আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে বল ক্লিয়ার করছেন সন্দেশ। ছবি-টুইটার থেকে।
এক সময়ে কলকাতার একাধিক ক্লাবে ট্রায়াল দিতে এসেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিভিশনের ক্লাবও তাঁকে দলে নিতে চায়নি। সেই সন্দেশ জিঙ্ঘান এখন দেশের সব থেকে দামি ডিফেন্ডার। তাঁকে দলে পেতে লড়াই চলে সেরা ক্লাবগুলির মধ্যে।
কেরল ব্লাস্টার্স ছেড়ে এ বার এটিকে-মোহনবাগানের রক্ষণ সামলাচ্ছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর আলোচনা তাঁকে নিয়ে। ৬৩০ দিন পরে আইএসএল-এ খেললেন তিনি। দেশের জার্সিতে শেষ বার খেলেছিলেন গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর। ২০২২ বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সন্দেশ। ভারতের রক্ষণে আক্রমণের ঝড় তুলেও কাতার গোল করতে পারেনি। কাতারের আক্রমণকে আটকে দিলেও সেই ম্যাচেই চোট পেয়ে এক বছরের বেশি সময় তাঁকে মাঠের বাইরে কাটাতে হয়।
অবশেষে নামলেন গতকাল। কেমন লাগল শিষ্যের খেলা? জাতীয় দলের প্রাক্তন সহকারী কোচ স্ট্যানলি রোজারিও বলছিলেন, “চোট সারিয়ে উঠেই সেরাটা দেওয়া সম্ভব নয়। আরও কয়েকটা ম্যাচ খেললে সন্দেশ ছন্দ ফিরে পাবে বলেই মনে হয়। ও লড়াকু ফুটবলার। খুবই প্রতিভাবান।”
আরও পড়ুন: আইপিএলে কপিলের হিরো কে জানেন?
যখন একের পর এক ক্লাব বাতিল করে দিচ্ছে সন্দেশকে, তখন ভাইচুং ভুটিয়ার ক্লাব ইউনাইটেড সিকিম সুযোগ করে দেয় বড় চেহারার ডিফেন্ডারকে। কী ভাবে সুযোগ পেয়েছিলেন সন্দেশ? স্মৃতির পাতা উল্টে স্ট্যানলি বলছিলেন, “আমি তখন সিকিমের কোচ। তখন সন্দেশের বয়স খুব কম ছিল। পঞ্জাব থেকে বেশ কয়েকটি ক্লাবের ট্রায়াল দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ইউনাইটেড সিকিমে এসেছিল। ওর লম্বা, চওড়া চেহারার জন্য প্রথম দর্শনেই ভাল লেগে গিয়েছিল। ট্যাকল ভাল ছিল, শূন্যেও বেশ শক্তিশালী ছিল।”
সেই সময়ে ইউনাইটেড সিকিম দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে প্রথম ডিভিশনে ওঠার জন্য লড়ছিল। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, সন্দেশকে দলে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ প্রথম ডিভিশনে ওঠার জন্য সেরা প্লেয়ারদের দরকার ছিল তাদের। ক্লাব কর্তৃপক্ষের সেই ‘সেরা’র তালিকায় ছিলেন না সন্দেশ। তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য ভাইচুংয়ের কাছে আবেদন করেন স্ট্যানলি। তিনি বলছিলেন, “ভাইচুংকে বলেছিলাম, ওকে রেখে দাও। সন্দেশ নিজেও ভাইচুংকে বলেছিল, আমার টাকাপয়সা এখনই লাগবে না। আমি শিখতে চাই।”
সন্দেশের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন ভাইচুং। সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হত তাঁকে। স্ট্যানলি বলছিলেন, “এখন দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার সন্দেশ। আর আমিই ছিলাম ওর প্রথম কোচ, এটা ভেবেও বেশ গর্ববোধ হয়।”
আরও পড়ুন: হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট কতটা গুরুতর? অবশেষে খোলসা করলেন হিটম্যান
সন্দেশকে দলে পেয়ে এটিকে-মোহনবাগান সমর্থকরাও খুশি। তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য রক’। ডার্বিতে মোহনবাগান রক্ষণের সামনে তিনি প্রাচীর তুলে দেবেন, এটাই প্রত্যাশা সমর্থকদের।