‘খেল মহাকুম্ভ’-র উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
খেলোয়াড়দের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আগে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না দেশে। বিভিন্ন খেলার নানা প্রতিযোগিতাতেই এই অস্বচ্ছতা ছিল। কেন্দ্রে তাঁদের সরকার আসার পর সেই অস্বচ্ছতা এখন অতীত। ‘খেল মহাকুম্ভ’-র উদ্বোধনে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
দেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল নিয়ে নানা কথা শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে। দলীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানে প্রায়শই মোদী বলেন, তাঁর সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ভাবে স্বচ্ছতা, সংস্কার নিয়ে এসেছে। পূর্বতন সরকার এবং বিরোধীদের বিঁধতে মোদীর অন্যতম হাতিয়ার দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা। এবার দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রেও সংস্কারের কথা বললেন তিনি।
দেশে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে আসার মতোই ক্রীড়া ক্ষেত্রেও সংস্কার নিয়ে এসেছে তাঁর সরকার। গুজরাতে ‘খেল মহাকুম্ভ’-র উদ্বোধনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে বিভিন্ন খেলাতেই খেলোয়াড়দের নির্বাচন ঘিরে ছিল অস্বচ্ছতা। তাঁর সরকার পরিবর্তন নিয়ে আসায় এখন তরুণ প্রজন্মের অনেকেই কোচিং-সহ খেলাধুলা সংক্রান্ত নানা পেশা বেছে নিচ্ছে।
গুজরাত সরকারের এই অনুষ্ঠানে ক্রীড়া ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন রাজনীতিকেও। মোদী বলেছেন, ‘‘রাজনীতির ভাই-ভাইপো (স্বজনপোষন) সংস্কৃতির মতোই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়েও ছিল অস্বচ্ছতা। বহু খেলোয়াড়ের প্রতিভা নষ্ট হওয়ার জন্য এগুলোর বিরাট ভূমিকা ছিল। সারা জীবন তাদের এই সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।’’ সর্দার পটেল
স্টেডিয়ামে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলেছে এবং খেলোয়াড়রা আকাশ ছুঁতে পারছে। সোনা বা রুপোর পদকের উজ্জ্বলতা তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।’’
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সাতটি পদক এবং প্যারালিম্পিক্সের ১৯টি পদককেও নিজের সরকারের সাফল্যের সঙ্গে জুড়তে চেয়েছেন। নীরজ চোপড়া, পিভি সিন্ধুদের সাফল্যকে কেন্দ্রের নীতি পরিবর্তনের সুফল বলেই মনে করেন তিনি। মোদী বলেছেন, ‘‘এটা সবে শুরু। ভারত কখনও ক্লান্ত হবে না। এখানে থামবেও না।’’ তাঁর আশা, এমন দিন আর দূরে নয়, যখন অলিম্পিক্সে ভারত একাধিক সোনার পদক জিতবে।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ‘খেল মহাকুম্ভ’ শুরু করেন মোদী। নিজের শুরু করা এই প্রকল্পের সাফল্যকেও তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘গুজরাতের তরুণরা এখন অলিম্পিক্স এবং বিশ্ব পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদক জিতছে। আমি নিশ্চিত খেল মহাকুম্ভ থেকে আগামী দিনে আরও অনেক প্রতিভা উঠে আসবে।’’ প্রতিভাবান ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলায় আরও উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবকদের প্রতি। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘খেলাধুলোয় কেরিয়ার তৈরির অর্থ শুধু কোনও খেলায় এক নম্বর হওয়া নয়। কেউ প্রশিক্ষক হতে পারে, কেই ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, আবার কেউ খেলাধুলো নিয়ে লেখালিখিও করতে পারে। পেশা হিসেবে ফিজিওথেরাপিস্ট বা ট্রেনারও হওয়া যায়।’’
খেলাধুলো এবং ক্রীড়াবিদদের উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা পদক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছেন মোদী। মণিপুর এবং উত্তরপ্রদেশে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা বলেছেন এ প্রসঙ্গেই। তিনি বলেছেন, ‘‘খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্পে আমরা বহু তরুণ প্রতিভাকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাজেটে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। খেলোয়াড়দের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার মূল্যও প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।’’ গুজরাত সরকারকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, রাজ্যের দীর্ঘ সৈকতকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জল এবং সৈকত ক্রীড়ার উন্নয়নে নজর দেওয়া হোক এবার।