জামসেদপুরের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টায় রয় কৃষ্ণ। ছবি আইএসএল।
প্রথম তিন ম্যাচে একটাও গোল না খাওয়া দল হঠাৎ দু’গোল খেয়ে বসায় তার রক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠল। সোমবার তিলক ময়দানে জামশেদপুর এফসি-র কাছে ১-২ গোলে হারতে হল এটিকে মোহনবাগানকে। তবে রক্ষণ নিয়ে চিন্তিত নন এটিকে মোহনবাগান কোচ আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস।
জামশেদপুরের দু’টি গোলই আসে কর্নার থেকে। দু’টি গোলই করেন নেরিজাস ভাল্সকিস। তিনি দ্বিতীয় গোলের সময় কার্যত ‘আনমার্কড’ ছিলেন। এ ছাড়াও এ দিন এটিকে মোহনবাগান রক্ষণকে আগের তিন ম্যাচের তুলনায় দুর্বল লেগেছে। তারকা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্ঘানও ছন্দে ছিলেন না।
এ সব সত্ত্বেও স্প্যানিশ কোচ হাবাস ম্যাচের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ডিফেন্সের কোনও গলদ ছিল বলে মনে হয় না। দুটো গোলই হয়েছে সেট পিস থেকে। এই প্রথম সেট পিসে গোল খেলাম। এটা দুর্ঘটনা বলতে পারেন। ওদের লম্বা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি, সেটাও একটা কারণ হতে পারে”।
সেট পিসে গোল খাওয়া নিয়ে তিনি যে খুব একটা দুশ্চিন্তায় নেই, স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, “গত বছর আমার দল কর্নার থেকে একটা গোল খেয়েছিল। আজ দুটো। মনে হয় না সেট পিসে গোল আটকানোর ব্যাপারে আমাদের খুব একটা খামতি আছে। যেটুকু রয়েছে, ঠিক করে নিতে হবে। এটা এমন কিছু চিন্তার বিষয় নয়।”
আরও পড়ুন: ভাল্সকিসের দাপটে ম্লান কৃষ্ণ, প্রথম হার এটিকে-মোহনবাগানের
এডু গার্সিয়া এ দিন চোট সারিয়ে ফিরলেও চোটের তালিকায় যুক্ত হলেন আরও এক বিদেশি জাভি হার্নান্ডেজ। ম্যাচের পরে সে কথা জানিয়ে দিলেন হাবাস। ডেভিড উইলিয়ামসও সেরে ওঠেননি। হার্নান্ডেজ না খেলায় এ দিন কার্ল ম্যাকহিউকে মাঝমাঠ সামলাতে হয়। অন্য দিনের মতো রক্ষণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়নি তাঁকে। ফলে এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্সকে এ দিন বেশ কিছুটা দুর্বল লেগেছে। জাভির অভাবে যে ভুগেছে দল, তা স্বীকার করে নিয়ে হাবাস বলেন, “জাভি না খেলায় মাঝমাঠে একটু সমস্যা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যারা মাঝমাঠে খেলেছে, তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলেছে। চোটের জন্য জাভি, উইলিয়ামসকে নামানো সম্ভব নয়। কিছুই করার ছিল না”।
তবে একটা হারেই ভেঙে পড়েননি দু’বারের হিরো আইএসএল খেতাবজয়ী কোচ। বললেন, “একটা ম্যাচ হেরে গিয়েছি বলে তো দুনিয়া শেষ হয়ে যায়নি। আরও ম্যাচ আছে। এর পরে জিতব।”
তাঁর দল মূলত কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর ফুটবল খেলে, এ কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে হাবাস বলেন, “কাউন্টার অ্যাটাক তো খেলারই অঙ্গ। আমরা প্রতিপক্ষ ও তাদের তৈরি করা পরিস্থিতি অনুযায়ী কাউন্টার অ্যাটাকে খেলি। যখন প্রয়োজন হয়, তখনই কাউন্টার অ্যাটাকে উঠি। প্রতিপক্ষ যদি সব সময় লং বলে ফুটবল খেলে, তখন কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার কোনও উপায় থাকে না। বুঝি না, অনেকে কেন বলে এটিকে মোহনবাগান শুধুই কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর ফুটবল খেলে।”
আরও পড়ুন: ওয়ান ডে সিরিজে হার, কোন মন্ত্রে প্রায় একই দলে টি২০ সিরিজে বাজিমাত কোহালিদের
অন্য দিকে জামশেদপুর এফসি-র স্কটিশ কোচ ওয়েন কোয়েল মরশুমের প্রথম জয় পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। বলেন, “অপরাজিত, শীর্ষে থাকা দলকে হারাতে পারলে আত্মবিশ্বাস আসে। আমরা যা খেলেছি, যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছি। আধিপত্য আমাদেরই ছিল। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে”।
তবে তাঁর অভিযোগ, রয় কৃষ্ণর গোলটা পরিস্কার অফ সাইড ছিল। তিনি বলেন, “এই নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই, রয় কৃষ্ণা অফ সাইড থেকে গোলটা করেছে। এর আগেও রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছি। তাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। তবে সৌভাগ্য যে, আজকের ভুলটা আমাদের জয় আটকাতে পারেনি”।
সেট পিসের সুযোগ যে কোনও মতে হাতছাড়া করা যাবে না, সেই নির্দেশ এই ম্যাচের আগে দলের ছেলেদের সাফ দিয়ে রেখেছিলেন বলে জানালেন কোয়েল। বলেন, “ওদের ডিফেন্স খুবই ভাল। তাই সেট পিসে ওদের জব্দ করা ছাড়া উপায় ছিল না”।