Shoaib Akhtar

গতির গোপন পাক-অস্ত্র এখন বুমরার হাতে, বলছেন শোয়েব

ইমরান খান, সরফরাজ় নওয়াজ়, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারেরা আগুন ঝরিয়েছেন বিশ্বের সব প্রান্তে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:১২
Share:

যশপ্রীত বুমরার বোলিং নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা গেল এ বার ওয়াঘার ও পার থেকেও। শোয়েব আখতার বলে দিলেন, বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটে সব চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ফাস্ট বোলার বুমরা। শুধু তা-ই নয়, রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস এমন কথাও বলেছেন যে, একটা সময়ে পাকিস্তানের বোলারদের যেটা গোপন অস্ত্র ছিল, তা এখন এসে গিয়েছে বুমরার হাতে। হাওয়াকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কী ভাবে বোকা বানানো যায়, তা শিখে ফেলেছেন বুমরা। যা কি না পাক পেসারদের গোপন অস্ত্র ছিল।

Advertisement

বিশ্ব ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তান থেকে দুর্ধর্ষ সব ফাস্ট বোলার বেরিয়েছে। ইমরান খান, সরফরাজ় নওয়াজ়, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারেরা আগুন ঝরিয়েছেন বিশ্বের সব প্রান্তে। আর সেই সময়ে ভারতের হাতে ছিল শুধুই এক জন কপিল দেব। পরবর্তীকালে জাভাগল শ্রীনাথ, জাহির খানেরা এসেছেন। কিন্তু কখনওই পাক পেস বোলিংকে টেক্কা দিতে পারেনি ভারত। যা এখনকার বুমরা, শামি, ইশান্তরা দিচ্ছেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম বোলারদের এক জন, শোয়েব সব চেয়ে মুগ্ধ বুমরাকে নিয়ে। বলেছেন, মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে ছোট্ট একটা রান-আপ নিয়ে বুমরা ধ্বংস করে দিতে পারেন যে কোনও ব্যাটসম্যানকে। এমনই সেই রান-আপ আর বোলিং অ্যাকশন যে, সমালোচকেরা নাকও কুঁচকেছে। একটি ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব বলেছেন, ‘‘বুমরাই সম্ভবত প্রথম ভারতীয় পেসার যে, উইকেটে কতটা ঘাস আছে তা পরীক্ষা করার আগে দেখে নিতে চায় হাওয়া কতটা জোরে বইছে বা কোন দিকে বইছে। এটা আমরা, পাকিস্তানের ফাস্ট বোলাররা করতাম। আমরা জানতাম, হাওয়া নিয়ে কী করে খেলা করা যায়।’’ প্রাক্তন পাক পেসার যোগ করছেন, ‘‘আমরা সত্যিই হাওয়ার গতি এবং গতিপথ মেপে বল করতাম। ওয়াসিম, ওয়াকার, আমি বোঝার চেষ্টা করতাম, হাওয়া কী ভাবে বইছে। সেই অনুযায়ী ঠিক করতে হত, কোন প্রান্ত দিয়ে বল করলে আমরা রিভার্স সুইং পেতে পারি।’’ আরও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শোয়েব বলেছেন, ‘‘বল সুইং করার পিছনে যে বিজ্ঞানটা রয়েছে, হাওয়ার ব্যবহার কী ভাবে করতে হবে, সে সব বুঝে আমরা বল করার চেষ্টা করতাম। সেই কারণে হাওয়া কাজে লাগিয়ে আমরা সুইং পেতাম। আমার দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বুমরা এই জিনিসগুলো জানে। হালফিলে বিশ্বের আর কোনও বোলারকে দেখে আমার মনে হয়নি, তারা এত কিছু জেনেবুঝে বল করে।’’

বুমরাকে নিয়ে শোয়েবের প্রশংসা এখানেই থামছে না। আরও বলেছেন, ‘‘মহম্মদ আসিফ ও মহম্মদ আমিরের পরে আমার দেখা সব চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলার বুমরা।’’ মাত্র সাতটি পদক্ষেপ রয়েছে বুমরার রান-আপে। জগিংয়ের মতো পায়ে-পায়ে এগিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে দৌড়ে বল করেন। তার উপর অন্য রকমের প্যাঁচানো অ্যাকশন। যা নিয়ে সমালোচকেরা সরব হয়েছেন, বেশি দিন এমন রান-আপ, অ্যাকশনে বল করে যেতে পারবেন না বুমরা। কিন্তু শোয়েব বলছেন, ‘‘বুমরার পৃথিবীতে ওই পাঁচ সেকেন্ডে শুধু ব্যাটসম্যানকে কী ভাবে ঘায়েল করা যায়, সেই চিন্তাই রয়েছে। এক মনে ও সেটাই ভাবে। ওকে দেখে মনে হয়, মাথায় রয়েছে শুধুই কী ভাবে উইকেট তুলব।’’ যে ভাবে বুমরা সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করে চলেছেন, তা দেখেও খুশি শোয়েব। বলছেন, ‘‘বর্তমান ক্রিকেটের দারুণ এক চরিত্র বুমরা। যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারে, যদি ওর কোমর ঠিক থাকে, দুর্দান্ত এক ফাস্ট বোলারকে বহু দিন ধরে আমরা দেখতে পাব।’’ যোগ করছেন, ‘‘লোকে যত ওর সমালোচনা করেছে, তত ও তাদের ভুল প্রমাণ করেছে। যত লোকে বলেছে, ওর অ্যাকশন খুব ত্রুটিপূর্ণ, তত উইকেট নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে ও কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তত তাদের মুখের উপরে যেন জবাব ছুড়ে দিয়েছে যে, দ্যাখো আমি কী করতে পারি!’’ শোয়েবের কথায়, বুমরার সব চেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, ছোট্ট সরণির মধ্যে লেংথে তারতম্য ঘটিয়ে ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়া। পাক তারকার বিশ্লেষণ, ‘‘যে করিডরে ও বলটা রাখে, তাতে সামান্য এদিক-ওদিক করে চমকে দেয়। ওই চ্যানেলটাতে ৬০টা বল যদি ওকে কেউ একই জায়গায় ফেলতে বলে, সেটাই করে দেখাতে পারে। এতটাই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ওর।’’ বুমরা দারুণ ভাবে বোলিং ক্রিজকেও ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন শোয়েব। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘ওভার দ্য উইকেট বল করার সময়ে স্টাম্পের গা ঘেঁষে বল করতে পারে। দারুণ বৈচিত্র আনতে পারে বোলিংয়ে। বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে যখন হয়তো সে ভাবছে ভিতরের দিকে বল আসবে, আউটসুইং করে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। এবং, বলটা পিচে পড়ার পরেই একমাত্র দেখা যায় সেটা বাইরের দিকে যাচ্ছে।’’ এখানেই না থেমে ভারতীয় পেসারকে নিয়ে শোয়েবের আরও প্রশংসা, ‘‘ও এমন এক জন বোলার, যাকে ঘুম থেকে তুলে বল করতে বললেও ঠিক জায়গায় বল ফেলবে। উইকেট নেওয়াটা একটা শিল্প। বুমরা সেই শিল্প আয়ত্ত্ব করে ফেলেছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement