আকর্ষণ: নিলামে দেখা যেতে পারে প্রীতি জিন্টাকে। ফাইল চিত্র
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের জেরে বাংলার কয়েকটি অঞ্চলে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, তার দিকে নজর রাখছে ভারতীয় বোর্ড। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত আইপিএলের নিলাম এ শহর থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং কলকাতার ঘরের ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও চান, আইপিএল নিলাম যেন নিজের শহর থেকে না সরে।
এ বারেই প্রথম আইপিএলের আকর্ষণীয় নিলামের বরাত পেয়েছে কলকাতা। আগামী ১৯ ডিসেম্বর যা হওয়ার কথা বাইপাসের ধারে পাঁচ তারা হোটেলে। সাধারণত নিলামের আসরে উপস্থিত থাকেন অনেক দলের মালিকেরা। তাই আশা করা যায়, চাঁদের হাট বসতে চলেছে সে দিন কলকাতার হোটেলে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে সৌরভও থাকবেন। রাজ্যের উদ্ভুত পরিস্থিতির জেরে কোনও কোনও মহলে অবশ্য সকাল থেকে জল্পনা ছড়িয়েছিল যে, নিলাম আদৌ কলকাতায় হবে কি না, তা নিয়ে। শোনা যাচ্ছিল, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুকে তৈরি রাখা হচ্ছে বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে। শোনা যাচ্ছিল, অনেক দলের কর্তা, কোচেরা কলকাতায় আসার টিকিট এখনও কাটেননি। বোর্ড থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় তাঁরা, এমনও বলছিলেন কেউ কেউ।
কিন্তু রাতের দিকে বোর্ডের আভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, কলকাতাতেই নিলামের আসর বসছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিরাট ভাবে ভেঙে না পড়লে নিলাম অন্যত্র সরানোর ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। মঙ্গলবার থেকেই বিভিন্ন দলের কর্তারা আসতে শুরু করে দেবেন। বুধবার কলকাতায় বসেই ‘মক অকশান’ সেরে নিতে চায় অনেকে। ‘মক অকশান’ হল নিলামের মহড়া। যেখানে রীতিমতো নিলামের মতো টেবিল পেতে বসে ক্রিকেটারদের নিয়ে সওদার প্রস্তুতি নেয় বিভিন্ন দল। আর তাতে অংশ নেন তাদের দলে নিলাম বিশেষজ্ঞ এবং স্পটাররা। সারা বছর ধরে গোটা পৃথিবীতে যে বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগ, সেখানে ঘুরে বেড়ান এই স্পটাররা। সেই সব লিগে নতুন প্রতিভাদের চিহ্নিত করে নিয়ে তাঁদের নিলাম টেবিল থেকে তোলার জন্য ঝাঁপাবেন তাঁরা। সেই কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞদের বড় অঙ্কে কিনে নেওয়াটা সব সময় নিলামের বড় আকর্ষণ থেকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: তিনশো না-তুললে এ রকম বোলিং জেতাতে পারবে না
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য দেশের কুড়ি ওভারের লিগ দেখতে গিয়ে এই সব তরুণ প্রতিভাদের খোঁজ পান স্পটারেরা। এ বারের নিলামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও অভিষেক না হওয়া ১৯৮ জন ক্রিকেটার আছেন। সব মিলিয়ে ৩৩২ জন ক্রিকেটার উঠছেন নিলামে। তার মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ক্রিকেটারের সংখ্যা এ রকম: ভারত (১৮৬), অস্ট্রেলিয়া (৩৫), দক্ষিণ আফ্রিকা (২৩), ইংল্যান্ড (২২), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯), নিউজিল্যান্ড (১৮), শ্রীলঙ্কা (১৪), আফগানিস্তান (৭), বাংলাদেশ (৫), সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (১), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১), স্কটল্যান্ড (১)।
শাহরুখের কলকাতা নাইট রাইডার্সকে তাদের ঘরের মাঠে নিলামে ব্যস্ত থাকতেই হবে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর খুব ভাল কিছু করতে না পারায় ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে গেলে নতুন করে দলকে সাজাতে হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। ক্রিস লিনকে এ বার নিলামে তুলে দিয়েছে কেকেআর। লিনকে হয় নিলাম থেকে কম টাকায় নেওয়ার চেষ্টা হবে নয়তো তাঁর জায়গায় ভাল কোনও বিদেশি ওপেনারের জন্য ঝাঁপাতে হবে। ইংল্যান্ডের জেসন রয় হতে পারেন নাইটদের টার্গেট। আন্দ্রে রাসেল থাকলেও তিনি চোটপ্রবণ। তাঁর সম্ভাব্য বিকল্প ভেবে রাখতে হবে। এক জন বিদেশি অলরাউন্ডারও দরকার পড়বে শাহরুখের দলের।
আরও পড়ুন: দলের স্বার্থে নিজেকে পাল্টাচ্ছেন পন্থ
নিলামে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দর উঠলে অবাক হওয়ার নেই। ম্যাক্সওয়েল যদিও সম্প্রতি মানসিক অবসাদের কথা তুলে ক্রিকেট থেকেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস, অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার এবং ‘ফিনিশার’ ফাবিয়েন অ্যালেনকেও নেওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপাতে পারে কেকেআর। সব মিলিয়ে ১১জন ক্রিকেটার নিলাম থেকে কিনতে পারবে তারা। চার বিদেশি, সাত ভারতীয়। নাইটদের হাতে রয়েছে ৩৫.৬৫ কোটি। প্রীতি জিন্টাদের পঞ্জাবের হাতে রয়েছে ৪২ কোটিরও বেশি। এই দু’টো দলের হাতে বেশি টাকা রয়েছে। তবে প্রীতি থাকলেও সব সময় নিলামে থাকেন না শাহরুখ। এ বার কলকাতায় কি দেখা যাবে বীর-জারা?