ফরাসি ওপেনে নিকোলাস অ্যালম্যাগ্রোর সঙ্গে রাফায়েল নাদালের লড়াই সচরাচর টুর্নামেন্টের ‘বিজনেস এন্ডে’ই হয়েটয়ে থাকে! ২০০৮ থেকে ২০১২-র মধ্যে তিন-তিন বার দু’জনের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল হয়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবারই দু’জনের দেখা হয়ে গেল দ্বিতীয় রাউন্ডেই। গ্র্যান্ড স্ল্যাম পণ্ডিতদের মতে যেটা ক্লে কোর্ট সম্রাটের লাল সুড়কির সারফেসে দাপট কমার মরসুমে রোঁলা গারোয় গোড়ার দিকেই প্রথম সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ।
এবং সেই চ্যালেঞ্জ গত দশ বছরে ন’বারের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েও এ বারের ষষ্ঠ বাছাই নাদাল হেলায় ৬-৪, ৬-৩, ৬-১ টপকালেও ম্যাচোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে হঠাৎ-ই স্প্যানিশ কিংবদন্তিকে দার্শনিক ভঙ্গিতে আবিষ্কার করল বিশ্ব টেনিস মিডিয়া। ২৯ বছরের অ্যালম্যাগ্রোর এই মুহূর্তের ১৫৪ নম্বর বিশ্ব র্যাঙ্কিং মোটেই তাঁর আসল টেনিস-দক্ষতার পরিচয় নয়। চোট আর অস্ত্রোপচারের কারণে গত বারো মাসে আজকেরটা তাঁর মাত্র দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ ছিল। তা সত্ত্বেও গোটা ম্যাচটা নাদাল ‘ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক’-এর মতো একপেশে করে তুলেছিলেন তাঁর চিরপরিচিত ক্লে কোর্ট স্পেশ্যাল টেনিসে।
তার পরেও সাংবাদিকদের সামনে নাদালের অবাক করা মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে ফোরহ্যান্ড প্র্যাক্টিস বেশি করছি। আগের মতো ফোরহ্যান্ডে নিঁখুত আর ধারাবাহিক নেই আমি। অবশ্যই এখনও ফোরহ্যান্ডে কিছু ছাপ রাখতে পারি। কিন্তু আগের সেই সাবলীলতাটা নেই। তা সত্ত্বেও এখনও আমি এক জন সলিড প্লেয়ার। আবার একই সঙ্গে মনে করি, এ বার প্রত্যেকটা রাউন্ডে আমার অনেক উন্নতির দরকার আছে। এটাই টেনিস। নিজের সবচেয়ে সুবিধের জায়গাতেও আপনাকে অনেক সময় অনেক অসুবিধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। চেষ্টা করছি রোলাঁ গারোয় এ বারও দারুণ ভাল কিছু করার। যেটা আমি গত বছর পর্যন্ত করে এসেছি। তবে যদি এ বার ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হতে না পারি তা হলেও আমার টেনিসজীবন এগিয়ে চলবে। এ বার না জিতলে জীবন থেমে থাকবে না।’’
বিতর্কের নামও এ দিন নাদাল! এ বার ফরাসি ওপেনে তাঁর কোনও ম্যাচে যেন ব্রাজিলীয় চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস বার্নারডেস-কে রাখা না হয়, তার জন্য এটিপি ট্যুরের কাছে চিঠির প্রতিলিপি-সহ রোঁলা গারো কর্তৃপক্ষর কাছে অনুরোধ করেন নাদাল। গত ফেব্রুয়ারিতে রিও ওপেনে যে ম্যাচে মাথা গরম করে ফাবিও ফগনিনির কাছে হেরেছিলেন নাদাল, সেই ম্যাচের চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস দু’-দু’বার নিয়ম লঙ্ঘনের অপরাধে পয়েন্ট কেড়ে নিয়েছিলেন স্প্যানিশ মহাতারকার। নাদাল সেই কথা ভোলেননি। কিন্তু ফেডেরার এর বিরুদ্ধে সরব। নাদালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আজ বলেছেন, ‘‘স্পেশ্যাল প্লেয়ারদের স্পেশ্যাল খাতির আমার কোনও দিনই পছন্দ নয়। নিজে কখনও নিইনি, অন্যরা নিক সেটাও চাই না। আর সেটা যারা দেয় তারা সেটা যারা চায় তাদের সমানই দোষী।’’
‘দার্শনিক’ তথা ‘বিতর্কিত’ নাদালের রোলাঁ গারো শাসনের দিনেই পুরুষ-মহিলা দুই বিভাগের দুই শীর্ষ বাছাই দুই ভঙ্গিতে তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছলেন। নোভাক জকোভিচ দ্বিতীয় সেটে কোর্টে আছাড় খেয়ে অনেকক্ষণ শুশ্রূষা নিয়েও সহজেই ৬-১, ৬-৪, ৬-৪ গিলেস মুলারকে হারান। সেরেনা উইলিয়ামসকে জার্মানির আনা লেনার কাছে প্রথম সেট খুইয়ে জিততে হল। ৫-৭, ৬-৩, ৬-৩।
আর জন ম্যাকেনরোর সমালোচিত চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে দীর্ঘতম (১৩ দিনের উইম্বলডন, ১৪ দিনের অস্ট্রেলীয় আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের পাশে রোলাঁ গারোর মেজরের মেয়াদ ১৫ দিন) ফরাসি ওপেনের চতুর্থ দিনের বড় অঘটন মেয়েদের পঞ্চম বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচেই বিদায়। বিশ্বের সেই প্রাক্তন এক নম্বর ওজনিয়াকিকে হারান ৭২ নম্বর জার্মান জুলিয়া গোয়েরজেস। তিন বছর আগে যিনি বিশ্বের ১২ নম্বর ছিলেন। সেই পুরনো ফর্ম দেখিয়ে জুলিয়া ৬-৪, ৭-৬ (৭-৪) ওজনিয়াকির ছুটি করে দিয়ে আগের দিন তৃতীয় বাছাই হালেপের হারের পর সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটান। মিক্সড ডাবলসে শীর্ষ বাছাই সানিয়া মির্জা-ব্রুনো সোয়ারেসের গোড়াতেই হারও অঘটন। হেরেছেন বোপান্না-শেদোভা জুটিও। তবে লিয়েন্ডার-হিঙ্গিস দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন।