ইডেনে নারিন। ড্রেসিংরুমে। ছবি: কৌশিক সরকার।
প্রশ্ন: টোনি কোজিয়ারের সঙ্গে আলাপ ছিল?
নারিন: ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ জুড়ে ওঁকে কে না চিনত!
প্র: কিন্তু আপনি তো আধুনিক সময়ের ক্রিকেটার। কোজিয়ারের চলে যাওয়া কি আপনার মনকে আদৌ অসাড় করে?
নারিন: উনি এমন একজন লেজেন্ড যে কেউ যদি বলে আমি ওঁর কমেন্ট্রি শুনিনি বা ওঁকে চাক্ষুষ দেখিনি তা হলে আমি একটা কথাই বলতে পারি— ব্যাড লাক।
প্র: আপনার দেশ বিশ্বক্রিকেটে পরপর দুটো টুর্নামেন্ট জিতল। অনূর্ধ্ব ১৯ আর আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই স্বাদটা কেমন?
নারিন: আমাদের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের দায়িত্ব আরও বাড়ল। অন্য ফর্ম্যাটগুলোতেও এ বার আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে।
প্র: ইডেনে ব্রেথওয়েট যখন শেষ ওভারে মায়াবী ছক্কাগুলো মারছিলেন আপনি তখন কোথায় ছিলেন?
নারিন: আমার টিভিতে ফাইনাল দেখা হয়নি। তখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্লেনে। পারিবারিক মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ফিরছিলাম।
প্র: আর তার আগে? যখন টিম জাঁকিয়ে জিতছে?
নারিন: (মুখ গম্ভীর হয়ে গেল) তখন আমি চেন্নাইতে।
প্র: বোলিং সংশোধন প্রণালীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন?
নারিন: হুঁ (মুখ নাড়িয়ে)।
প্র: কেকেআর সমর্থকদের সকলের আকুল প্রশ্ন আপনার চোটের অবস্থা কেমন?
নারিন: বেটার।
প্র: ধরা যায় পরশু পুণের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন?
নারিন: আশা তো রাখছি।
প্র: নিজের অন্ধকার যে সময়টা গেল সেটার কথা ভাবলে কী মনে হয়?
নারিন: আমার কোনও অন্ধকার সময় ছিল না। আমি ঠিকই ছিলাম। হঠাৎ একটা প্রতিবন্ধ এসে হাজির হয়।
প্র: কিন্তু সেটা তো বড় পরীক্ষাও ছিল?
নারিন: ছিল। টাফ সময় ছিল। যা থেকে বেরোবার জন্য প্রচুর সাহস দরকার। রিয়াল গাটস চাই।
প্র: এটা তো একটা বিশাল পতন। আইপিএলে আপনাকে নিয়ে এই যে এত প্রশংসার স্তূপ— মিস্ট্রি বোলার, মিস্ট্রি বোলার! সেখান থেকে ধুম করে নীচে ধাক্কা। পতনই বলা যায়। সামলালেন কী করে?
নারিন: পরিবার পাশে ছিল। স্ত্রী পাশে ছিল। বন্ধুরা ছিল। আর অবশ্যই কেকেআর।
প্র: ক্রিকেট সার্কিটে সাধারণ ধারণা হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড আপনাকে নির্বাসন থেকে ফেরাতে কিছুই করেনি। যা কিছু উদ্যোগ সব নিয়েছিল কেকেআর। আপনি কী মনে করেন?
নারিন: কেকেআর আমাকে প্রচুর সাপোর্ট করেছে। দুঃসময়ে পাশে থেকেছে। এটা সত্যি কথা।
প্র: বলা হয়ে থাকে বেঙ্কি মাইসোর আর শাহরুখ খানদের কাছে আপনি খুব স্পেশ্যাল একজন প্লেয়ার। ওঁরা আপনাকে বাড়তি ভালবাসেন।
নারিন: আমার মনে হয়নি যে বাড়তি ভালবাসার জন্য কেকেআর আমার বেলা বাড়তি কিছু করেছে বলে। কেকেআরে আমরা একটা ফ্যামিলি। ফ্যামিলির যে কেউ বিপদে পড়লে গোটা পরিবার একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।
প্র: আইপিএল-এর জাদুকর আপনি। হঠাৎ খবর পেলেন আপনার পৃথিবী ভেঙে খানখান। জানলেন যে আপনার কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি ভাঙে। এখন কি মেরামত করে এসেছেন অ্যাকশনের?
পাশ থেকে কোচ কাম বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞ কার্ল ক্রো বললেন, ‘‘মাইনর কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট আমরা করেছি। আশা করছি সেটাই যথেষ্ট হবে।’’
প্র: এ বারে নারিনের সেরাটা দেখা যায়নি। কবে পুরো ছন্দে ফিরবেন বলে মনে হয়?
ক্রো: বোলিং অ্যাকশনে একটা উল্লেখযোগ্য বদল হয়েছে। তার সঙ্গে ধাতস্থ হতে একটু সময় তো দিতেই হবে।
প্র: নারিন, ইডেন আপনাকে খুব ভালবাসে। সমর্থকের উষ্ণতায় কখনও কি ‘ত্রিনিদাদ’ বলে মনে হয়?
নারিন: ত্রিনিদাদ মনে হয় না ইডেনকে। তবে এখানকার উষ্ণতার খুব আবেদন রয়েছে।
প্র: এত বছর কলকাতা আসছেন। স্থানীয় খাবার-দাবারে অভ্যস্ত হয়েছেন? অন্তত ভারতীয় বাটার চিকেন?
নারিন: আস্তে আস্তে হচ্ছি। আই অ্যাম গেটিং দেয়ার।
প্র: এই যে নতুন অ্যাকশনে এ বার নামলেন। এত লক্ষ চোখ জরিপ করছে, সেই অনুভূতিটা কেমন?
নারিন: (এক মিনিট চুপ করে গেলেন) বললাম তো ইট টেকস আ লট অব গাটস। অপরিসীম সাহস দরকার। প্রচণ্ড মনের জোর থাকা চাই। নইলে সমস্যা আপনাকে গিলে ফেলবে।
প্র: একটা সময় আইপিএলে তর্ক চলত আপনাকে কী ভাবে খেলা উচিত তা নিয়ে। কেউ বলত হাত দ্যাখো। কেউ বলত হাত দেখে খেললে বিভ্রান্ত হবে। তার চেয়ে বরং বল মাটিতে পড়ার পর জাজ করো। এ বার সে সব আলোচনা শোনাই যাচ্ছে না।
নারিন: (চোখ দুটো ওপরে তুলে) হুঁ।
প্র: বলতে চাইছি ব্যাটসম্যানরা এত সব স্ট্রোক তৈরি করে ফেলেছে যে বোলারের সত্যি বিপদ। দশ নম্বর ব্যাটসম্যানও এখন মাথার পিছনে স্কুপ খেলতে জানে। এই পরিস্থিতিতে নিজের অস্ত্রাগারে তো আরও রহস্য ডেলিভারি আনতে হবে। কী ভাবছেন?
নারিন: এতটুকু ভাবছি না। আমার মন্ত্র হল কিপ ইট সিম্পল। যত পারো সহজ রাখো। সাধ্যের মধ্যে রাখো। অহেতুক জটিল করে ফেলো না। তুমি সেটাই করো যেটা তুমি করতে পারো।
প্র: কিন্তু ব্যাটসম্যান এগিয়ে গেলে ভাববেন না?
নারিন: আমি বোলার। ব্যাটসম্যানের কথা ভেবে জীবন চালাব না। আমার জীবন চলবে আমার নিজের ধর্মে। নিজের সামর্থ্যে। আমি নিজের কথা বেশি ভাবব। ওদের কথা নয়।
প্র: গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে আপনার দারুণ বোঝাপড়া রয়েছে। এত ক্যাপ্টেনের অধীনে খেলেছেন। আপনার দেখা সেরা ক্যাপ্টেন কি গম্ভীরকেই বলবেন?
নারিন: এক এক জন ক্যাপ্টেন এক এক রকম। আলাদা করে কাউকে সেরা বাছব না। তবে গম্ভীর খুব ভাল ক্যাপ্টেন। দু’বার ট্রফি দিয়েছে। ও প্লেয়ারদের মোটিভেট করতে জানে। সহজে হাল ছেড়ে দেয় না। প্রচণ্ড লড়াই করতে পারে। আমার ওর ক্যাপ্টেন্সি খুব পছন্দ।
প্র: কেকেআরের যা অবস্থা বাকি চারটে ম্যাচের দুটোতে জিততেই হবে। বাকি ম্যাচগুলোয় নিজের ভূমিকা কিছু ভেবেছেন !
নারিন: ভাল বল করতে চাই। ফিট থাকতে চাই অবিরাম। চাই কেকেআর ট্রফি জিতুক আর আমার যেন তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।