লোকে তাঁকে বলে ওয়ান্ডার উওম্যান। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। তিনি অর্থাত্ জেসিকা। ইউএফসি (আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ) তারকা। ওয়ান্ডার উওম্যানের বদলে নিজেকে শয়তান বলতেই পছন্দ করেন জেসিকা। জেসিকার মতে, ‘আমি শয়তান। আমার পুরো নাম জেসিকা ‘ইভল’ আই। রিংয়ে যখন নামি, তখন শয়তানে বদলে যাই।’
প্রতিপক্ষরাও অবশ্য তাঁকে শয়তান বলেই থাকেন। রিংয়ে এক বার এক জনের কান ছিঁড়ে দু’টুকরো করে দিয়েছিলেন জেসিকা।
মিক্সড মার্শাল আর্টসের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হয় ইউএফসি-তে। রিংয়ে নামলেই রক্তাক্ত মুখ নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। যে কোনও সময় জীবন সংশয় হতে পারে। এমন একটা জীবন-মরণ খেলায় কেন মেতে উঠলেন জেসিকা? রিংয়ের যন্ত্রণাকে আসলে যন্ত্রণা বলে মনেই করেন না জেসিকা। সেই ছোটবেলা থেকেই যে যন্ত্রণার সঙ্গে পরিচয় তাঁর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম এই তরুণীর ছোটবেলা খুবই যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবা-মার সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত, ভয়ঙ্কর এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন জেসিকা। বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। জেসিকা বাবার সঙ্গে ওহিও-র রুটসটাউনে থাকতে শুরু করেন। সেই যন্ত্রণার উপর আরেক যন্ত্রণা হাজির হয় তাঁর জীবনে। ১৬ বছর বয়সে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি।
রাস্তা দিয়ে বাবার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন জেসিকা। এক মদ্যপ চালক জেসিকাকে গাড়ি চাপা দিয়ে দেন। শরীরের অনেক জায়গার হাড় টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাঁচার কথাই ছিল না। তিন মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। কিন্তু হার মানতে নারাজ জেসিকা। কঠোর অধ্যাবসায়ে মিক্সড মার্শাল আর্টসে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
ইউএফসি-তে যোগ দেওয়ার পরে ব্যান্টমওয়েট, ফ্লাইওয়েট বিভাগে এগারোটা লড়াইয়ে ১০টা জিতেছেন। ৫৮ সেকেন্ডে নক আউটের রেকর্ড আছে জেসিকার। ইচ্ছা আছে ডব্লিউডব্লিউই-র রিংয়ে নামার।
পর্দায় ওয়ান্ডার উওম্যানের নাম ডায়ানা প্রিন্স হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করে যন্ত্রণাকে হারানোর ক্ষমতা আছে জেসিকার। আর এই জন্যই বোধহয় তিনি রিয়েল লাইফ ওয়ান্ডার উওম্যান।