চ্যাম্পিয়ন: ৩০ বছর পরে ফিরল স্বপ্নপূরণের রাত। বুধবার চেলসির বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি তুলে দেওয়ার পরে লিভারপুল ফুটবলারদের উল্লাস। লিভারপুলের টুইটার
অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। তিরিশ বছর আগে যাঁর কোচিংয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লিভারপুল, সেই স্যর কেনি ডালগ্লিশ-ই বুধবার রাতে ইপিএল ট্রফি তুলে দিলেন অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের হাতে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল আগেই। ঘরের মাঠে বুধবার চেলসির বিরুদ্ধে ম্যাচটা নিয়মরক্ষার হলেও উন্মাদনা তুঙ্গে ছিল সমর্থকদের মধ্যে। কারণ, বুধবারই ম্যাচের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রফি দেওয়া হবে লিভারপুলকে । আর তাই যাবতীয় বিধি-নিষেধ অমান্য করে হাজার তিনেক সমর্থক খেলা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই অ্যানফিল্ডের সামনে ভিড় জমান।
প্রথমার্ধেই ৩-১ এগিয়ে যায় লিভারপুল। গোল করেন নাবি কেইটা, ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড ও জর্জিনিয়ো ওয়েনালদাম। সংযুক্ত সময়ে ব্যবধান কমান অলিভিয়ের জিহু। দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের বাকি দুই গোলদাতা রবের্তো ফির্মিনো ও আলেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেন। এই অর্ধে এক সময়ে ৩-৪ করে ফেলেছিল চেলসি। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের প্রশিক্ষণাধীন দলের হয়ে গোলগুলি করেন ট্যামি আব্রাহাম ও ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ।
উচ্ছ্বাস: অবস্থা স্বাভাবিক হলে মিছিল করে উৎসব করতে চান ক্লপ।
লিভারপুলের প্রতিটি গোলের পরেই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন সমর্থকেরা । দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আতসবাজি পুড়িয়ে বিজয়োৎসব শুরু করে দেন তাঁরা। যা আরও বাড়ে খেলা শেষ হওয়ার পরে। পরিস্থিতি সামলাতে লিভারপুলের ন’জন মদ্যপ সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অ্যানফিল্ডের ভিতরেও তখন উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। ট্রফি হাতে উল্লাসে মত্ত মহম্মদ সালাহ, রবের্তো ফির্মিনো-সহ গোটা লিভারপুল দল।
৩৭ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট এই মুহূর্তে ৯৬। প্রথম বার ইপিএল ট্রফি হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপ বলেছেন, ‘‘নিজেদের সেরাটা দিয়েছে ছেলেরা। অবিশ্বাস্য সব গোল দেখলাম। এই বিশেষ মুহূর্ত উপভোগ করতে আজ আমাদের পরিবারকে গ্যালারিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যা দুর্দান্ত ব্যাপার।’’ সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘সমর্থকেরা এই আনন্দের সময়ে পাশে থাকলে দারুণ লাগত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই আমরা জানি এটা অসম্ভব। কিছু মাস আগেও আমি ভাবতে পারতাম না যে ফের ফুটবল খেলা শুরু হবে।
এই খেতাব সমর্থকদের। আগামী মরসুমে আমরা আরও উন্নতি করব।’’
সমর্থকদের আবেগের কথা মাথায় রেখেই ক্লপ অবস্থা স্বাভাবিক হলে লিভারপুল শহরে মিছিল করে বিজয়োৎসব পালনের আগাম পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ইপিএল জয়ের এই উৎসবের জন্য তৈরি থাকুন। জানা নেই, এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে কবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা একসঙ্গে উৎসব করবই।’’
উৎসবের কোনও প্রভাব অবশ্য ম্যাচ চলাকালীন ফুটবলারদের মধ্যে পড়েনি। শুধু তাই নয়। ক্লপের সঙ্গে বিবাদেও জড়িয়ে পড়েছিলেন ল্যাম্পার্ড। ঘটনার সূচনা চেলসির বিরুদ্ধে একটি ফাউল দেওয়াকে কেন্দ্র করে। তার পরেই দেখা যায়, ল্যাম্পার্ড বিপক্ষের রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে থাকেন, ‘‘এটা কী ভাবে ফাউল হতে পারে?’’ ক্লপ তাঁকে শান্ত হতে বলেন। ক্ষুব্ধ ল্যাম্পার্ড লিভারপুল ম্যানেজারকেই বেঞ্চে গিয়ে বসতে বলেন। চতুর্থ রেফারি এগিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই আচরণের জন্য সমালোচিত ল্যাম্পার্ড পরে বলেছেন, ‘‘ক্লপের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই। ও দলটাকে দারুণ ভাবে পরিচালনা করেছে। খেতাব ওদের। কিন্তু তার জন্য অহঙ্কার বা ঔদ্ধত্য প্রকাশ জরুরি নয়।’’