মাকে গোলের ভিডিও পাঠালেন কিংগসলে

খেলা শেষ হতেই মাঠের মধ্যে প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছিলেন এ দিনের গোলদাতা। সনি নর্দে-রা তখন গ্যালারির সামনে গিয়ে উৎসবে মেতেছেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

উল্লাস: বড় ম্যাচে জয়ের পরে গোলদাতা কিংগসলের সঙ্গে স্টেডিয়াম পরিক্রমা মোহনবাগান অধিনায়ক সনি নর্দের। ছবি: শৌভিক দে।

দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে কালীঘাট এমএস-এর হয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে গোল করেছেন তিনি। রবিবার যুবভারতীতে সনি নর্দের কর্নার থেকে হেডে গোল করে মোহনবাগানকে জেতানোর পর সেই কিংগসলে অবুমনেমে আবেগে ভাসলেন।

Advertisement

খেলা শেষ হতেই মাঠের মধ্যে প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছিলেন এ দিনের গোলদাতা। সনি নর্দে-রা তখন গ্যালারির সামনে গিয়ে উৎসবে মেতেছেন। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে নাইজিরিয়ান এই ফুটবলার বললেন, ‘‘আই লিগে এটাই আমার প্রথম গোল। আর তাতে জিতে ফিরল টিম। দুর্দান্ত অনুভূতি। যে স্বপ্নটা এত দিন দেখতাম তা সফল হল আজ। এত দর্শকের সামনে খেলা অভিজ্ঞতাও এই প্রথম। পুরো সাফল্যটাই উৎসর্গ করছি আমার মাকে।’’

কালিকাপুরের বাসিন্দা তার পরেই ছুটলেন গির্জায় প্রার্থনা করতে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘দাদা পুরো ম্যাচটা ইন্টারনেটে দেখেছেন। মায়ের সঙ্গে একটু আগে কথা হল। গোলের ভিডও-লিঙ্কটাও মাকে পাঠাচ্ছি।’’ ভারতে আসার পর প্রথমে হ্যাল-এ খেলতেন কিংগসলে। কলকাতায় এসে কালীঘাট এমএস-এ খেলার সময়েই পিতৃহারা হন। তার পর দেশে চলে গিয়েছিলেন। বড় ম্যাচে গোল করে নায়ক হওয়ার দিন বাবার কথা মনে পড়ে ডার্বির নায়কের। বলেন, ‘‘বাবা আজ বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’’

Advertisement

চিমার কোচিংয়ে পুলিশ এসি-তে খেলেছেন কিংগসলে। তার পরে ইউনাইটেড স্পোর্টসে খেলে গত বছর পিয়ারলেসে সই করেন। কলকাতা লিগের শেষে আইজলে গিয়ে খালিদ জামিলের কোচিংয়ে আই লিগ জয়।

এ বার ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে খালিদ দলে চেয়েছিলেন কিংগসলে-কে। কিন্তু তত দিনে এই নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার সই করে দিয়েছেন মোহনবাগানে। এ দিন তাঁর করা গোল সম্পর্কে জানতে চাইলে কিংগসলে বলছেন, ‘‘গত কয়েকদিন অনুশীলনে আমাদের সেট পিস অনুশীলন খুব জোরদার হয়েছিল। গোলটা তারই সফল প্রয়োগ।’’ সেট পিসে এ দিন মোহনবাগানের পরিকল্পনা ছিল সনি কর্নার নিলে বক্সে তাদের কেউ এক জন হেড নেবেন। সেই বল লক্ষ্য করে ফের হেডে গোল করার জন্য রক্ষণ থেকে উঠে আসবেন কিংগসলে। এ দিন গোলের আগেই সবুজ-মেরুন শিবিরের এই ডিফেন্ডারের হেড পোস্টে লেগে ফিরেছিল। তাই ম্যাচের একমাত্র গোলটা করার সময় বল মাটিতে ড্রপ খেতেই নিচু হয়ে হেডে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন সঞ্জয় সেনের এই ডিফেন্ডার।

তবে এই গোলের আগেই একাধিক গোলের সুযোগ নষ্টের জন্য আফশোস মোহনবাগানে। মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন বলছেন, ‘‘পাঁচ-ছয় গোলে জিততে পারতাম আমরা।’’ মোহনবাগানের লাইবেরিয়ান ফরোয়ার্ড আনসুমানা ক্রোমাও বলছেন, ‘‘আমাদের চার গোলে জেতা উচিত ছিল। ওদের আগের ম্যাচটা দেখতে এসেই বুঝে গিয়েছিলাম এরিয়াল বলে ভাল হলেও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বেশ মন্থর। সেই জায়গায় আঘাত করেই ইস্টবেঙ্গলকে কোণঠাসা করে ফেলেছিলাম আমরা।’’ মোহনবাগানের হয়ে এ দিন দুর্দান্ত খেলা সনি নর্দে অবশ্য চার-পাঁচ গোলের কথা বলেননি। এ দিন স্টেডিয়ামে স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে এসেছিলেন সনি। ম্যাচের পর ছেলেকে কোলে নিয়েই বাড়ি ফিরলেন। সনির কথায়, ‘‘ম্যাচটা ২-১ জিততে পারতাম আমরা। সেখানে ১-০ হয়েছে। তিন পয়েন্ট এসেছে এটাই বড় ব্যাপার। তবে লিগ না জিততে পারলে এই জয়ের কোনও মূল্য থাকবে না। কারণ গত বছর ডার্বি জিতেও আই লিগ পাইনি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে ডার্বি জেতার আনন্দ আলাদা। এই ম্যাচের আগে দু’দিন কোচ ছাড়া আমি নিজে টিম মিটিং করেছিলাম। যেহেতু এ বার আমাদের টিমটা নতুন। তাই প্রত্যেককেই বুঝিয়ে দিয়েছিলাম কার দায়িত্ব কী।’’

কিংগসলে গোল করলেও মোহনবাগান শিবিরে ম্যাচের নায়ক জাপানি মিডফিল্ডার ইউতা কিনোয়াকি। যাঁর উপর এ দিন দায়িত্ব ছিল, নিজেদের অর্ধে ইস্টবেঙ্গলের গেমমেকার মহম্মদ আল আমনাকে বল নিয়ে এগোনের ফাঁকা জায়গা না দেওয়া। চোট সারিয়ে এ দিনই প্রথম মোহনবাগান মাঝমাঠে খেললেন ইউতা। যাঁর সম্পর্কে সনি নর্দেও বলে গেলেন, ‘‘ইউতা আজ দারুণ খেলেছে। ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠকে ও একাই নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল।’’

আর ইউতা বলছেন, ‘‘আমনা ইস্টবেঙ্গলের সেরা ফুটবলার। ওকে নিজের ছন্দে খেলতে না দেওয়াটাই ছিল আমার কাজ। শেষ পর্যন্ত তা সফল ভাবে করে জিতে ফেরায় আমি খুশি।’’

তবে এ দিন জয়ের মাঝেও মোহনবাগান শিবিরে আশঙ্কা বাড়াল দিপান্দা ডিকার চোট। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে হাসপাতালে পাঠাতে হয় তাঁকে, রাতে যদিও মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে চোট সে রকম গুরুতর নয়। মঙ্গলবার সকালে অনুশীলনে দেখার পরে বুঝতে পারব পরের ম্যাচে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ওকে খেলাতে পারব কি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement