মিলখা সিংহের সঙ্গে মনোরঞ্জন মনোরঞ্জন পোড়েলের সংগ্রহ থেকে
১৯৬৪-র টোকিয়ো অলিম্পিক্সের পরেই কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবরে সার্ভিসেসের হয়ে জাতীয় গেমসে খেলতে এসেছিলেন মিলখা সিংহ। তার আগে ১৯৫৪-র এশিয়ান গেমসে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটারে সোনা জেতার পাশাপাশি ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসেও ২০০ মিটারে সোনা জিতে গোটা দেশের কাছে তারকা হয়ে গিয়েছেন মিলখা সিংহ। তাই তাঁর দৌড় দেখতে প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন। সেই ভিড়ের মধ্যে ছিলেন মনোরঞ্জন পোড়েল। সেদিন সোনা পাওয়া হয়নি মিলখা সিংহের। হারতে হয় তাঁর সতীর্থ মাখন সিংহের কাছে। তবে মনোরঞ্জনের মনে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন মিলখা। সেদিনের পর থেকে নিজেকে অ্যাথলিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জেদ চেপে গিয়েছিল তাঁর মনে।
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে মনোরঞ্জন আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি তখন অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। স্থানীয় স্তর থেকে জাতীয় স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি। সেই সময় কাছ থেকে ওঁর দৌড় দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। শুধু আমি না, ওঁকে দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। তবে মিলখার দৌড় দেখে আমি ঠিক করি আমাকেও অ্যাথলেটিক্সে নাম করতে হবে। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।’’
এরপর মিলখাকে আদৰ্শ করেই নিজের লড়াই শুরু করেন বাংলার মনোরঞ্জন। মিলখার প্রয়াণের খবর পাওয়ার পর থেকেই তাই মন ভাল নেই তাঁর। কিংবদন্তির সঙ্গে তাঁর ছবিগুলো বারবার দেখছেন। ৭০-এর দশকের বাংলার অন্যতম সেরা অ্যাথলেটিক্স বললেন, ‘‘আমি নিজেকে অ্যাথলিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর বহুবার তাঁর কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছি। কলকাতায় উনি বেশ কয়েক বার এসেছেন। প্রত্যেক বার আমার দায়িত্ব ছিল ওঁর দেখভাল করার। বাঙালি হওয়ায় আমায় প্রথমদিকে ‘মছলি খাব’ বলে মজা করে ডাকতেন। পরের দিকে অবশ্য পোড়েল বলে ডাকতে শুরু করেন। ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে কলকাতায় একবার ‘রান ফর পিস’ অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের প্রধান অতিথি হিসেবে এসে অনেককে দৌড়তে দেখে পার্ক স্ট্রিটের কাছাকাছি জায়গা থেকে নিজেই দৌড় শুরু করে দেন। শেষ করেন নেতাজি ইন্ডোরে। এরকমই মানুষ ছিলেন তিনি।’’
খানিকটা থেমে আবার বলতে শুরু করেন মনোরঞ্জন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন ভারতীয় দলের কোচ, তখন পাতিয়ালায় মাঝে মধ্যেই আসতেন তিনি। এসে দলের সকলকে নিজের জীবনের গল্প বলে উজ্জীবিত করতেন। পরে তাঁকে নিয়ে হওয়া ছবিতেও আমি সেই সব ঘটনা দেখেছি। ওঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আমার দারুণ লাগত। এত অন্যরকম মানুষ ছিলেন উনি। দেশে বিদেশে বিভিন্ন সময়ে আমরা একসঙ্গে গিয়েছি। বিদেশে আমায় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন বিভিন্ন পার্টিতে। দেখেছি বিদেশের মানুষরাও কী ভাবে ওঁকে সম্মান করতেন।’’