মতানৈক্য: টস নিয়ে দুই মেরুতে হোল্ডিং, হরভজন। ফাইল চিত্র
লর্ডসে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলের ব্যাটিং বিপর্যয় দেখে এক দিকে রাহুল, বিজয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে, ফিরে এসেছে সেই তর্ক— টেস্ট ক্রিকেট থেকে কি টস তুলে দেওয়া উচিত?
লর্ডসে প্রথম দিনের খেলা বাতিল হয়ে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিনে নির্ধারিত সময়েই ম্যাচ শুরু হয় এবং টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। প্রশ্ন উঠেছে এখানেই যে, নিজেদের দেশে অনায্য সুবিধে পাচ্ছে কি না কোনও দল? ক্রিকেটে নতুন গজিয়ে ওঠা এই বিতর্ককে এ দিন উস্কে দিলেন মাইকেল হোল্ডিং। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারের প্রশ্ন, ‘‘নিজেদের দেশে সব কিছুই তো সেই দলটার পক্ষে। নিজের ইচ্ছা মতো পিচ বানাচ্ছি। এখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতিতে খেলে বড় হয়েছি। এই দু’টো ব্যাপারই তো বড় অ্যাডভ্যান্টেজ। আবার টসের সুবিধেও পাবে কেন?’’
টেস্ট ক্রিকেটে ঘরে-বাইরের তফাত মেটানোর কথা উঠতে শুরু করেছে কারণ দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ দলই নিজেদের দেশে জিতছে, বিদেশে গিয়ে পারছে না। এর একটা কারণ যদি গুণগত মানের অধঃপতন হয়, তা হলে আর একটা কারণ দলগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে ‘হোম অ্যা়ডভ্যান্টেজ’ নিতে চাওয়া। ভারতে বিদেশি দল খেলতে এলে যেমন ঘূর্ণিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে পুরো ঘাসের পিচে ফেলা হচ্ছে কোহালিদের। কখনওসখনও এই পিচগুলো ক্রিকেট খেলারই যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। আইসিসি নিয়মে খারাপ পিচের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। ক্রিকেট কেন্দ্র নির্বাসিতও হতে পারে। তাতেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।
লর্ডসে খারাপ পিচ হয়েছে, বলা যাবে না। কিন্তু হোল্ডিং মনে করছেন, হোম টিমকে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সুবিধে দেওয়াটাও ঠিক হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেদের মাঠে, নিজেদের পরিবেশে তো খেলতেই পারছ। তা হলে প্রথমে ব্যাটিং করবে না ফিল্ডিং, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অতিথি দেশকে দেওয়া হোক। না হলে লড়াইটা একটু অসম হয়ে যাচ্ছে।’’
আইসিসি-র মধ্যেও টস তুলে দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ডে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় পরীক্ষামূলক ভাবে টস তুলে দেওয়ার আইন প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। আইসিসি টেকনিক্যাল কমিটি জানিয়েছে, তারা আরও সময় নিতে চায় এ ব্যাপারে। হোল্ডিংয়ের সঙ্গে অবশ্য একমত হতে পারছেন না হরভজন সিংহ। ভারতীয় অফস্পিনার চান, টস থাকুক। ‘‘টেস্ট ক্রিকেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব টস। এর সঙ্গে ঐতিহ্য তো জড়িতই, ক্রিকেটীয় বুদ্ধি-বিবেচনার ওস্তাদিও তো থাকে। টসে জিতে কোন দল কী সিদ্ধান্ত নিল, সেটা ঠিক হল কি না, তা নিয়ে সবাই আলোচনা করে,’’ বললেন এই সিরিজে ধারাভাষ্য দিতে আসা হরভজন। তাঁর পরামর্শ, নিরপেক্ষ পিচ প্রস্তুতকারক নিয়ে এসো। ‘‘আইসিসি-র উচিত নিজেদের কিউরেটর নিয়োগ করা। টেস্ট শুরুর দশ দিন আগে থেকে নিরপেক্ষ কিউরেটররা সেই কেন্দ্রে গিয়ে পিচের দায়িত্ব নিয়ে নেবে,’’ বলে হরভজন ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘ধরুন, মোহালিতে টেস্ট ম্যাচ। আইসিসি কিউরেটর গিয়ে দেখলেন, পিচ আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড করে ঘূর্ণি বানানো হচ্ছে। তিনি নির্দেশ দেবেন, এটা ঠিক করো। না হলে টেস্ট সরিয়ে নেওয়া হবে অন্য কেন্দ্রে। তা হলেই সবাই সিধে হয়ে যাবে।’’
ভারতের মাটিতেও খেলার অযোগ্য ঘূর্ণি পিচ বানানোর বিরোধী হরভজন। বলছেন, ‘‘স্টিভ ওয়ের টিমকে আমরা ইডেনে হারিয়েছিলাম। যেটাকে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ বলা হয়। সেখানে একেবারে শেষ দিনের শেষ পর্বে গিয়ে পিচ ভাঙতে শুরু করেছিল।’’ যোগ করছেন, ‘‘এখন তো দেখি উপমহাদেশে খেলা হলে স্পিনার নতুন বলে বোলিং শুরু করছে!’’
ক্রিকেটের প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে, ব্যাট-বলের ভারসাম্য মাথায় রেখে পিচ তৈরি করা উচিত। তবেই ভাল খেলা দেখতে পাবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। হরভজন অবশ্য চান যে-দেশের যে-রকম বিশেষত্ব, সেটাকে যেন মেরে না ফেলা হয়। বলছেন, ‘‘প্রত্যেক দেশের কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ-পরিস্থিতি আছে। এই বৈচিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে খেলতেই এক জন ক্রিকেটার মহাতারকা হয়। কিংবদন্তিতে পরিণত হয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ভারতের পিচে স্পিনাররা সুবিধে পায়। সেখানে স্পিন খেলাই ব্যাটসম্যানদের কাছে চ্যালেঞ্জ। আবার ইংল্যান্ডে সিম বোলারদের অ্যাডভ্যান্টেজ। ব্যাটসম্যানের জন্য এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অফস্টাম্পের বাইরে আউটসুইংয়ে খোঁচা দেব না। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে নষ্ট করা উচিত নয়। নিরপেক্ষ কিউরেটর এলে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’’
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অবশ্য একটা ব্যাপারে দ্বিমত নেই। বিজয়, রাহুলরা এ রকম ব্যাটিং করলে টস তুলে দিয়েও লাভ হবে না। নিরপেক্ষ কিউরেটর এসেও তাঁদের কিছু করতে পারবেন না।