চেনা মেজাজে: প্রাক্তন ফুটবলারদের প্রদর্শনী ম্যাচে চুনী গোস্বামী। ফাইল চিত্র
বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা তথা ভারতের কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ চুনী গোস্বামী। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ১৯৬২ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ফুটবলে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের এই অধিনায়ক। রাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। রয়েছেন তাঁর স্ত্রী বাসন্তী ও পুত্র সুদীপ্ত।
প্রয়াত ফুটবলারের পুত্র সুদীপ্ত গোস্বামী জানান, প্রতি মাসের শেষের দিকেই রুটিন মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হত প্রাক্তন এই ফুটবলারকে। সেই অনুযায়ী এ দিন বেলার দিকে যোধপুর পার্কের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল চুনীবাবুকে।
সুদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘প্রাতরাশের সময়েও গল্প করলেন বাবা। তার পরে আমার সঙ্গেই গাড়িতে নার্সিংহোমে আসেন। দুপুরে সেখানেই খাওয়াদাওয়া করে ঘুমোতে যান। বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার পরেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। ১৪ মিনিটের ব্যবধানে তিন বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তার পরেই সব শেষ।’’
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে মোহনবাগান ও ভারতের হয়ে ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অধিনায়কত্ব করেছেন চুনীবাবু। ১৯৬২-৭৩ সালের মধ্যে বাংলার হয়ে ৪৬টি ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। ১৯৭১-৭২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে খেলেছিল বাংলা। মোহনবাগানের হয়ে হকিও খেলেছেন এই প্রবাদপ্রতিম ক্রীড়াবিদ। তার পাশাপাশি তিনি সাউথ ক্লাবে টেনিসও খেলেছেন চুটিয়ে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রীড়াজগতের অলরাউন্ডারই বলা চলে তাঁকে।
আরও পড়ুন: ড্রিবলিংয়ে রাজা, ছিল টটেনহ্যাম থেকে ডাক
এ দিন চুনী-পুত্র সুদীপ্তকে ফোন করে সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে যান রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কিংবদন্তি এই ক্রীড়া-ব্যক্তিত্বকে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ও আইএফএ-র তরফে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।
চুনীবাবুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে ভারতীয় ক্রীড়াজগতে। বর্তমান ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ভারতীয় ক্রীড়াজগৎ এক কিংবদন্তিকে হারাল। ক্রিকেট ও ফুটবল— দুই খেলাতেই এ-রকম দুরন্ত পারফরম্যান্স! ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’’
আরও পড়ুন: চুনীর জন্যই খেলতে এসেছিলাম কলকাতায়
ভারতীয় ফুটবল দলের আর এক প্রাক্তন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়ার কথায়, ‘‘ক্রীড়াজগতের বড় ক্ষতি। বিশেষ করে ভারতীয় ফুটবলের। ভারতীয় ফুটবল মানেই চুনী গোস্বামী ও প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা আসবে। মাসখানেক আগেই প্রয়াত হয়েছেন প্রদীপদা। এ দিন চুনীদাও চলে গেলেন। ভারতীয় ফুটবলের প্রথম মহাতারকা তিনি। খেলোয়াড় জীবনে চুনীদার প্রচুর ভালবাসা, পরামর্শ পেয়েছি।’’ প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার আইএম বিজয়নের কথায়, ‘‘প্রকৃত অর্থেই একজন ‘জিনিয়াস’কে হারালাম আমরা। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম এক সেরা ব্যক্তিত্ব চলে গেলেন। মনটা ভাল নেই।’’
শোক প্রকাশ করা হয় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফেও। শোকজ্ঞাপন করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও। তাঁদের টুইট, ‘‘ভারতীয় খেলার জগতের প্রকৃত অলরাউন্ডার চুনী গোস্বামীর প্রয়াণে আমরা শোকাহত।’’ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সুনীল গাওস্করও শোক জানিয়ে বলেন, ‘‘দিনটাই হতাশাজনক। সকালে ঋষি কপূরের, পরে বিকেলে চুনীদার প্রয়াণ। দুই চ্যাম্পিয়ন ও কিংবদন্তিকে হারালাম আজ।’’
বাংলা ক্রিকেট দলে চুনীবাবুর অধিনায়কত্বে খেলেছেন দিলীপ দোশী। শোকবার্তায় তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘চুনীদার কাছে ফিটনেস বজায় রাখা ও লড়াই করার জন্য প্রচুর পরামর্শ পেয়েছি। ভারতীয় খেলার জগতের প্রকৃত অলরাউন্ডার। আমি ভাগ্যবান, বাংলা দলে খেলা শুরুর সময়ে চুনীদাকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলাম।’’ শোক জানিয়েছে সিএবি-ও। শুক্রবার প্রয়াতকে শ্রদ্ধা জানাতে পতাকা অর্ধনমিত রাখবে তারা।