কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালেন এটিকে মোহনবাগানের মনবীর ছবি - আইএসএল
অন্যদিনের মত শনিবার রাতেও জলন্ধরের ধুরা গ্রামের বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে ভিড় জমেছিল। হুইলচেয়ারে বসে টিভির পর্দায় এটিকে মোহনবাগান বনাম ওডিশা এসি-র ম্যাচটা খুব মন দিয়ে দেখছিলেন পঞ্জাবের এক প্রাক্তন ফুটবলার৷ ছেলের জোড়া গোলে এটিকে মোহনবাগান জিতেছে। তাই হাসি ফুটে উঠল ওঁর মুখে। তবে সেই ছেলের কাজের জন্যই ফের কাঁদলেন। তবে এই চোখের জল আনন্দের। ছেলের জন্যই আবার গর্বিত হয়ে কাঁদলেন ৫১ বছরের কুলদীপ সিং৷ কারণ, কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন ওঁর ছোট ছেলে মনবীর সিংহ। আসলে সবুজ মেরুন স্ত্রাইকারের একটা টুইট গোটা দেশের কাছে পঞ্জাব তনয়কে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে দেশের একাধিক প্রথমসারির ক্রীড়াবিদ ও সেলিব্রেটিরা যখন তাঁদের বার্তায় ফাঁক রেখে ‘ঐক্যবদ্ধ’ লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছেন, ঠিক তখনই ২৫ বছরের যুবকের টুইটার বার্তা বেশ ব্যাতিক্রমী।
তাই গর্বিত ওঁর বাবা। রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “মনবীর যতই ভারতীয় ফুটবলে পরিচিতি গড়ে তুলুক ও যে চাষির ঘরের ছেলে সেটা ভুলে যায়নি। সেইজন্য এই টুইট করেছে। একটা সময় পঞ্জাব বিদ্যুৎ পর্ষদের চাকরি করলেও আদতে আমরা তো কৃষক। বছরের পর বছর আমরা দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি। মনবীর ওর পূর্ব পুরুষদের ভোলেনি। এই টুইট ওর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলতে পারেন। অনেক প্রথমসারির ক্রীড়াবিদ ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেও মনবীর ওর গ্রাম ও কৃষক ভাইদের ভোলেনি। স্ট্রাইকার হিসেবে গোল করা যেমন ওর কাজ, তেমনই মানুষ হিসেবে ওর সামাজিক কর্তব্য আছে। সেটা পালন করার জন্য ওর জন্য গর্বিত।”
“দেহ সিওয়া বারু মহি”। দশম শিখ গুরু গবিন্দ সিংহ এই স্তবটি রচনা করেছিলেন। এর প্রথম লাইনের অর্থ, “হে প্রিয় ঈশ্বর, আমার অনুরোধ দয়াকরে মঞ্জুর করুন। আমি যেন কখনও সৎ কাজ থেকে বিরত না হই।” সতেরো শতকে ব্রজ ভাষায় লেখা এই গান শিখ সম্প্রদায় বন্দনাগীতি হিসেবে ব্যবহার করেন। আর সেই গান টুইটারে দিয়ে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালেন এটিকে মোহনবাগানের এই স্ট্রাইকার।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া কৃষকদের সম্মান জানিয়ে মনবীর হ্যাসট্যাগে লিখলেন, ‘স্ট্যান্ড উইথ ফার্মারস’, ‘কিষাণ মজদুর একতা জিন্দাবাদ’ ও ‘নো ফার্মারস, নো ফুড’। তাঁর এমন ভাবনাচিন্তাকে এটিকে মোহনবাগান ড্রেসিংরুমও সাধুবাদ জানিয়েছে।
ডার্বি যুদ্ধের গোলদাতা। তাই হেড কোচ আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস তাঁর প্রতি ভরসা দেখাচ্ছেন। তাই তো গত ম্যাচে জোড়া গোলের নায়ক বেশ উচ্ছ্বসিত। বলছিলেন, “ওডিশার বিরুদ্ধে দুটো গোলের মধ্যে প্রথম গোলকেই এগিয়ে রাখব। মহমেডানের হয়ে কলকাতা লিগ খেলার সময় আর্মি একাদশের বিরুদ্ধে এমন গোল করেছিলাম। প্রি-সিজনে অনুশীলন করার সময় এমন গোল করেছি। তবে আমাকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। কোচ সেই নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আরও কোঠর পরিশ্রম করতে হবে।”
এই মুহূর্তে ১৫ ম্যাচে ৩০ পয়েণ্ট নিয়ে লিগ তালিকার দুই নম্বরে সবুজ মেরুন। প্লে-অফ নিশ্চিত। তবে শীর্ষে উঠতে চায় হাবাসের ছেলেরা। এরমধ্যে আবার আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে মাঠে নামবে এটিকে মোহনবাগান। তাই রবিবার সন্ধেবেলা চুটিয়ে অনুশীলন করালেন স্প্যানিশ কোচ। প্রিয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে মনবীর বলে দিলেন, “গতবার ওদের হারালেও এই ম্যাচটা নতুন। তাই আমাদের সাবধান হতে হবে।”