আগ্রাসী: অভিষেকেই সার্ভিসে ঝড় তুললেন বেরেত্তিনি। নিজস্ব চিত্র
ছ’ফুট পাঁচ ইঞ্চির দীর্ঘ শরীর থেকে সার্ভগুলো গোলার মতো ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসছিল। যার কোনওটারই গতি ঘণ্টায় ২০০ কিমির কম নয়। স্পিডোমিটারে সর্বোচ্চ গতি উঠল ২২২। সঙ্গে সে রকমই প্রচণ্ড গতির ডাউন দ্য লাইন ফোরহ্যান্ড। দেখে কে বলবে তাঁর শুক্রবারই অভিষেক হল ডেভিস কাপে! তিনি— মাতেও বেরেত্তিনি।
ইটালির ২২ বছর বয়সি খেলোয়াড় দেশের জার্সিতে প্রথম ম্যাচেই মাতিয়ে দিলেন সাউথ ক্লাবে। তাঁর দাপটে ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড় প্রজ্ঞেশ গুণেশ্বরকেও অসহায় লাগছিল একটা সময়। কী ভাবে বেরেত্তিনি আগ্রাসী টেনিসের মোকাবিলা করবেন সেটাই যেন বোধগম্য হচ্ছিল না প্রজ্ঞেশের। ইতালির স্ট্র্যাটেজিও ঠিক সেটাই ছিল।
‘‘প্রথম ম্যাচে সেপ্পি জেতার পরে দ্বিতীয় সিঙ্গলসে আমার উপর চাপটা অনেক কমে যায়। ম্যাচের আগেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম আগ্রাসী টেনিস খেলব। সার্ভিসের পুরো ফায়দা তুলব। আমাদের পরিকল্পনা সফল,’’ ম্যাচের পরে বলেন বেরেত্তিনি। শুধু সিঙ্গলসই নয়, তিনি ডাবলসেও খেলতে পছন্দ করেন। গত বছর সেন্ট পিটার্সবার্গ ওপেনে বেরেত্তিনি এবং ফাবিও ফগনিনির জুটি লিয়েন্ডার পেজ-মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল রিয়াসের জুটিকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে দিয়েছিল। তার আগে জুলাইয়ে সুইস ওপেনে সিঙ্গলস এবং ডাবলস জোড়া খেতাবও জেতেন। সেটাই এটিপি ওয়ার্ল্ড টুরে তাঁর প্রথম বড়সড় সাফল্য।
একটাই লক্ষ্য বাকি ছিল তাঁর। সেটাও পূরণ হল শুক্রবার। ‘‘ছোটবেলাই থেকেই স্বপ্ন দেখে এসেছি ডেভিস কাপে খেলার। আমার পুরো ফোকাসটাই ছিল তাই এই ম্যাচটার উপর। বিশ্বাস ছিল ঘাসের কোর্টে আমি ভাল খেলতে পারব। তাই দারুণ লাগছে এ ভাবে জিততে পেরে। মুহূর্তটা উপভোগ করছি,’’ বলছিলেন বেরেত্তিনি। কিন্তু প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে নামার চাপও তো কম নয়। সেটা সামলালেন কী করে? ‘‘আমার সঙ্গে গোটা দল রয়েছে। তাই চাপ অনুভব করিনি। উপভোগ করছি এই অভিজ্ঞতাটা,’’ জবাব তাঁর।
বেরেত্তিনির টেনিসে হাতেখড়ি চার বছর বয়সে। সাঁতার, ফুটবল জুডোও খেলেছেন ছোটবেলায়। ছোট ভাই জাকোপোর উৎসাহে ঠিক করেন টেনিসেই কেরিয়ার গড়বেন। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিঙ্গলসের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও দ্রুত উন্নতি করছেন। বছর দু’য়েক আগেও ছিলেন ৪৩৫ নম্বরে। সেখান থেকে উঠে এসেছেন ৫৩-তে। গত বছর উইম্বলডনের দ্বিতীয় রাউন্ডেও উঠেছিলেন তখনকার বিশ্বের আঠারো নম্বর জ্যাক সককে হারিয়ে। তখন থেকেই রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদালের ভক্ত বেরেত্তিনিকে ভবিষ্যতের তারকা বলা শুরু। যা আবারও প্রমাণ করলেন ‘ম্যাট’।
মনে করা হয়েছিল, ডেভিস কাপে অভিষেক ম্যাচে হয়তো চাপে থাকবেন বেরেত্তিনি। সুবিধে হবে প্রজ্ঞেশের। কে জানত তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াবেন ইটালির তুরুপের তাস!