যখন খেলতেন বা সাম্প্রতিক অবসর জীবন, ব্যক্তিগত পরিসর সব সময় আড়ালেই রাখতে ভালবাসেন মহম্মদ কইফ। ফলে প্রাক্তন ক্রিকেটারের প্রেমপর্বও রয়ে গিয়েছে সাধারণের অগোচরে। প্রায় দেড় দশক আগে যে প্রেমের সূচনা হয়েছিল একটি পার্টিতে।
কইফের স্ত্রী পূজা যাদব সে সময় চাকরি করতেন একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায়। আলাপ থেকে বন্ধুত্ব এবং বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সূচনা হতে বেশি সময় লাগেনি। ৪ বছরের প্রেমপর্বের পরে বিয়ে করেন দু’জনে। ২০১১ সালের ২৬ মার্চ।
পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তানের। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পূজা। ৫ বছর পরে কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। কইফের মতো তাঁর স্ত্রীও প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করেন না।
বিয়ের পরেও নিজের কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন পূজা। জানিয়েছেন, সংসার এবং চাকরির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে তাঁকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছেন তাঁর স্বামী। অন্য দিকে কইফও জানিয়েছেন, পূজার চাকরি করা নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই।
প্রথম সন্তানের জন্মের পরে ২ বছর কেরিয়ারে ব্রেক নিয়েছিলেন পূজা। এ ছাড়া তাঁর কর্মজীবন নিরবচ্ছিন্ন। পূজা জানিয়েছেন তাঁদের ছেলে কবীরও খেলাধূলা পছন্দ করে। নিয়মিত অনুশীলন করে বাবার সঙ্গে।
কইফ পরিবারে ত্রিকেট খেলার ধারা প্রচলিত আরও আগে থেকে। মহম্মদ কইফের বাবা মহম্মদ তারিফ আনসারি এবং দাদা মহম্মদ সইফ ঘরোয়া স্তরে ক্রিকেট খেলতেন।
জাতীয় দলে কইফের অভিষেক হয় ২০০০ সালে। সে বছর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলেন তিনি। ওয়ান ডে ম্যাচে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২ বছর। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড।
বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঝলসে উঠলেও ভাল ফর্ম বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মাত্র ৬ বছর।
কইফের শেষ টেস্ট ছিল ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সে বছরই শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেছিলেন নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।
কেরিয়ারের ১৩ টেস্টে কইফের মোট রান ৬২৪। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৪৮। পাশাপাশি, ১২৫ ওয়ান ডে-তে তাঁর মোট সংগ্রহ ২,৭৫৩। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১১।
মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত কইফের ব্যাটে বেশি রান এসেছিল ৩ নম্বর পজিশনে। তবে গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে ৩ নম্বর পজিশনে নিয়মিত হয়ে গিয়েছিলেন ইরফান পঠান অথবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কইফের দুরন্ত ফিল্ডিং ছিল দলের অন্যতম সম্পদ। পয়েন্ট বা কভার কইফ থাকলে বিপক্ষের ব্যাটসম্যান ভয় পেতেন খুচরো রানের জন্য দৌড়তে।
তবে কইফের ত্রিকেট জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে ন্যাটওয়েস্ট ফাইনাল। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই পাল্টে গিয়েছিল তাঁর জীবন। সেই ম্যাচে ৩২৫ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় মুঠোবন্দি করার পথে অন্যতম হাতিয়ার ছিল কইফের অপরাজিত ৮৭।
আইপিএল-এ তিনি খেলেছেন রাজস্থান রয়্যালস, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। প্রশিক্ষক ছিলেন গুজরাত লায়ন্স এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় মহম্মদ কইফ। সেখানে সূর্যপ্রণাম এবং বড়দিন পালনে ছবি দিয়ে যথেষ্ট ট্রোলড হয়েছেন তিনি। কিন্তু ধর্মান্ধদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজের অবস্থানে অবিচল ছিলেন কইফ। এ রকম ভাবেই তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন সব বাধা পেরিয়ে ভিন ধর্মের প্রেমিকাকে বিয়ে করার সময়েও।