নেতা: কল্যাণীতে ক্যাপ্টেন কুল। অধিনায়কত্বের সেই পুরনো ভঙ্গিতে দেখা গেল ধোনিকে।–পিটিআই
দু’দিন আগেই ইডেনে সেঞ্চুরি করেছেন। তাই মঙ্গলবার তাঁর কাছে আর একটা বড় রানের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠমুখো হয়েছিল কল্যাণী। কিন্তু ব্যাট হাতে নামার সুযোগই পেলেন না মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাই মন খারাপ কল্যাণীর। ধোনিরও আফসোস, এত ভাল মাঠে, এমন উইকেটে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন না তিনি।
সকালে তিনি যখন মাঠে অনুশীলন করছিলেন, তখন থেকেই বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজারখানেক ধোনিভক্ত। তাঁর টানে কল্যাণী ও তার আশপাশ থেকে আসা আরও হাজার খানেকের বেশি ফ্যান তখন অ্যাকাডেমির বাইরে। তাঁরা মাঠে ঢোকার পাস না পেয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তো আর বারবার আসবেন না এই জেলাশহরে। তাই একবার তাঁকে চাক্ষুস দেখার সুযোগ ছাড়তে চান না কেউই।
অ্যাকাডেমির পাশেই শহরের পুরনো স্কুল ‘কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুল’। ধোনির আগমনে সেখানেও মঙ্গলবার পড়াশোনা শিকেয় উঠল। স্কুলের ছাদে, জানলায়, এমনকী পাঁচিলেও কোনও জায়গা ফাঁকা ছিল না। মাঝে মাঝে প্রধানশিক্ষক বেতের ছড়ি হাতে পাঁচিলের উপর থাকা ছাত্রদের তাড়িয়ে নামাচ্ছিলেন। আবার তিনি চলে যাওয়ার পর যে কে সেই। একবার পুলিশও আসে ছাত্রদের সেখান থেকে নামাতে। তবে লাভ হয়নি।
মাঠের দক্ষিণ দিকে এক নির্মীয়মাণ বাড়ির ন্যাড়া ছাদের উপচে পড়া ভিড় ধোনি-দর্শনের জন্য। আশেপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। ধোনির এক ঝলক দেখার জন্য সে কি মরিয়া চেষ্টা সবার। কিন্তু ধোনি-দর্শনের এই দিনটা যে তেমন স্মরণীয় হয়ে উঠল না। ধোনির ব্যাটিং দেখার সুযোগই যে হল না তাঁদের। ইশাঙ্ক জাগ্গি, সৌরভ তিওয়ারিরা ব্যাটে এমন ঝড় তুললেন যে, তাঁদের ২১৪ রানের পার্টনারশিপের পর আর ব্যাট করতে নামার দরকারই পড়ল না ক্যাপ্টেনের। ধোনি-দর্শন অপূর্ণই থেকে গেল ভক্তদের।
আকর্ষণ: কল্যাণীতে স্বমেজাজে এমএসডি।-সজল চট্টোপাধ্যায়
মঙ্গলবার সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ট্রফির ম্যাচ খেলতে সোমবার রাতে কল্যাণীতে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দল নিয়ে চলে আসেন ধোনি। অ্যাকাডেমিরই এক কর্তা জানালেন, এখানে ঢোকার পর থেকেই ধোনি ছিলেন খোশ মেজাজে। অ্যাকাডেমির মাঠ, প্র্যাকটিস নেট, সুইমিং পুল দেখে খুব খুশি। অ্যাকাডেমিতেই ক্রিকেটারদের জন্য যে থাকার আবাসন আছে, সেখানেই ছিলেন, ১০৭ নম্বর ঘরে। মঙ্গলবার ভোরে সাড়ে ছ’টায় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সোজা মাঠে।
উইকেটকিপার ধোনিকে অবশ্য দেখতে পেলেন তাঁরা। দু’বার রান আউট করলেন সেই চেনা ক্ষিপ্রতায়। একবার লেগ স্লিপ থেকে। আর একবার এক দিক থেকে আর এক দিকের স্টাম্প ভেঙে দিয়ে। আর নিলেন একটি ক্যাচও। কিন্তু সে দিন ইডেনের মতো ফিনিশার ধোনিকে সামনে থেকে দেখার সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল কল্যাণীর।
আরও পড়ুন:
সূর্যাস্তের শোভা দেখে নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্ন
চড়া রোদে সারা দিন যাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসেছিলেন মাঠের ধারে, তাঁরা দিনের শেষে ধোনির ব্যাট করতে নামার সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে এতটাই অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন যে, সৌরভ তিওয়ারিরর উপর রেগে গিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে দেন, ‘সৌরভ তিওয়ারি হায় হায়, ধোনি উই ওয়ান্ট ইউ’। সৌরভ যত ‘হায় হায়’ শুনছিলেন, তত তাঁর ব্যাট চলতে শুরু করে। ১০৩ বলে ১০২ রান করে নট আউট থাকার পর তিনি বলেন, ‘‘আমার কিন্তু একটুও খারাপ লাগেনি। ওরা সবাই মাহিভাইয়ের ব্যাটিং দেখতেই এসেছিলেন। এই সুযোগ তো আর এখানকার লোকেদের বারবার আসবে না। তাই ওদের রাগটা হওয়াই স্বাভাবিক।’’
জযের আর এক নায়ক ইশাঙ্ক জাগ্গি। ৯২ বলে ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পর তাঁর মন্তব্য, ‘‘কয়েক দিন ধরে মাহি ভাইয়ের কাছে যা শিখেছি, আজ সেগুলোই অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করেছি। ওর মতো একজন ফিনিশার ড্রেসিংরুমে বসে থাকা মানেই তো চাপমুক্ত হয়ে ব্যাট করা। আজ আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই হল।’’ সাত উইকেটে জিততে সার্ভিসেসের দেওয়া ২৭৬ রানের টার্গেট ২২ বল বাকি থাকতেই তুলে নেয় ঝাড়খন্ড।
ব্যাট করতে না পেরে ধোনিরও আফসোস। এত ভাল মাঠ ও উইকেটে ব্যাটিংটা বেশ উপভোগ করবেন বলেই ভেবেছিলেন।