অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের (বাঁ দিকে) সঙ্গে নীতীশ রেড্ডি। ছবি: এক্স।
মঙ্গলবার আইপিএলে হায়দরাবাদের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই টুইটটা করেছিলেন ‘বিদ্রোহী’ ক্রিকেটার হনুমা বিহারি। লিখেছিলেন, “নীতীশের একটা ঝলক শুধু দেখলেন। ওর জন্য বিনিয়োগ করুন। শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ক্রিকেটে নয়, ও ভারতের আগামী দিনের তারকা। এক জন ব্যাটার যে মিডিয়াম পেস বল করতে পারে। বিরল প্রতিভা!” পরে আবার একটি টুইট করে লেখেন, “ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী সুপারস্টার।”
মঙ্গলবারের ম্যাচের পর এ ভাবেই আচমকা আলোচনায় চলে এসেছেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। আইপিএলে প্রতি বছরই কোনও না কোনও ক্রিকেটারকে আবিষ্কার হিসাবে ধরা হয়। এ বার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন নীতীশ। ট্রেভিস হেড, অভিষেক শর্মা, এডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেন-সমৃদ্ধ হায়দরাবাদ ব্যাটিং যখন ভেঙে পড়েছে, তখন দলকে একার হাতে টানেন নীতীশ। ৩৭ বলে ৬৪ রান করেন। আর কেউ ২৫-ও পেরোতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটিও জেতে হায়দরাবাদ। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কে এই নীতীশ?
ছোটবেলা থেকেই বিরাট কোহলিকে নিজের আদর্শ হিসাবে মানেন নীতীশ। অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে টপ অর্ডারে খেলেছেন। ২০১৭-১৮ মরসুমে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে ইতিহাস তৈরি করেন। সেই প্রতিযোগিতায় ১২৩৭ রান করেন ১৭৬.৪১ গড়ে, যা এখনও প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ। একটি ত্রিশতরান, দু’টি শতরান, দু’টি অর্ধশতরান করেন। নাগাল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ৪৪১ রান করেন। ২০১৮ মরসুমে বোর্ড তাঁকে ‘অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগের সেরা ক্রিকেটার’ পুরস্কার দেয়। সেই অনুষ্ঠানে কোহলির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা আটকে দেন।
তবে টপ অর্ডার ব্যাটিং এবং বোলিং নীতীশকে শারীরিক চাপে ফেলছিল। তখনই আসল কাজটা করেন অন্ধ্রের কোচ নির্মল কুমার। বলেছেন, “অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই ও আমার অধীনে খেলছে। টপ অর্ডারে ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে ওপেন দুটোই করতে পারে। কিন্তু সেই মুহূর্তে বড্ড চাপ পড়ে যাচ্ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিই ওকে মিডল অর্ডারে খেলানোর, যাতে বোলিংয়ে ফোকাস বাড়াতে পারে।”
লোয়ার অর্ডারে নীতীশের ব্যাটিং আহামরি না হলেও, পেসার অলরাউন্ডারের তকমা তাঁকে ২০২০-তেই সিনিয়র দলের ছাড়পত্র এনে দেয়। ২০২১ থেকে তিনি অন্ধ্রের সব ফরম্যাটেই খেলছেন। গত দু’টি রঞ্জি ট্রফিতে ২৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতেও গত দু’টি রঞ্জিতে ভাল খেলেছেন। গত মরসুমে ৩৫০-এর বেশি রান করেছেন। অন্ধ্র দলের অন্যতম সেরা ফিট ক্রিকেটারও তিনি। স্লিপে ক্যাচ ধরতে পারদর্শী। এখনও পর্যন্ত ১৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫৬৬ রান করেছেন এবং ৫২টি উইকেট নিয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেটে ২২টি ম্যাচে ৪০৩ রান এবং ১৪টি উইকেট রয়েছে। আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১০৬ রান করলেও কোনও উইকেট পাননি।
নীতীশের মধ্যে অনেক গুণই রয়েছে। কোচ নির্মলের কথায়, “যে দায়িত্ব দিই সেটাই পালন করে। যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারে। ইয়র্কার, বাউন্সার এবং ডেথ ওভারে সমান ভাবে বল করতে পারে। কিন্তু কঠিন সময়ে রান করাটাই নজর কেড়ে নিয়েছে। রঞ্জি কোয়ার্টারে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে দলের ধস বাঁচিয়ে দেয়।”
নীতীশের বাবা মুতিয়ালা জানিয়েছেন, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে হার্দিকের সঙ্গে কথোপকথন তাঁর ছেলেকে অলরাউন্ডার হতে আরও উৎসাহ দেয়। নীতীশের উঠে আসায় বাবার অবদানও কম নয়। তিনি হায়দরাবাদে একটি সংস্থায় চাকরি করতেন। হঠাৎই উদয়পুরে বদলির ফরমান আসে। হিন্দি না জানায় তিনি যেতে রাজি ছিলেন না। তার পর ভেবেচিন্তে নীতীশের ক্রিকেটজীবনের কথা ভেবে বিশাখাপত্তনমেই রয়ে যান। তখনও নীতীশ রাজ্যের হয়ে খেলেননি। তাতেও ছেলের প্রতি বাবার ছিল অগাধ বিশ্বাস।
সেই নীতীশ মঙ্গলবার ম্যাচ জিতিয়ে বলেছেন, “দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভাল বিষয়। নিজের উপর বিশ্বাস রাখার দাম পেয়েছি। জানতাম, বিপক্ষের স্পিনারেরা কোনও না কোনও সময় আসবে। ওদের বিরুদ্ধেই আক্রমণ করতে চেয়েছিলাম। দলের হয়ে এ ভাবেই খেলে যেতে চাই।”
হায়দরাবাদের নতুন প্রতিভার প্রশংসা করেছেন দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। বলেছেন, “গত সপ্তাহেই ওর অভিষেক হয়েছিল। আজ দারুণ খেলেছে। সরাসরি ওকে টপ অর্ডারে খেলতে পাঠানো হয়েছিল। কাজটা সহজ না হলেও ও অনায়াসে মানিয়ে নিয়ে রান করেছে। ফিল্ডিংও দারুণ। তিন ওভার বল করেছে। ওর ব্যাটিংয়ের জন্যই ১৮০ তুলতে পেরেছি আমরা।”
গত বছর হায়দরাবাদের কোচ ছিলেন ব্রায়ান লারা। এ বার তিনি ধারাভাষ্যকার। সেই লারা বলেছেন, “গত বছরই ওকে দেখেছি। অনেক প্রতিভা রয়েছে ওর মধ্যে। ব্যাট, বল দু’ভাবেই ও অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করে। ওকে খেলানোর ব্যাপারে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু লিগ তালিকায় যেখানে ছিলাম সেখানে অনভিজ্ঞ এক জনকে খেলানোর ঝুঁকি নিতে পারিনি। এ বার ওকে খেলতে দেখে দারুণ লাগছে। হায়দরাবাদ দলে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলল।”