র্যাপিড আর ব্লিৎজ, দু’ধরনের দাবাতেই কার্লসেনের বিশ্ব র্যাঙ্কিং এক নম্বর। ছবি: এএফপি।
বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখলাম ‘আর্মাগেডন’ শব্দটা নিয়ে দাবা দুনিয়ায় হইচই হচ্ছে। বেশ কৌতুহল হল বলেই শব্দটার মানে দেখলাম, ‘অন্তিম যুদ্ধ’। যার পরিণতিতে নাকি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে! বা মানব জাতিই থাকবে না।
কিন্তু দাবায় এমন কী হতে যাচ্ছে যে তাকে ‘আর্মাগেডন’ বলতে হবে? আসলে লন্ডনে ম্যাগনাস কার্লসেন বনাম ফাবিয়ানো কারুয়েনার খেতাবি লড়াই টাইব্রেকারে যেতেই ওখানকার পণ্ডিতেরা এই শব্দটাই দেখলাম বেছে নিয়েছেন। খেলা টাইব্রেকেও র্যাপিডে মীমাংসা না হলে, হবে ব্লিৎজ। কিন্তু তার পরেও মীমাংসা না হলেই হবে এক গেমের লড়াই! যা ওদের কথায় ‘আর্মাগেডন’। অবশ্য এমন নয় যে ‘আর্মাগেডন’ দাবায় অপ্রচলিত শব্দ। তার আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে টাইব্রেকে র্যাপিড আর ব্লিৎজ-এর নিয়মটা একটু পরিষ্কার করা দরকার। র্যাপিডে হয় চারটি খেলা। প্রত্যেকেই পায় ২৫ মিনিট করে। আর ব্লিৎজে সবচেয়ে বেশি ১০ গেম খেলা হতে পারে। প্রত্যেকের সময় মাত্র ৫ মিনিট করে। আর এখানেও ফল ড্র হলে হয় সেই ‘আর্মাগেডন’!
যা আসলে এক গেমের লড়াই। টস হয়। যে সাদা পায় তাকে ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। আর কালোকে ৪ মিনিট। এই ম্যাচ ড্র হলে কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় যে কালো নিয়ে খেলছে সে-ই। কারণ তাকে এক মিনিট কম সময় দেওয়া হয়েছিল। তাই সাদাকে প্রথম থেকেই জয়ের জন্য খেলতে হয়। না হলে তার সামনে অন্য কোনও রাস্তা খোলা থাকে না। ঠিক যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সুপার ওভারের মতো ব্যাপার। যেখানে ম্যাচ টাই হলে দু’দল এক ওভার করে ব্যাট করার সুযোগ পাবে।
যদিও আজ পর্যন্ত বিশ্ব দাবার খেতাবি লড়াই কখনও ‘আর্মাগেডন’ পর্যায়ে যায়নি। এমন নয় যে বিশ্ব দাবার ধ্রুপদী চ্যাম্পিয়ন এর আগে কখনও টাইব্রেকে ঠিক হয়নি। আমাদের বিশ্বনাথন আনন্দই তো ২০১২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বরিস গেলফান্ডকে টাইব্রেকে হারিয়ে। আর ম্যাগনাস কার্লসেনই দু’বছর আগে বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় পড়েছিল সের্গেই কারজাকিনের বিরুদ্ধে সেই টাইব্রেকারেই জিতে।
আমি ভেবেছিলাম আগেই কার্লসেন কিন্তু কারুয়েনার বিরুদ্ধে জিতে বিশ্ব খেতাব ধরে রাখবে। ৬-৬ ফলটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিতই। বিশেষ করে যে ম্যাচের পরে খেলা টাইব্রেকে গেল, তাতে কার্লসেনের পরিষ্কার জয় দেখছিলাম। দেখলাম গ্যারি কাসপারভের মতো দাবাড়ু টুইট করেছেন, বারো নম্বর ম্যাচটা ড্র হবে তিনি ভাবতেই পারেননি। তিনিও মনে করেন, ম্যাচে দারুণ ভাল জায়গায় ছিল কার্লসেন। অবশ্য ও খুব দ্রুত নিখুঁত এবং অসাধারণ সব চাল দিতে পারে। তাই অতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ড্রয়ের প্রস্তাব মেনে নিল। সাংবাদিকদের বলেও দিল যে, টাইব্রেককে নিয়ে আদৌ ওর উদ্বেগ নেই। এবং নিজেকে ফেভারিট বলার আগে এক মিনিটও ভাবল না। ২০১৬ সালে কারজাকিনের বিরুদ্ধেও কিন্তু ভাল জায়গায় থেকে জয় বের করতে না পেরে ও টাইব্রেককেই বেছে নিয়েছিল। মনে রাখতে হবে র্যাপিড আর ব্লিৎজ— দু’ধরনের দাবাতেই কার্লসেনের বিশ্ব র্যাঙ্কিং এক নম্বর। যে কারণে ওর সঙ্গে ‘সুপার কম্পিউটারের’ তুলনা করা হয়। সেখানে র্যাপিড বা ব্লিৎজের র্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছনে কারুয়েনা। তাই রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছি, তিন সপ্তাহ ধরে ৫০ ঘণ্টা লড়াইয়ের পরেও ম্যাচের ফল সমান-সমান দেখে। যার পরিণতি এই ‘আর্মাগেডন’-এর সম্ভাবনা নিয়ে এত হইচই।