ভবিষ্যদ্বাণী: জার্মানিকে শেষ চারে দেখছেন না লুইস। ফাইল চিত্র।
আর পাঁচ দিন বাদে, ১১ জুন থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে কোভিড অতিমারির মধ্যে সব চেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা— ইউরো কাপ। ইউরোপ সেরার এই লড়াইয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখছেন জ়িনেদিন জ়িদানের এক সময়কার সতীর্থ লুইস সাহা।
২৪ দলের ইউরোয় সব চেয়ে কঠিন গ্রুপে (এফ গ্রুপ) পড়েছে ফ্রান্স। প্রতিপক্ষ জার্মানি, পর্তুগাল এবং হাঙ্গেরি। যাকে বলা হচ্ছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’। কিন্তু এই গ্রুপ থেকেও অগ্রসর হতে সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন ফ্রান্সের প্রাক্তন বিশ্বকাপার। সাহার মতে, ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখছে মিডফিল্ডার এনগোলো কঁতের উপস্থিতি। যাঁর সম্পর্কে সাহা বলছেন, ‘‘একাই যে কোনও ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।’’
কেন কঁতে আসন্ন ইউরো কাপে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন? বাছাই করা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শনিবার এক ভিডিয়ো কলে প্রশ্নের জবাবে সাহা বলেন, ‘‘কঁতে হল মেশিনের মতো। ও জানে কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। গত তিন বছরে ও দারুণ উন্নতি করেছে।’’ এ বারের ইউরো দেখা যাবে সোনি সিক্স বাংলাতেও। ধারাভাষ্যকারদের তালিকায় থাকা সাহা আরও বলছিলেন, ‘‘এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কঁতে দেখিয়ে দিয়েছে ও কী করতে পারে। দুটো সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ম্যাচের সেরা ফুটবলার হওয়া কম কথা নয়।’’
বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার এখন চেলসির কঁতে। কখনও কখনও তিনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকাতেও খেলেন। বিশেষ কী কী গুণ দেখেছেন ৩০ বছরের ফরাসি তারকার মধ্যে? সাহার বিশ্লেষণ, ‘‘কঁতে খুব বুদ্ধিমান ফুটবলার। ও বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ঠিক জায়গায় পাসটা বাড়াতে পারে। কঁতের সঙ্গে পল পোগবা, আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের মতো ফুটবলার থাকবে। তাই ও আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এই ইউরোয় একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে ওর।’’
ফ্রান্স দলে আরও রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপের মতো তারকা। যাঁর সম্পর্কে সাহার মত, ‘‘এই গ্রহের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার। যে প্রত্যেক দিন উন্নতি করছে।’’ প্রায় ছ’বছর বাদে জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন করিম বেঞ্জেমা। যাঁকে নিয়ে সাহার মন্তব্য, ‘‘এত দিন বাদে ফিরে এসে ও হয়তো নিজেকে প্রমাণ করতে চাইবে। তা ছাড়া বেঞ্জেমার মতো ফুটবলার বড় ম্যাচের চাপ সামলাতে জানে। যেটা ফ্রান্সের কাজে লাগবে।’’
‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে ফ্রান্সের পরের পর্বে ওঠা নিয়ে কোনও সংশয় নেই সাহার। তা সত্ত্বেও দিদিয়ে দেশঁ-এর দলকে সতর্ক করে বলছেন, ‘‘গ্রুপে গত বারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালও কিন্তু আছে। আর আছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ও একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। দু’একটা অঘটন পর্তুগাল ঘটাতেও পারে।’’ তবে সেমিফাইনালের চার সম্ভাব্য দলের তালিকায় রোনাল্ডোদের রাখছেন না জ়িদানদের সঙ্গে ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলা সাহা। তাঁর বাছা চার দল হল: ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পোলান্ড এবং বেলজিয়াম। জার্মানিকে না রেখে পোলান্ডকে কেন? সাহার ব্যাখ্যা, ‘‘পোলান্ডের অনেক তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। ওরা অনেককেই চমকে দেবে।’’
৬০ বছরের ইতিহাসে এ বারই প্রথম একটা দেশে না হয়ে ইউরো কাপ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ১১টি শহরে। লন্ডন, সেন্ট পিটার্সবার্গ, বাকু, মিউনিখ, রোম, আমস্টারডাম, বুখারেস্ট, বুদাপেস্ট, কোপেনহেগেন, গ্লাসগো এবং সেভিয়া। যা নিয়ে সাহা বলছেন, ‘‘যে দেশের লোকেদের পক্ষে অন্য দেশে গিয়ে খেলা দেখা সম্ভব নয়, তারাও নিজেদের শহরে এখন মহাতারকাদের দেখতে পাবে।’’
কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যে কতটা কঠিন এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা? সাহার কথায়, ‘‘কঠিন তো বটেই। কিন্তু ঠিকমতো করতে পারলে সারা বিশ্বের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’’ একই সঙ্গে খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন করে দিচ্ছেন সাহা। বলেছেন, ‘‘এখন গণমাধ্যমে লাগামছাড়া বিদ্বেষের মুখে পড়তে হয় খেলোয়াড়দের। যা সামলানো সত্যিই কঠিন কাজ।’’