আত্মজীবনীতে থাকছে মাঠে ও মাঠের বাইরের অনেক গল্প, বললেন ঘাউড়ি। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
লকডাউনে ঘরবন্দি গোটা দেশ। গৃহবন্দি খেলার জগতও। কাটছে না সময়। নেই জিম, নেই ট্রেনিং, নেই এতকালের চেনা রুটিন।
হাতে অখণ্ড অবসর। আর সেই সুযোগে আত্মজীবনী লেখা শুরু করলেন কারসন ঘাউড়ি। সদ্য রঞ্জিজয়ী সৌরাষ্ট্রের কোচ এখন আরব সাগরের পারে বসে কালির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন তঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প।
কম্পিউটারে নয়, জানালেন আপাতত কাগজেই লিখছেন ছোটবেলার কাহিনি। ক্রমশ স্পর্শ করবেন ক্রিকেটজীবনের নানা ঘটনা। পাণ্ডুলিপি শেষ হতে হতে বছর গড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে তাঁর। তার পর তা যাবে প্রেসে, কম্পোজের জন্য।
মুম্বই থেকে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে ঘাউড়ি জানালেন, “মুম্বইতেই রয়েছি। বাড়িতেই থাকছি। বাইরে বের হওয়ার প্রশ্ন নেই। করোনা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে প্রত্যেককে। আশা করছি, এই কঠিন সময় দ্রুত কেটে যাবে, আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আমি এই সময়ে হাত দিয়েছি আত্মজীবনী লেখায়। এটা শেষ করতে এই বছর কেটে যাবে।”
আরও পড়ুন: নেতা সৌরভ, নেই লক্ষ্মণ, সেরা ভারতীয় দল বেছে নিলেন শেন ওয়ার্ন
১৯৫১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাতের রাজকোটে জন্ম ঘাউড়ির। আর সেই রাজকোটেই কয়েক সপ্তাহ আগে কোচ হিসেবে আরও এক বার রঞ্জি ট্রফি জিতলেন তিনি। সৌরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে ফাইনালে হারালেন বাংলাকে। বললেন, “আরও এক বার রঞ্জি জিততে পেরে দারুণ লেগেছে। সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটাররা পুরো মরসুম জুড়েই চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেছে। আর ব্যক্তিগত ভাবে এটা আমার চতুর্থ রঞ্জি ট্রফি জয়। ১৯৭৫-’৭৬ মরসুমে কোটলায় দিল্লিকে হারিয়ে প্রথম বার জিতেছিলাম। তখন খেলেছিলাম বম্বে (এখনকার মুম্বই)-এর হয়ে। দ্বিতীয় বার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ফাইনালে বাংলাকে হারিয়েছিলাম। সেটা ১৯৯৪ সাল। আমি তখন বম্বের কোচ। ২০০১-০২ মরসুমে আবার বম্বের নির্বাচক হিসেবে রঞ্জি জেতার স্বাদ পেয়েছিলাম। আর এ বার জিতলাম সৌরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে। দারুণ লেগেছে।”
এখনও নাম না ঠিক হওয়া আত্মজীবনীর শেষ অংশে থাকছে এটাই— সৌরাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জি জয়। সত্তর ছুঁই ছুঁই ঘাউড়ি ঠিক করেই নিয়েছেন যে আর কোচিং নয়। বড্ড ধকল পড়ে যাচ্ছে। ফলে, লেখার কাজে মন দিতে চাইছেন পুরোপুরি।
১৯৭৪ সালে কলকাতায় টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কারসনের। খেলেছেন ৩৯ টেস্ট। বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার নিয়েছেন ১০৯ উইকেট। চার বার ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে ভারতের জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। সেই টেস্টে দুই ইনিংসেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলকে। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ফিরতি ক্যাচ, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন বোল্ড। ব্যাটের হাত খুব খারাপ ছিল না। টেস্টে দুটো হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। পাশাপাশি, ১৯ ওয়ানডে ম্যাচেও অংশ নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে দাঁড়ি পড়েছিল ১৯৮১ সালে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন ১৯৮৪-’৮৫ মরসুম পর্যন্ত। এর পরে শুরু করেন কোচিং। আর তাতেও কম সাফল্য নেই। আত্মজীবনী তাই দুটো ভাগে ভাঙছেন ঘাউড়ি। একটা অংশে ক্রিকেটজীবন। পরেরটায় কোচিং-জীবন।
আরও পড়ুন: বেলুড় মঠে গিয়ে দুঃস্থদের জন্য ২০ কুইন্টাল চাল দিলেন সৌরভ
এই লম্বা ক্রিকেটজীবনে অনেক ঘটনা, অনেক মুহূর্ত, অনেক গল্পের সাক্ষী তিনি। যা থাকবে আত্মজীবনীতে, দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। বললেন, “অনেক ভাল, মন্দ ও কুৎসিত ঘটনা থাকবে বইয়ে। অপেক্ষা করুন। মাঠে ও মাঠের বাইরে কম অভিজ্ঞতা তো নেই। সেগুলোই উঠে আসবে বইয়ে। পুরো ক্রিকেটজীবনের কথাই তাকবে এতে।” বোঝাই যাচ্ছে, বিতর্কিত নানা বিষয় থাকছেই বইয়ে। যা আগামী দিনে সরগরম করে তুলতে পারে ক্রিকেটমহলকে।
এই বই আবার ঝড় তুলবে না তো পাঠকমহলে? রহস্যের হাসি ঘাউড়ির মুখে, “একটু অপেক্ষা করুন। বই বেরোতে দিন। অনেক ইন্টারেস্টিং স্টোরি থাকবে, এটুকুই শুধু বলছি এখন।”
জানা গেল, আত্মজীবনীর জন্য বেশ ‘ক্যাচি’ নাম ভেবে রেখেছেন তিনি। আর বোঝা গেল, শুধু নামই নয়, ভিতরেও মুচমুচে মেনু থাকছে ক্রিকেট রসিকদের জন্য!