দায়িত্ববান: প্রতিবেশীদের নিয়ে নদীর যত্ন নিচ্ছেন জেজে। ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ফুটবলে ডিফেন্ডাদের কাছে শুধু নন, জেজে লালপেখলুয়াকে নিয়ে এখন আতঙ্কে চোরা মাছ শিকারিরাও! মিজ়োরামের মডেল ভেং নাথিয়াল গ্রামের মৎসজীবীদের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। তুইচাং নদী থেকে বেআইনি ভাবে মাছধরা আটকাতে করোনার ত্রাসকে তুচ্ছ করে বন্ধুদের নিয়ে দিন-রাত পাহারায় ব্যস্ত জেজে।
মিজ়োরামের রাজধানী আইজ়ল থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বে মডেল ভেং নাথিয়ালেই জন্ম জেজের। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই সরকারি চাকরি করেন। বাকিরা সংসার চালান তুইচাং নদীতে ধরা মাছ বিক্রি করে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। চোরা মাছ শিকারিদের দাপটে রোজগার কমে গিয়েছে স্থানীয় মৎসজীবীদের। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সেই দুর্নীতি রুখতেই সতীর্থদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন ফুটবল তারকা।
শনিবার সন্ধ্যায় যখন জেজে-কে ফোনে ধরা হল, তখন তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন নদীর ধারে টহল দিতে যাওয়ার। আনন্দবাজারকে মিজ়ো স্ট্রাইকার বললেন, “মৎসজীবীরা ছাড়াও গ্রামের অন্যান্য মানুষ বরাবরই তুইচাং নদী থেকে মাছ ধরেন প্রয়োজন অনুযায়ী। কিন্তু গত কয়েক বছর তা ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। অবাধে মাছ ধরা চলছে। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তা বন্ধ করা যায়নি। এর ফলে নদীতে মাছের সংখ্যা ভীষণ ভাবেই কমতে শুরু করেছিল।” যোগ করলেন, “মডেল ভেং নাথিয়ালের ইয়ং মিজ়ো অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বছরখানেক আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয় মাছের চোরা শিকার বন্ধ করার। অতিমারির জন্য ফুটবল বন্ধ। ওদের সঙ্গে আমিও যোগ দিয়েছি।”
কী ভাবে চোরা মাছ শিকার আটকান? জেজে বলছিলেন, “দু’টি দলে ভাগ করে আমরা চব্বিশ ঘণ্টাই টহল দিই। কয়েক দিন আগেই আমরা আট জন দুপুর দু’টো থেকে কাজ শুরু করেছিলাম। চার জন সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। আমরা বাকি চার জন সারারাত নদীর ধারে কাটিয়েছিলাম।” সারারাত যে পাহারা দেন, সঙ্গে অস্ত্র কী থাকে? হাসতে হাসতে জেজে বললেন, “কোনও অস্ত্রই থাকে না। সকলেই তো গ্রামের মানুষ। ওদের সঙ্গে কি মারামারি করব?”
চোরা মাছ শিকারিদের হাতেনাতে কখনও ধরেছেন? জেজে বলছিলেন, “এখন আর দিনের বেলায় ওরা মাছ ধরার সাহস দেখাচ্ছে না। রাতের অন্ধকারে মাঝেমধ্যে চেষ্টা করে। কয়েক জন ধরাও পড়েছে। আমি অবশ্য এখনও পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারিনি।” চোরা মাছ শিকারিদের কি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়? চেন্নাইয়িন এফসি-র হয়ে দু’বার আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্ট্রাইকার বললেন, “না না, আমরাই ওদের শাস্তি দিই।” কী শাস্তি? জেজের কথায়, “জরিমানা তো করা হয়ই। তার পরে ওদের সঙ্গে যা যা থাকে, সব বাজেয়াপ্ত করা হয়। বোঝানো হয়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাছ ধরলে মৎসজীবীরাই শুধু সমস্যায় পড়বেন না, পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হবে।” যোগ করলেন, “আমাদের গ্রামের মৎসজীবীরা এখন দারুণ খুশি। অনেকেই বলেছেন, তুইচাং নদীতে এত মাছ সাম্প্রতিক কালে দেখেননি।”
মানুষের সাহায্যে জেজে এর আগেও এগিয়ে এসেছেন। গত বছর লকডাউনের সময়ে আইজ়লে বন্ধুদের নিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিয়েছিলেন আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষদের বাড়িতে। পাশাপাশি নিয়েছিলেন মাঠে ফেরার প্রস্তুতিও। যদিও এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ফুটবলের মূলস্রোতে জেজে-র প্রত্যাবর্তন খুব একটা স্মরণীয় ছিল না। সপ্তম আইএসএলে সাতটি ম্যাচে মাত্র একটি গোল করেছিলেন। জেজে বললেন, “গত মরসুমে চোট সারিয়ে সদ্য মাঠে ফিরেছিলাম। আশা করছি, এ বার নিজেকে প্রমাণ করতে পারব।”
এই মরসুমেও কি লাল-হলুদ জার্সিতে দেখা যাবে আপনাকে? জেজের কথায়, “চুক্তি (লগ্নিকারীর সঙ্গে জট এখনও ছাড়েনি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের) সংক্রান্ত সমস্যার কারণে হয়তো এসসি ইস্টবেঙ্গল এখনও যোগাযোগ করেনি। আইএসএলের বেশ কিছু ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছি। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।”