অরুণ লাল।
স্বাধীনতার পরে বাংলার একমাত্র রঞ্জি ট্রফি জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। এই মুহূর্তে বাংলা দলের কোচও দিল্লিতে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা সেই অরুণ লাল। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রবিবার রাতে ছাত্রদের উপরে হামলার ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ তিনি। অরুণ লাল ছাড়াও এই ঘটনায় নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলার ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারিও।
সোমবার ইডেনে গুজরাতের বিরুদ্ধে বাংলার রঞ্জি ম্যাচের শেষ দিন ছিল। সেই ম্যাচের পরেই বাংলার কোচ অরুণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘জানি না, কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কেনই বা এই ঘটনা ঘটল সে সম্পর্কেও কোনও ধারণা নেই। তবে ছাত্রছাত্রীদের উপরে যে কোনও হামলার ঘটনাই ভয়ঙ্কর। অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মর্মাহত।’’
বাংলার জামাই অরুণ কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে যোগ করেন, ‘‘রবিবার যা হয়েছে, তা মোটেও দেশের ভাবমূর্তির পক্ষে ভাল নয়। গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্রদের অধিকার রয়েছে স্বাধীন ভাবে নিজের বক্তব্য জানানোর। সে বক্তব্য বা মতামত অন্য কারও কাছে ভাল না-ও লাগতে পারে, কিন্তু স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে নিজের বক্তব্য জানানোর অধিকার ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই রয়েছে। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। আমি সেই দেশে বাস করতে চাই না, যেখানে নিজের বক্তব্য আমি জানাতে
পারব না।’’
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রবিবার রাতে লাঠি, লোহার রড হাতে শ’খানেক মুখোশধারীর তাণ্ডবে ২৬ জন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। যে প্রসঙ্গে বাংলার ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি টুইট করেন, ‘‘জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা দেখে খুব খারাপ লাগছে। এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি সহমর্মী।’’
কেবল অরুণ লাল বা মনোজই নন। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভারতের একাধিক ক্রীড়াবিদ। দিল্লির সাংসদ ও বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এই আক্রমণ আমাদের দেশের ভাবধারার বিরোধী। হামলাকারীরা যে মতাদর্শেই বিশ্বাস রাখুক, এ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের নিশানা বানানো যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে যে গুন্ডারা এ ভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
সদ্য ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া আর এক প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও টুইট করেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে ছাত্রদের আক্রমণ করার এই ঘটনা বেদনাদায়ক। দেশের ভাবমূর্তির পক্ষে যা একদমই ভাল নয়।’’
টেনিস খেলোয়াড় রোহন বোপান্নাও প্রতিবাদ জানিয়ে টুইট করেন, ‘‘যে ঘটনা জেএনইউ-তে ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।’’
প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জ্বালা গুট্টাও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি টুইট করেন, ‘‘আমরা ক্রীড়াবিদেরা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করি। এখন গুণ্ডারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের পেটাচ্ছে। দেশের সব মহান ক্রীড়াবিদদের কাছে আমার আবেদন, এই ঘটনার প্রতিবাদ করুন। কারণ, এই ছাত্রছাত্রীরাই আগামী দিনের মুখ। কেন দোষীদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে না? আমরা কী চুপ করে দেখব ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কী রকম বর্বরতা হচ্ছে?’’