টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। কিবুর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্ল্যাস্টিকের চিংড়ি, আলেসান্দ্রোর জন্য কাডবোর্ডের ইলিশ-ও হাজির। এই ম্যাচের আগে একটা সময় পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অমল দত্ত, সুভাষ ভৌমিক বনাম সুব্রত ভট্টাচার্য একে অন্যের বিরুদ্ধে এমন শব্দ-বোমা ছুড়তেন, যা নিয়ে উত্তাপ বাড়ত ম্যাচের। ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান কোচ এক মঞ্চে বসে আছেন তা-ও ছিল বিরল ঘটনা। একে অন্যের তাঁবুতে আসার নিয়ম চালুর পরে ট্রেভর মগ্যান বা করিম বেঞ্চারিফারাও যেতেন তেতো মুখ নিয়ে।
কিন্তু তা বলে খেলার ছত্রিশ ঘণ্টা আগে ভরা সাংবাদিক সম্মেলনে দুই কোচের প্রেমির-প্রেমিকার মতো কথোপকথন! ভাবাই যায় না। আসলে দুই ক্লাবের পরিস্থিতি এবং পরিবেশ এখন এমন যে, দুই স্পেনীয় কোচই এই ধুন্ধুমার ম্যাচের আগে প্রচণ্ড চাপে। ‘বুকে বারুদ’ নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে মগজাস্ত্র প্রয়োগের আগে যে, দু’জনের চেয়ারের নীচেও যে
রয়েছে ‘বারুদ’।
আপনার ক্লাবের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ইস্টবেঙ্গলের দল বেছেছেন আপনি? হারের দায়ও আপনার? যা শুনে আলেসান্দ্রোর মুখটা আরও লাল হয়। কর্তারা হইহই করে ওঠেন, এসব প্রশ্ন এখানে কেন? বন্ধ হয়ে যায় সাংবাদিক সম্মেলন। আলেসান্দ্রো কোনও বিতর্কে না জড়িয়ে বলে দেন, ‘‘১৫ দিন আগে আমরা লিগ শীর্ষে ছিলাম। প্রায় এক বছর আই লিগের কোনও ম্যাচ হারিনি। পরপর দুটো ম্যাচ হারা দুর্ঘটনা। কাল তিন পয়েন্ট পেলে অনেক কিছু বদলে যাবে।’’
মহারণের খুঁটিনাটি
• আই লিগের শেষ পাঁচ সাক্ষাতে মোহনবাগানের জয় তিন, ইস্টবেঙ্গলের দুই
• এখনও পর্যন্ত আই লিগে দু’প্রধানের ৪৪ বার দেখা হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের জয় ১৭, মোহনবাগানের ১৪। ড্র ১৩
• আই লিগ ডার্বিতে দ্রুততম গোল দিপান্ডা ডিকার, ৫৫ সেকেন্ডে (২১ জানুয়ারি, ২০১৮)
• আই লিগ ডার্বিতে একমাত্র হ্যাটট্রিক মোহনবাগানের চিডি এডের। করেছিলেন চার গোল (২৫ অক্টোবর, ২০০৯)
• একমাত্র বাঙালি ফুটবলার হিসেবে দীপেন্দু বিশ্বাস আই লিগ ডার্বিতে দুই প্রধানের জার্সিতেই গোল করেছেন
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
কিবু ভিকুনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এটিকে মোহনবাগান গাঁটছড়া বাঁধার পরে আপনার ভবিষ্যৎ কী? সুভদ্র কিবু যেন তৈরিই ছিলেন। ‘‘ডার্বি খেলতে নামছি। ওই ম্যাচ জিতলে তিন পয়েন্ট পাব। মনে রাখতে হবে আমরা একটা শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছি। তাই ডার্বি ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না,’’ বলে থামেন পালতোলা নৌকার সওয়ারিদের শীর্ষে তোলার কারিগর। দুই কোচের কথা শুনলেই বোঝা যায় নিজেদের ক্লাবের মতোই তাঁরাও রবিবাসরীয় গোধুলিতে সরু সুতোর উপর দিয়ে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দু’জনেই অত্যন্ত সতর্কভাবে পেরোতে চাইছেন নব্বই মিনিটের পথ।
কেমন প্রস্তুত হলেন ওঁরা?
খাইমে সান্টোস কোলাদোদের অনুশীলনে রক্ষণাত্মক মনোভাবের প্রতিফলন। অন্য দিকে ফ্রান গঞ্জালেসদের বিকেলে প্রস্তুত করলেন কিবু আক্রমণাত্মক ভাবনা নিয়ে। সেটাই স্বাভাবিক। লিগ টেবলে দেখা যাচ্ছে, গোল দেওয়া এবং খাওয়ায় মোহনবাগান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ভাল জায়গায়।
বঙ্গ ডার্বির জয়-পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করছে এ বার স্পেনীয় ফুটবলারদের সাফল্যের উপরে। মাঠে দশ বিদেশির মধ্যে সাত জন স্পেনের। মোহনবাগান অনুশীলনে দেখা গেল, ফ্রান গঞ্জালেস এবং বেইতিয়ার উপর অনেক বাড়তি দায়িত্ব দিচ্ছেন কিবু। সেট পিসে বেইতিয়া আর প্রতিপক্ষের গোল মুখে হেড করার জন্য ম্যাচের সব চেয়ে বেশি উচ্চতার ফুটবলার ড্যানিয়েল সাইরাসের সঙ্গে যাচ্ছেন গঞ্জালেস। লাল-হলুদের লালরিনডিকা রালতের ভয়ঙ্কর সেট পিসের কথা ভেবে রক্ষণও সংগঠন করতে দেখা গেল কোচকে।
কলকাতা ডার্বি ড্র হয়েছিল। এ বার কী হবে? কে ফেভারিট? দুই কোচই পনেরো মিনিটের ব্যবধানে বললেন, ‘‘ফিফটি-ফিফটি। ডার্বির ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।’’
আজ আই লিগে: মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল (যুবভারতী, বিকেল ৫.০০, ডি স্পোর্টস চ্যানেলে)।