অতিথি: কলকাতায় প্রাক্তন রিয়াল তারকা ম্যাকম্যানামান। নিজস্ব চিত্র
ক্লাব ফুটবলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন লিভারপুলের হয়ে খেলে। ১৯৯৯ সালে সই করেন রিয়াল মাদ্রিদে। যেখানে স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে দু’টো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকটি এল ক্লাসিকোয়। ক্যাম্প ন্যু-তে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে রবিবার মধ্য কলকাতার এক হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন মিডফিল্ডার স্টিভ ম্যাকম্যানামান। যেখানে তুলে ধরলেন ক্লাসিকো খেলার ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো লা লিগায় আর নেই। লিয়োনেল মেসি চোট পেয়েছেন। এল ক্লাসিকোর জনপ্রিয়তা তো এ বার কমতে থাকবে।
স্টিভ ম্যাকম্যানামান: তা সত্ত্বেও এল ক্লাসিকো নিয়ে উন্মাদনা কমবে না। কেন জানেন? এটা শুধু ফুটবল ম্যাচ নয়। এর সঙ্গে একটা দেশের ইতিহাস, একটা দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি সব কিছু জড়িয়ে আছে।
প্র: আপনি তো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অনেক বড় বড় ম্যাচে খেলেছেন। বিশ্ব ফুটবলের নিরিখে এল ক্লাসিকোর জায়গা কোথায়?
ম্যাকম্যানামান: আমার কাছে একেবারে এক নম্বরে থাকবে। অন্যান্য ম্যাচে ফুটবলই গুরুত্ব পায়। যেমন ধরুন লিভারপুল-ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু ক্লাসিকোর ইতিহাসটাই আলাদা। স্পেন বনাম ক্যাটালোনিয়ার যে তীব্র দ্বন্দ্ব, সেটা ফুটে ওঠে এই ম্যাচে। দু’দলের ফুটবল ম্যাচ দর্শকদের কাছে যেন স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়ে ওঠে।
প্র: ফুটবলারদের ওপরও কি এর প্রভাব পড়ে?
ম্যাকমানামান: খেলা শুরু হলে হয়তো পড়ে না। কিন্তু ম্যাচের শেষে ছাপটা থেকে যায়। বার্সেলোনাকে হারাতে পারলে মাদ্রিদের ফুটবলাররা আলাদা তৃপ্তি পায়। আবার উল্টোটাও সত্যি। মাদ্রিদ বা বার্সেলোনায় যারা জন্মেছে, তারা এটা বুঝতে পারবে।
আরও পড়ুন: সুয়ারেসের দুরন্ত হ্যাটট্রিকে উৎসব ইস্টবেঙ্গল মাঠেও
প্র: বার্সেলোনায় গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন?
ম্যাকম্যানামান: অনেকটা যুদ্ধ করতে যাওয়ার মতো। এখন ভাবলে অবাক হতে হয়, কী পরিস্থিতির মধ্যে খেলে এসেছি। টিম বাসে করে মাঠে যাচ্ছি, বাইরে থেকে বাসের জানালার কাচের ওপর দমাদম এসে পড়ছে বোতল, পাথর। নিরাপত্তারক্ষী থেকেও কোনও লাভ নেই। আমি বাসের মেঝেতে মধ্যে মাথা নিচু করে বসে আছি। পাশে জিনেদিন জিদান, রাউল, ফিগোরা। অবস্থাটা ভাবুন।
আরও পড়ুন: এল ক্লাসিকো থেকে দূরে রোনাল্ডোর জোড়া গোল
প্র: এর বাইরে আর কী হত?
ম্যাকম্যানামান: বার্সেলোনার সমর্থকেরা রাতে হোটেলের বাইরে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে আমাদের বিরক্ত করত। মাঝরাতে হোটেলের ঘরে ফোন করে ঘুম ভাঙাত। মানে যত রকম ভাবে সম্ভব জ্বালাতন করত। পাশাপাশি মাঠে যখন নামতাম, তখন দেখতাম এক লাখ দর্শকের ক্যাম্প ন্যু-তে কয়েক হাজার রিয়াল সমর্থক একেবারে টঙে বসে আছে। সেখান থেকে না আপনি তাদের দেখতে পাবেন, না আওয়াজ শুনতে পাবেন।
প্র: এল ক্লাসিকো নিয়ে আপনার সব চেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কী?
ম্যাকম্যানামান: ২০০২ সালের নভেম্বর মাসের ক্লাসিকো কোনও দিন ভুলতে পারব না। লুইস ফিগো তখন বার্সেলোনা থেকে রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে এসেছে। আমরা ক্যাম্প ন্যু-তে গিয়েছি বছরের শেষ ক্লাসিকোটা খেলতে। ফিগো কর্নার নিতে গিয়েছে। ওই সময় হঠাৎ একটা কাটা শুয়োরের মাথা মাঠে এসে পড়ে। এর সঙ্গে বোতল পড়া তো আছেই। আমরা সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ফিগো ক্লাব ছাড়ায় সমর্থকেরা গালাগালি করছিল ঠিকই, কিন্তু এ রকম হবে ভাবতে পারিনি। খেলা কিছুটা সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে অবশ্য ম্যাচটা শুরু হয়। সত্যি কথা বলতে কী, আমি এখনও ভাবি, ওই ঘটনার পরে ম্যাচ কী করে শুরু হল। ইংল্যান্ডে হলে খেলাই বাতিল হয়ে যেত। কিন্তু স্পেনে ও রকমই হত।
প্র: আর ক্লাসিকোয় আপনার সব চেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত?
ম্যাকম্যানামান: চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে গোল করেছিলাম। লা লিগা একটা দেশের লিগ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যাপারটাই আলাদা। নক-আউট ম্যাচ। ওই জয়ের স্মৃতি ভুলব না।
প্র: আপনি অনেক মহাতারকার সঙ্গে খেলেছেন, অনেককে দেখেছেন। আপনার মতে সেরা ফুটবলার কে?
ম্যাকমানামান: হ্যাঁ, অনেক ব্যালন ডি’ওর জয়ী ফুটবলারের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। ফিগো, রোনাল্ডো, রবের্তো কার্লোস, রাউল। কিন্তু সবার আগে রাখব জ়িনেদিন জ়িদানকে। ওর প্রতিভা, ওর ক্লাস বাকিদের চেয়ে আলাদা।
প্র: মেসি না রোনাল্ডো? আপনার পছন্দের দলে কাকে রাখবেন?
ম্যাকম্যানামান: রোনাল্ডো। (একটু হেসে) হয়তো আমি রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার ছিলাম বলেই।