অন্ধ্র উপকূলে ঝড় আছড়ে পড়ার আগেই দেশের ক্রিকেট রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটল এক নতুন ঘূর্ণিঝড়ের। যার উত্পত্তিস্থল জয়পুর।
রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থায় ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং’ ডেকে ক্রিকেট রাজনীতির রিং থেকে রীতিমতো নক আউট করে দেওয়া হল আইপিএলের জনক ললিত মোদীকে। শনিবার তাঁকে আরসিএ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ফের বোর্ডের সুনজরে চলে এল রাজস্থান। পাঁচ মাস আগেই যাঁরা ভোট দিয়ে মোদীকে প্রেসিডেন্টের পদে এনেছিলেন, তাঁরাই ডিগবাজি খেয়ে চেয়ার থেকে টেনে নামিয়ে দিলেন তাঁকে। এই খবরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে স্বস্তির হাওয়া। নভেম্বরে বোর্ড নির্বাচনের আগে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সামনে থেকে এক বড় কাঁটা সরে গেল বলেই যে মনে হচ্ছে তাঁদের।
‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ জেনারেল মিটিং’-এ যে ভোটাভুটি নেওয়া হয় বলে দাবি করা হয়েছে, তাতে আরসিএ-র ৩৩টি অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে ২৩টির প্রতিনিধিই ললিত মোদীর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সন্ধ্যায় খবরটা শুনে ফিরোজ শাহ কোটলায় ম্যাচ দেখতে আসা এক বোর্ড কর্তার মন্তব্য, “নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রিকেটেও বোধহয় এ বার সাফাই অভিযান শুরু হল।”
মোদীর জায়গায় প্রেসিডেন্ট পদে এলেন কোটার বিজেপি বিধায়ক আমিন পাঠান। যিনি আবার সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টও। এবং শোনা যাচ্ছে নেপথ্যে থেকে তাঁকে নাকি বিদ্রোহের ইন্ধন জুগিয়েছেন অরুণ জেটলি। শনিবার জয়পুরে ফোন করে জানা গেল, মূলত তাঁর মাধ্যমেই মোদী-বিরোধি বিদ্রোহ শুরু হয়। এক সময় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও মোদীর সঙ্গে জেটলির সম্পর্ক এখন মোটেই ভাল যাচ্ছে না বলেই অপসারিত আইপিএল চেয়ারম্যানকে এই যুদ্ধে হারতে হল বলে রাজস্থান ক্রিকেটের অন্দরমহলের ধারণা।
পাশাপাশি তিন মোদী ঘনিষ্ঠ কর্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এঁরা হলেন ডেপুটি প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আবদি, সচিব সুমেন্দ্র তিওয়ারি ও কোষাধ্যক্ষ পবন গোয়েল। আবদি অবশ্য দাবি করছেন, যেহেতু প্রেসিডেন্ট বা সচিবের পক্ষ থেকে এমন কোনও সাধারণ সভা ডাকা হয়নি, তাই এই সভার কোনও বৈধতা নেই। ললিত মোদীও টুইট করে বলেছেন, তাঁর এই অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে রাজস্থানকে দেশের সব রকম ক্রিকেট থেকে নির্বাসন দিয়েছিল, তা সম্ভবত এ বার তুলে নেওয়া হবে। শনিবার এই নিয়ে বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল বলেন, “খবরটা আরসিএ থেকে এখনও বোর্ডকে জানানো হয়নি। যখন আসবে, তার পর থেকে নির্বাসন তুলে নেওয়া হবে।” মোদীেকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানো নিয়ে পটেল বলেন, “এটা তো হওয়ারই ছিল। এই নিয়ে আর কিছু বলব না।”
বোর্ডের চিরনির্বাসনে থাকা ললিত মোদীকে প্রেসিডেন্ট করে নিয়ে আসার জন্য আরসিএ-কে সাসপেন্ড করে বোর্ড। জাতীয় পর্যায়ের কোনও টুর্নামেন্টেই তাদের না রেখে ক্রীড়াসূচি তৈরিও করে ফেলা হয়। বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেও মোদী ঘনিষ্ঠরা কোনও চটজলদি সমাধান করতে পারেননি। এমনকী রাজ্যের ৭৫জন ক্রিকেটারকে দিয়ে জনস্বার্থ মামলাও করান তাঁরা। তাতে সাড়া দিয়ে আদালত রাজস্থানের ক্রিকেট চালানোর জন্য বোর্ড ও আরসিএ- কে যৌথ ভাবে কাজ করার রাস্তা বাতলে দিলেও পদে পদে বোর্ড কর্তারা সেই কাজে বাধা পাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সে জন্যই না কি আসরে নামেন অরুণ জেটলি।