প্রস্তুতি: ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অনুশীলনে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের নতুন তারকা ব্ল্যাকউড এবং কোচ সিমন্স। গেটি ইমেজেস
তিনি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট আকাশে উদিত নতুন তারা। করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে ১১৭ দিন পরে ফেরা ক্রিকেটে ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক। তবু কোথাও যেন আক্ষেপ থেকেই যাচ্ছে মাত্র পাঁচ রানের জন্য সেঞ্চুরি হারানোর।
দাঁড়ান, জারমেইন ব্ল্যাকউড হতাশ, তবে সেঞ্চুরি হারানোর জন্য নয়। সাউদাম্পটনের নায়ক নিজের দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে বলে দিলেন, তাঁর হতাশার কারণ শেষ পর্যন্ত থেকে জিতিয়ে আসতে না-পারা। তীরে এসেও তরি ডুবতে পারত আর তার জন্য সারা জীবনই সঙ্গী হতে পারত যন্ত্রণা। ‘‘ম্যাচের ও রকম একটা মুহূর্তে আউট হয়ে খুবই হতাশ হয়েছিলাম,’’ বলেছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বরাবরই সফল ব্ল্যাকউড। পঞ্চাশের উপরে গড় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জীবনের একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি (১১২ অপরাজিত) এসেছিল ২০১৬ সালে অ্যান্টিগাতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই। শেষ ইংল্যান্ডে সফরে করেছিলেন ১৮৭ রান। সর্বোচ্চ ছিল ৭৯ অপরাজিত।
অভিনব: চাঁদমারি রেখে বোলিং অনুশীলন হোল্ডারদের। ফাইল চিত্র
কিন্তু সাউদাম্পটনে জয়ের কাছাকাছি এসেও আউট হয়ে যাওয়ায় নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলেন না ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের নতুন নায়ক। ‘‘আমি খুবই কাতর হয়ে পড়েছিলাম আউট হয়ে। আমার সেঞ্চুরির জন্য নয়, কিন্তু এত কাছাকাছি এসেও শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জিতিয়ে আসতে পারলাম না বলেই খারাপ লাগছিল,’’ বলেছেন তিনি। যোগ করছেন, ‘‘আমি নিজের একশো নিয়ে ভাবছিলাম না। মাথায় ছিল শুধুই দলের জয়।’’ এখনও পর্যন্ত ২৯টি টেস্টে ১৪৬৯ রান করা ব্ল্যাকউড কৃতজ্ঞ তাঁর কোচ এবং অধিনায়কের কাছে। তাঁরা যে আস্থা দেখিয়েছেন, তার মর্যাদা দিতে পেরেই তিনি সব চেয়ে খুশি। ‘‘এক জন খেলোয়াড় যখন দেখে, অধিনায়ক তার উপরে আস্থা রাখছে, তখন অন্য রকম ভাল লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। সেই ফুরফুরে ভাব ভাল খেলতে সাহায্য করে। সেই অনূর্ধ্ব-১৫ দিন থেকে আমি জেসনকে (এই দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার) চিনি। তেমনই ও জানে, আমি কী করতে পারি।’’ ব্ল্যাকউড কী করতে পারেন, এখন জেনে গিয়েছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। ২৭-৩ হয়ে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ধুঁকছে, সেই সময়ে এসে তিনি অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের মুখ হয়ে ওঠেন। এটা ঠিক যে, তিনি ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সাহস এবং প্রত্যয়ের প্রশংসা না করে পারছেন না কেউ। মনঃসংযোগ হারিয়ে ৬১তম ওভারে মিড-অফে দাঁড়ানো জিমি অ্যান্ডারসনের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। যদিও এই ভুল বড় হয়ে দেখা দেয়নি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জেতায় নায়কের সম্মান পান ব্ল্যাকউড। বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গিয়ে আমি কিন্তু কোনও চাপ অনুভবই করিনি। ব্যাট করতে যখন যাচ্ছিলাম, কোচ (প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার ফিল সিমন্স) এবং অধিনায়ক আমাকে বলে, নিজের সহজাত ক্রিকেট খেলো। পাশাপাশি, ওরা বলেছিল, তবে বেছে শট খেলো। সেটাই আমি করে গিয়েছি।’’
এ দিকে, নতুন আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বোলারদের তালিকায় দু’নম্বরে উঠে এসেছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তাঁর জীবনে এটাই সেরা। সাউদাম্পটনে ম্যাচ থেকে সাত উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথন ইনিংসে ৪২ রানে ছয় উইকেট নিয়ে তিনিই ভাঙেন ইংল্যান্ডকে। হোল্ডারের রেটিং পয়েন্ট ৮৬২, যা কুড়ি বছরে কোনও ক্যারিবিয়ান বোলারের সেরা। ২০০০-এর অগস্টে কোর্টনি ওয়ালশের রেটিং ছিল ৮৬৬। করোনার জন্য থেমে থাকা ক্রিকেটে বাকি র্যাঙ্কিং অনেকটাই একই রকম থেকে গিয়েছে। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় এক নম্বরে স্টিভ স্মিথ, দু’নম্বরে থেকে গিয়েছেন বিরাট কোহালি। ভারতীয়দের মধ্যে চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রাহানে রয়েছেন প্রথম দশ জনের মধ্যে। বোলারদের মধ্যে প্রথম দশের তালিকায় একমাত্র ভারতীয় হিসেবে রয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। তাঁর র্যাঙ্কিং দশ নম্বর।