কারিগর: কিবু-মন্ত্রেই পাল্টে গিয়েছিল ফুটবলারদের মানসিকতা। ফাইল চিত্র
অভিষেকের মরসুমেই মোহনবাগানকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি। কিন্তু করোনা অতিমারির জেরে স্থগিত ছিল সরকারি ঘোষণা। অবশেষে স্বস্তি। শনিবার রাতে পোলান্ডে গৃহবন্দি স্ত্রী কাসা বিয়েলের সঙ্গে ভিডিয়ো চ্যাটের ফাঁকেই ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন কিবু ভিকুনা।
প্রশ্ন: আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি কী?
কিবু ভিকুনা: আমি খুশি। তবে একেবারেই উচ্ছ্বসিত নই। কারণ, গত ১০ মার্চ কল্যাণী স্টেডিয়ামে আইজল এফসিকে হারানোর পরেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিলাম। করোনা অতিমারির জেরে লিগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি ঘোষণাটা শুধু বাকি ছিল। এই কারণেই বাড়তি কোনও অনুভূতি নেই আমার মধ্যে।
প্রশ্ন: ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তে আপনার কী মত?
কিবু: করোনার গ্রাসে এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব। শুধু খেলাধুলো নয়, স্তব্ধ জনজীবনও। এই পরিস্থিতিতে এআইএফএফ ঠিক কাজই করেছে। তবে আমি মনে করি, মোহনবাগানকে অনেক আগেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা উচিত ছিল। সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরিই করল এআইএফএফ।
প্রশ্ন: অভিষেকের বছরেই মোহনবাগানকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করলেন। এই সাফল্য কী ভাবে উদযাপন করতে চান?
কিবু: মোহনবাগান সমর্থক, ফুটবলার, ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে লিগ জয় সেলিব্রেট করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু এখন আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। গোটা বিশ্বে মানুষ মারা যাচ্ছেন মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আমার দেশ স্পেনের অবস্থা খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের কথা ভাবছি না। আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ১০ মার্চ কল্যাণী স্টেডিয়ামে আইজল ম্যাচের পরের মুহূর্তগুলিই। সকলের সঙ্গে সে দিন মাঠেই আমরা উৎসবে মেতে উঠেছিলাম।
প্রশ্ন: স্পেনের পরিস্থিতি তো ভয়াবহ। আপনি কি এখন নিজের দেশে ফেরার ঝুঁকি নেবেন?
কিবু: অবশ্যই। যত দ্রুত সম্ভব আমি স্পেনে ফিরতে চাই। আমাদের দেশের অবস্থা ভয়ঙ্কর। আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ওদের পাশে থাকা আমার কর্তব্য।
আরও পড়ুন: ‘টিম মাস্ক ফোর্স’ গড়ে নতুন যুদ্ধ সচিনদের
প্রশ্ন: কবে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে?
কিবু: বিশ্বের সর্বত্র উড়ান চলাচল এখন বন্ধ। আমাদের হাতে কিছুই নেই। ভারতে স্পেন দূতাবাসের তরফে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। সপ্তাহখানেক আগে ভারতে আটকে পড়া স্পেনীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেই বিমান ধরতে পারিনি। এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আশা করছি, স্পেনের দূতাবাস নিশ্চয়ই দ্রুত ব্যবস্থা করবে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
প্রশ্ন: মোহনবাগানে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা কেমন?
কিবু: অসাধারণ। মোহনাবাগানের মতো ভারতের অন্যতম সেরা ক্লাবে কোচিং করানোর সুযোগ পাওয়াটা আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি। মরসুমের শুরুতে আমরা সাফল্য পাইনি। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ, ডুরান্ড কাপ জিততে পারিনি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। কারণ, ছেলেদের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। আমি জানতাম, এই দলটার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। ফুটবলারদের বলেছিলাম, কে কী বলছে তা না শুনে সামনের দিকে তাকাও। আমি জানি তোমরা পারবে। ওদের জন্যই আমরা আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। তাই আসল কৃতিত্ব ফুটবলারদেরই।
প্রশ্ন: কোন ম্যাচের পরে মনে হয়েছিল আই লিগ জিতবেন?
কিবু: আমি এ রকম কখনওই ভাবিনি। কারণ, আই লিগে লড়াইটা খুব কঠিন। যে কোনও মুহূর্তে ছবিটা বদলে যেতে পারে। তাই সব সময় ছেলেদের বলেছি, লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।
প্রশ্ন: মোহনবাগানের কোচ হিসেবে এ বারের আই লিগে আপনার সেরা মুহূর্ত কী?
কিবু (হেসে): কল্যাণীতে আইজল এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচে রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোটাই সেরা মুহূর্ত। কারণ, ওই ম্যাচটা জিতেই আমরা আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হই।
প্রশ্ন: আই লিগ ট্রফি কাকে উৎসর্গ করতে চান?
কিবু: সব ফুটবলারদের। যারা মরসুমের মাঝপথে ক্লাব ছেড়েছিল তারাও এই সাফল্যের কারিগর। এ ছাড়া সাপোর্ট স্টাফ, ক্লাব কর্তা এবং অবশ্যই মোহনবাগান সমর্থকেরা তো আছেনই। আমরা একটা পরিবারের মতো। তাই সকলকে এই জয় উৎসর্গ করতে চাই।