দুরন্ত ইয়র্কারে বোল্ড কুসল পেরেরা। উচ্ছ্বসিত নবদীপ সাইনি। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
সিরিজে সমতা ফেরাতে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ২০২ রান। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের দাপটে ১৫.৫ ওভারে ১২৩ রানেই দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। লড়তেই পারল না লাসিথ মালিঙ্গার দল। ৭৮ রানে জিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-০ দখল করল বিরাট কোহালির দল।
রান তাড়ার শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খেয়েছিল সফরকারী দল। দুই ওপেনার ফিরে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় ওভারের মধ্যেই। জশপ্রীত বুমরা নিয়েছিলেন দানুষ্কা গুণতিলকেকে। আর শার্দুল ঠাকুর নিয়েছিলেন আভিষ্কা ফার্নান্দোকে। এর পরই রান আউট হয়েছিলেন ওশাদা ফার্নান্দো। ৫.১ ওভারে ২৬ রানে পড়েছিল চতুর্থ উইকেট। নবদীপ সাইনির দুরন্ত ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছিলেন কুসল পেরেরা।
চার উইকেট পড়ার পর জুটি বেঁধেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও ধনঞ্জয় ডি সিলভা। দু’জনে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছিলেন ৬৮ রান। যখন মনে হচ্ছিল অ্যাঞ্জেলো-ধনঞ্জয় লড়াইয়ে ফিরিয়ে এনেছেন শ্রীলঙ্কাকে, তখনই ফের আঘাত হেনেছিল ভারত। অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন অ্যাঞ্জেলো। দুর্দান্ত ভাবে যা তালুবন্দি করেছিলেন মণীশ পাণ্ডে। ১১.২ ওভারে ৯৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
এর পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। পরের ২৪ রানের মধ্যে ফেরেন আরও তিন জন। ১১৮ রানে আট উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে শ্রীলঙ্কা। দাসুন শানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, লক্ষ্মণ সানদাকান ফেরেন পর পর। লড়ছিলেন একমাত্র ধনঞ্জয় ডি সিলভা। ৩১ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অন্যপ্রান্তে পর পর উইকেট পড়তে থাকায় মারতে গিয়ে নবদীপ সাইনিকে উইকেট দিলেন তিনি। ধনঞ্জয়ের ৩৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ছিল আটটি চার ও একটি ছয়। তিনি ফেরার দু’বল পড়েই শেষ হয় শ্রীলঙ্কার ইনিংস। আউট হন লাসিথ মালিঙ্গা। ভারতের সফলতম বোলার নবদীপ সাইনি। ২৮ রানে তিন উইকেট নিলেন তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুর নিলেন দুটো করে উইকেট। ভারতের ফিল্ডিংও দারুণ হল। একথ্রোয়ে উইকেট ভেঙে দিলেন যুজভেন্দ্র চহাল, রান আউট করলেন হাসারাঙ্গাকে।
শুক্রবার পুণেয় সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ছয় উইকেটে ২০১ তুলেছিল ভারত। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বড় রানের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও শিখর ধওয়ন। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে দু’জনে যোগ করেছিলেন ৬৩ রান। ভারতের পঞ্চাশ এসেছিল ৩০ বলে। ১০০ এসেছিল ৬৬ বলে। তবে ঠিক তার আগেই পড়েছিল প্রথম উইকেট। কিন্তু বিধ্বংসী লক্ষ্মণ সানদাকানের তিন উইকেটের দাপটে মাঝপথে খেই হারিয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার।
৩৬ বলে ৫২ করে আউট হয়েছিলেন শিখর ধওয়ন। অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। এই ইনিংস নিশ্চয়ই ‘গব্বর’কে স্বস্তি দেবে। তাঁর পঞ্চাশ এল ৩৪ বলে। বাঁ-হাতি ওপেনারের ইনিংসে ছিল সাতটি চার ও একটি ছয়। মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন তিনি। রাহুলের পঞ্চাশও এল ৩৪ বলে। আর তার পরই ফিরলেন তিনি। ৩৬ বলে ৫৪ করে লক্ষ্মণ সানদাকানের বলে স্টাম্পড হলেন তিনি। শিখরকেও ফিরিয়েছিলেন সানদাকান। রাহুল মেরেছিলেন পাঁচটি চার ও একটি ছয়। এর মাঝখানে সঞ্জু স্যামসন তিন নম্বরে নেমে ব্যর্থ হলেন। ছয় মেরে শুরু করে ধনঞ্জয় ডি সিলভার বলে ওই ৬ রানেই এলবিডব্লিউ হন তিনি।
ভারতের প্রথম উইকেট পড়েছিল ১০.৫ ওভারে। আর চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ১২.৫ ওভারে। দুই ওভারের মধ্যে হঠাৎই চাপে কেঁপে গিয়েছিল ভারতের মিডল অর্ডার। চায়নাম্যান সানদাকানের শেষ শিকার শ্রেয়াস আইয়ার (৪)। বোলারকেই ফিরতি ক্যাচ দিলেন শ্রেয়াস। ওই ওভারেই রাহুলকেও নিয়েছিলেন সানদাকান (৩-৩৫)। ১২২ রানে পড়েছিল ভারতের চতুর্থ উইকেট। সেই পরিস্থিতি থেকে চার নম্বরে নামা মণীশ পাণ্ডে ও ছয় নম্বরে নামা বিরাট কোহালি পঞ্চম উইকেটে ৪২ রান যোগ করেন। যখন মনে হয়েছিল ইনিংস মেরামতির কাজ শেষ, এ বার দুশোর ওপারে যাওয়ার জন্য হাত খুলবেন দু’জনে, তখনই রান আউট হলেন কোহালি (১৭ বলে ২৬)। যা তাঁর ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রমী। লাহিরু কুমারার পরের বলেই ফিরলেন ওয়াশিংটন সুন্দর (০)। কোহালি-সুন্দর ফিরলেন পর পর দুই বলে।
কোহালি যখন ফিরেছিলেন, তখন ১৭.৩ ওভারে ভারতের রান ছিল ১৬৪। সেখান থেকে ভারত থামল ২০১ রানে। মণীশ পাণ্ডে (১৮ বলে অপরাজিত ৩১) ও শার্দুল ঠাকুর (৮ বলে ২২) ঝড় তুললেন স্লগে। শেষ ১৪ বলে উঠল ৩৭ রান। একটি চার ও দুটো ছয় মারলেন শার্দুল। আর মণীশের ইনিংসে ছিল চারটি চার। শেষ ওভারে উঠল ১৯ রান। তরুণদের দেখে নেওয়ার জন্য তিন, চার, পাঁচে যথাক্রমে স্যামসন, মণীশ ও শ্রেয়াসকে নামিয়েছিলেন কোহালি। নিজে নেমেছিলেন ছয়ে। একমাত্র মণীশই সেই সুযোগ কাজে লাগালেন।
গুয়াহাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি ভেস্তে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ইনদওরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দাপটে জিতেছিল ভারত। একই সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ এগিয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। শুক্রবার পুণেয় তাই সিরিজে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। টস জিতে লাসিথ মালিঙ্গা শুরুটা ভাল করেছিলেন। এই সিরিজে আগের দুই ম্যাচে টস জিতেছিলেন বিরাট কোহালি। রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দু’বারই। রান তাড়াই ভারতের শক্তি। কিন্তু মালিঙ্গা টস জেতায় প্রথমে ব্যাট করতে হল টিম ইন্ডিয়াকে। যা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ভারতকে। বিরাট কোহালি অবশ্য বললেন, টস জিতলে তিনি ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিতেন। আর দুশোর উপরে রান তুলে ভারত বোঝাল, প্রথমে ব্যাট করে বড় রান তোলার ক্ষমতা দলের রয়েছে।
ভারতীয় দলে এদিন তিনটি পরিবর্তন হয়েছিল। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকে। সুযোগ পেয়েছিলেন লেগস্পিনার যুজভেন্দ্র চহাল। অনেকদিন বেঞ্চে বসে থাকার পর দলে এসেছিলেন মিডল অর্ডার ব্য়াটসম্যান মণীশ পাণ্ডে। তিনি এদিনের ইনিংসে নিজের দাবি জোরাল করে তুললেনও। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল অলরাউন্ডার শিবম দুবেকে। আর ঋষভ পন্থের জায়গায় দলে এসেছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সঞ্জু স্যামসন। শ্রীলঙ্কা দলে ঘটেছিল দুটো পরিবর্তন। দলে ফিরেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ।