বিস্ময়: কুড়ি বছর বয়েসেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের শিখরে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র
ক্লাব ফুটবলে তিনি কিংবদন্তি। চেলসির সঙ্গে তাঁর নামটা একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় এখনও। বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর দেশ আইভরি কোস্টকেও। এখন ফরাসি ফুটবল লিগের অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করছেন। শনিবার লিলের স্তাদ পিয়ে মৌরে স্টেডিয়ামে বিকেটি লিগ কাপ ফাইনালের আগে কয়েক জন ভারতীয় সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলেন দিদিয়ে দ্রোগবা। শর্ত ছিল একটাই। প্রশ্ন থাকতে হবে ফরাসি ফুটবল লিগ এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ফুটবলারদের নিয়ে।
প্রশ্ন: লিগ কাপ ফাইনালে যে দুটো দল উঠছে, তাদের একটি, গ্যাঁগঁতে আপনি ফুটবল জীবনের শুরুতে খেলেছেন। এখনও কি তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন?
দ্রোগবা: অবশ্যই রাখি। আমি ওই ক্লাবের হয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমি চলে আসার পরে ওরা কখনও সাফল্য পেয়েছে, কখনও ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যাওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। তবে লড়াই করে আবার নিজের জায়গাতে ফিরেও এসেছে। এটাই ওখানকার মানুষদের মানসিকতা। ওখানে গেলে সেটা বুঝতে পারতেন। একটা শহর, যেখানে নয় হাজার মানুষ থাকে, তারাই ১৪ হাজারের স্টেডিয়ামকে ভরিয়ে দেয়!
প্র: আপনি কিছু দিন আগে ভারতে এসেছিলেন। তখন জল্পনা ছড়িয়েছিল, কোনও দলের কোচের দায়িত্বে দেখা যেতে পারে আপনাকে। এই খবরটা কি আপনার জানা? এ রকম ভাবনা কি আছে?
দ্রোগবা: এ সব কথা তো আপনারাই বলেছেন। আমি কি কখনও বলেছি, ভারতের কোনও ক্লাবকে কোচিং করাতে চাই? কুড়ি বছর ধরে ফুটবল খেলেছি। প্রতিটি মুহূর্ত ফুটবলকে দিয়েছি। এখন কিছু দিন একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। ঘুরে বেড়াচ্ছি, আমার ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করছি। ভারতে গিয়ে কোচিং করানোর ভাবনা নেই।
প্র: আপনার দেশেরই এক তরুণ ফুটবলার ফরাসি লিগে সাড়া ফেলেছে। নিকোলাস পেপে। যার ওপর অনেক ক্লাবেরই নজর আছে। আইভরি কোস্টের ভবিষ্যৎ সম্পদ হয়ে উঠতে পারে পেপে। এই তরুণ ফুটবলারকে কী পরামর্শ দেবেন?
দ্রোগবা: পেপে অবশ্যই দারুণ উন্নতি করছে। এখন তো ফরাসি লিগে লিলের হয়ে খেলছে। ভাল ভাল গোল করছে। সব চেয়ে ভাল হচ্ছে ওর ধারাবাহিকতা। ও যদি মনে করে, তা হলে সামনের দিকে তাকিয়ে ক্লাব বদল করতেই পারে। আইভরি কোস্টের হয়ে ওকে পেয়ে আমরা খুব খুশি।
প্র: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফরাসি ক্লাবগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতার পিছনে কারণ কী?
দ্রোগবা: আমার মনে হয় সব চেয়ে বড় সমস্যা বাজেট। ফ্রান্সের অনেক ভাল ফুটবলারই বিদেশের ক্লাবগুলোয় খেলছে। ওখানে দারুণ ভাবে সফল হচ্ছে। যদি সব ক্লাবেরই চেলসি, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো বিশাল বাজেট থাকত, তা হলে কোনও সমস্যাই হত না। ছবিটা বদলে যেত। ভাল, ভাল ফরাসি ফুটবলারকে নিজের দেশেই ধরে রাখা যেত।
প্র: কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে কী বলবেন? ১৯ বছর বয়সেই তো মহাতারকা হয়ে উঠেছেন।
দ্রোগবা: এমবাপের খেলা দেখলে সত্যিই আনন্দ পাওয়া যায়। এই বয়সেই ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের শিখরে উঠে বসে আছে। তবে এখনও আরও উন্নতি করার জায়গা আছে।
প্র: আপনার কি মনে হয়, ফরাসি লিগ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেললে এমবাপের আরও উন্নত হবে। আরও পরিণত হয়ে উঠবে?
দ্রোগবা: ও বিদেশের লিগে গিয়ে খেলবে কি না, সেটা তো আমি ঠিক করে দেব না। বিশ্বকাপের সময়ই এমবাপে বুঝিয়ে দিয়েছে, ওর প্রতিভা কতটা। বিশ্বের যে কোনও লিগে দাপিয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা আছে এমবাপের।
প্র: সেটা করলে কি এমবাপে আরও পরিণত হয়ে উঠবে না?
দ্রোগবা: এমবাপে এখনই দারুণ পরিণত। আমি কয়েক বার ওর সঙ্গে কথা বলেছি। ছেলেটা কিন্তু এই বয়সে দারুণ পরিণত। পরিণতবোধের কোনও অভাব ওর মধ্যে নেই। পরিণত হওয়ার জন্য এমবাপেকে বাইরের লিগে খেলতে হবে না।
প্র: ফরাসি ফুটবল লিগকে এখনও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা বা ইতালিয়ান লিগের সঙ্গে এক সারিতে ফেলা যায় না। এমবাপের উপস্থিতি, নেমারের প্যারিস সাঁ জাঁরমাতে আসা কতটা বদলাতে পারে ফরাসি ফুটবল লিগকে?
দ্রোগবা: নেমারের মতো ফুটবলারের এখানে খেলতে আসা দিয়েই বোঝা যাচ্ছে ফরাসি ফুটবল এখন বদলে যাচ্ছে। নেমার আসা মানে ফরাসি ফুটবল লিগে আরও মশলা যোগ হল। পাশাপাশি এটাও বলব, ফরাসি ফুটবল কিন্তু উন্নতি করে চলেছে। গত পাঁচ বছরে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে। পল পোগবা, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, এমবাপের মতো ফুটবলার তুলে এনেছে। ফ্রান্সের ফুটবল অ্যাকাডেমি বিশ্বের সেরা। তাই এখান থেকে এত ফুটবলার উঠে আসে।
প্র: ফরাসি ফুটবল লিগে খেলে এক জন ফুটবলার কী ভাবে উন্নতি করতে পারে?
দ্রোগবা: সবার আগে ‘ম্যাচ রিডিং’-এর উন্নতি হয়। অর্থাৎ ম্যাচের গতি প্রকৃতি আগেই ধরে ফেলা যায়। ট্যাকটিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার বোঝা সহজ হয়ে যায়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ফ্রান্সে ফুটবল খেলে যাওয়ায় ইপিএলে খেলতে সমস্যা হয়নি।
প্র: আপনি ফরাসি ফুটবল লিগের সঙ্গে জড়িয়েছেন আবার। এ বার কি এই সম্পর্কটা আরও গভীরে নিয়ে যেতে চান? মানে ফ্রান্সের জাতীয় দলের কোচ হওয়ার ইচ্ছে আছে?
দ্রোগবা: প্রথমে আমার কাছে প্রস্তাবটা আসতে হবে। তার পরে আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে, দু’পক্ষেরই কোনটায় ভাল হয়। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।