কোপায় মেসির সেই অনবদ্য নাটমেগ। ছবি টুইটার
বুধবার সকালে শতবর্ষের কোপায় আর্জেন্তিনা বনাম বলিভিয়া ম্যাচটা ছিল নিয়মরক্ষার। প্রথম দুটো ম্যাচে জিতে কোয়ার্টারে উঠেই গিয়েছিল আর্জেন্তিনা। তাতেও যখন দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন আর্জেন্তিনার দশ নম্বর, তখন তো কোনও নিয়মরক্ষার ম্যাচ নিয়েও সারা বিশ্বের আগ্রহ থাকে তুঙ্গে।
শনিবার সকালের শিকাগো দেখেছিল মেসির গোল বন্যা। দেখেছিল ২৫ গজের ফ্রি-কিক থেকে উনিশ মিনিটে হ্যাটট্রিক। বুধবার সকালের সিয়াটেল দেখল মেসির শিল্প। ম্যাচের শেষলগ্নে এসে গোলকিপারকে ‘নাটমেগ’ করে দিয়ে বিশ্বফুটবলকে ফের মন্ত্রমুগ্ধ করলেন রাজপুত্র।
ম্যাচটা তো শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই। ৩-০ এগিয়ে থেকে আর্জেন্তিনা তিন পয়েন্ট পকেটে পুরে নেয়। তাতেও তো থামল না মেসি-ম্যাজিক। বিরতির পর নেমেই যিনি প্রমাণ করলেন মেসি মানে তো শুধু গোল নয়। মেসি মানে এমন সব মুভ যা নিয়ে ফুটবলবিশ্বে চর্চা চলব। দ্বিতীয়ার্ধে তখন বলিভিয়া গোলকিপার কার্লোস লাম্পে এগিয়ে এসেছেন মেসিকে শট নেওয়া থেকে আটকাতে। কিন্তু অভাবনীয় ভাবে লাম্পের দুটো পায়ের মাঝখান দিয়ে বলটা গলিয়ে দিলেন এলএম টেন। যে স্কিলকে এখন সবাই ‘নাটমেগ’ বল জানে। মুভটার মাধুর্য্যই অবশ্য নষ্ট করে দেয় লাইন্সম্যানের অফসাইড ফ্ল্যাগ। কিন্তু মেসির নাটমেগ নিয়ে হইচই পড়ে যায় ফুটবলবিশ্বে। টুইটার থেকে ফেসবুক, প্রতিটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মেসির ‘নাটমেগের’ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্তিনা রেকর্ড দশ গোল দিয়ে যে কোপার কোয়ার্টারে উঠেছে সেটাই যেন মাথায় ছিল না।
পানামার বিরুদ্ধে উনিশ মিনিটের হ্যাটট্রিক হোক বা বলিভিয়ার বিরুদ্ধে নাটমেগ, গ্রুপ পর্বে নিজের দুই ‘ক্যামিও’ পারফরম্যান্সে সবাইকে সম্মোহিত করেছেন মেসি। কিন্তু নিজে ভাল ফর্মে থাকলেও মেসি জানিয়ে দিলেন, তাঁর জন্য আসল কোপা এখন থেকে শুরু। ‘‘গ্রুপে আমরা এক নম্বরে থেকে শেষ করেছি। তিনটে ম্যাচই দারুণ জিতেছি। কিন্তু এ বার অন্য এক কোপা শুরু হল। প্রতিটা কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য,’’ বলছেন এলএম টেন।
মেসির মার্কার আবার ছিল তাঁর ফ্যান ক্লাবের সদস্য। বলিভিয়ার দিয়েগো বেহারানোর উপর দায়িত্ব পড়েছিল মেসিকে শান্ত রাখার। যাতে পানামার মতো অবস্থা না হয় বলিভিয়ার। কিন্তু ম্যাচ শেষে মেসির মার্কার চেয়ে বসলেন মহাতারকার জার্সি। বেহারানোকে হতাশ না করে সঙ্গে সঙ্গেই মেসি তাঁর সঙ্গে জার্সিও অদলবদল করলেন। মেসি বলছেন, ‘‘খুব অবাক লাগছিল আমরা ৩-০ এগিয়ে আছি। তাও ম্যান মার্ক করা হয়। তাতে আমার অসুবিধা নেই। ওকে যা বলা হয়েছে, সেটাই করেছে।’’
কোপায় অপরাজিত থেকেই শেষ আটে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে খেলবে আর্জেন্তিনা। খাতায়কলমে ম্যাচটা সোজা হলেও মেসির আগেভাগেই সতর্ক করছেন দলকে। ‘‘ভেনেজুয়েলাকে দেখে মনে হচ্ছে সহজ দল। আসলে সেটা কিন্তু একদমই উল্টো।’’
ক্লাবের হয়ে ৩০০-র উপর গোল করলেও দেশকে এখনও কোনও বড় ট্রফি দিতে পারেননি এলএম টেন। বিশ্বকাপের ফাইনাল হোক বা কোপার, বরাবর তীরে এসে তরি ডুবেছে আর্জেন্তিনার। এ বার শতবর্ষের কোপাকে পাখির চোখ করেছেন মেসি। ১৯৯৩-র পরে দেশকে ফের কোনও বড় ট্রফি দিতে মরিয়া জেরার্দো মার্টিনোর দল। তাই তো মেসি বলছেন, ‘‘আমরা সবাই তৈরি কোপা জিততে। আমাদের দলটা ভাল অবস্থায় আছে।’’