রিয়াল কাশ্মীরের স্কটিশ কোচ ডেভিড আলেকজান্দ্রো রবার্টসন।—ছবি এএফপি।
স্যর আলেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে খেলেছেন ছয় বছর। খেলোয়াড় ও কোচিং জীবন মিলিয়ে ঝকঝকে জীবনপঞ্জী তাঁর।
রিয়াল কাশ্মীরের মতো অখ্যাত একটা দলকে মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছেন তিনি। কাশ্মীরের প্রথম দল হিসেবে আই লিগে খেলার ইতিহাস তৈরি করে ফেলা শুধু নয়, দলকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন খেতাবের লড়াইতে। টানা বারো ম্যাচ অপরজিত তাঁর দল। রিয়াল কাশ্মীরের সেই স্কটিশ কোচ ডেভিড আলেকজান্দ্রো রবার্টসন মনে করেন, এ বার খেতাব পাওয়ার রাস্তা মসৃণ দুটো দলের। তাঁর প্রথম বাজি ইস্টবেঙ্গল, দুই চেন্নাই সিটি এফসি। শুক্রবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলে দিলেন, ‘‘রবিবারের ম্যাচ বাতিল হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে গেলাম। বড় সুবিধা পেয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। আমরা ছাড়া ওদের আর কোনও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘লিগ টেবলে আমরা শীর্ষে উঠেছিলাম। আমাদের টপকে গিয়েছে চেন্নাই। ওদের আমরা হারিয়েছি। আমরা যে গতি ও শক্তি নিয়ে খেলেছিলাম তাতে ইস্টবেঙ্গল এখানে পয়েন্ট নষ্ট করতই। করলেই চাপে পড়ে যেত। সেটা আর হবে না। যখন এই খেলাটা দেবে তখন দেখবেন ওরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া আমাদের তুলনায় কম ম্যাচ খেলেছে ওরা। সেই সুবিধাটা তো পাবেই।’’
আই লিগের কাশ্মীরই একমাত্র দল যারা সারা বছর এক হোটেলে সবাইকে রেখেছে। সারা দিন টিম হোটেলে ফুটবলারদের নিয়েই পড়ে থাকেন রবার্টসন। তাঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। পারিবারিক সমস্যারও সমাধান করেন।
বৃহস্পতিবার পুরো দলকে নিয়ে তিনি ইস্টবেঙ্গল বনাম নেরোকা ম্যাচ দেখেছেন হোটেলে বসেই। ওই ম্যাচে এনরিকে এসকুয়েদা দুর্দান্ত খেলে দলকে জেতালেও কাশ্মীর কোচ বেশি নম্বর দিচ্ছেন জবি জাস্টিনকে। বলছিলেন, ‘‘আই লিগের সেরা ভারতীয় স্ট্রাইকার জবি। ও মাঠে ইস্টবেঙ্গলের সাত নম্বর বিদেশি হিসাবে খেলছে। জবি সামনে ভাল খেলায় পিছন থেকে টোনি দোভালকে ব্যবহার করতে পারছেন ওদের স্প্যানিশ কোচ।’’ কথা বলেই বোঝা যাচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর নানা অঙ্ক করে রেখেছিলেন তিনি। ম্যাচ না হওয়ার হতাশা থেকেই সম্ভবত তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘চ্যাম্পিয়ন না হলেও আমার কোনও দু:খ নেই। কাশ্মীর যে ভারতের ‘গার্ডেন অব ফুটবল’ সেটা প্রমাণ করতে পেরেছে আমার ছেলেরা। এত দিন ইসফাক (আহমেদ) বা মেহেরাজউদ্দিনদের মতো হয়তো দু’একজন ভারতীয় ফুটবলে ভাল খেলেছে। কিন্তু পাঁচ-ছয় জন কাশ্মীরের খেলোয়াড় একসঙ্গে দুর্দান্ত খেলছে এটা কখনও হয়নি। আমি এটাই চেয়েছিলাম।’’
ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় রিয়াল কাশ্মীরকে প্রায় দশ দিন বসে থাকতে হবে পরের মিনার্ভা পঞ্জাবের সঙ্গে খেলার জন্য। এই ম্যাচ রয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি। তাতেও বেশ বিরক্ত স্কটিশ কোচ। বলছিলেন, ‘‘আমি ফার্গুসনের মন্ত্রে বিশ্বাসী। সব সময় শেষ মিনিট পর্যন্ত মাঠে লড়ে যাওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে ছেলেদের তৈরি করেছি।’’ ছেলে মেসন রবার্টসন রক্ষণের প্রধান ভরসা। তবে পারফর্ম করতে না পারলে ছেলেকেও বসিয়ে রাখতে দু’বার ভাবেন না রবার্টসন। বলছিলেন, ‘‘সবই ঠিক আছে। কিন্তু লিগ টেবল যে কোনও দলের কাছে আসল টনিক। ওখানে এগিয়ে থাকলে দলের মনোবল বেড়ে যায়। সেটা মনে হচ্ছে শেষ পর্বে এসে আর পাব না।’’