আইপিএল ট্রফি। —ফাইল চিত্র।
এ বারের আইপিএলে বেশ কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন। দেশের জার্সি পরার সুযোগ হয়নি এখনও। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেই জায়গা করে নিয়েছেন আইপিএলের দলে। সেই সব ক্রিকেটারই এ বারের আইপিএল মাতিয়ে দিয়েছেন। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ঘরোয়া ক্রিকেটার এ বারের আইপিএলে নজর কাড়লেন।
রিয়ান পরাগ: অসমের এই ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। ৭ ম্যাচে ৩১৮ রান করেছেন তিনি। কমলা টুপির লড়াইয়ে বিরাট কোহলির পরেই রয়েছেন রিয়ান। ব্যবধান মাত্র ৪৩ রানের। রিয়ান যে ভাল ব্যাট করেন, সেটা গত কয়েকটি আইপিএলে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এ বারের আইপিএলে রিয়ান অনেক বেশি ধারাবাহিক। রাজস্থানের লিগ তালিকায় শীর্ষে থাকার নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর। দলে চার নম্বর জায়গাটা পাকা করে ফেলেছেন রিয়ান। তবে তাঁর সমালোচনাও হয়েছে। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিংহ রিয়ান সম্পর্কে বলেন, “রিয়ান প্রতিভাবান। ও শুরুটা ভাল করছে। কিন্তু ম্যাচ কী ভাবে জেতাতে হয়, সেটা জস বাটলারকে দেখে শেখা উচিত। শেষ পর্যন্ত ক্রিজ়ে থাকতে হবে। তবেই ম্যাচ জেতাতে পারবে।”
মায়াঙ্ক যাদব: এ বারের আইপিএলে সব থেকে বেশি আলোচনা হয়েছে মায়াঙ্ককে নিয়ে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের এই পেসার ১৫৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেছেন। নিয়মিত দেড়শো কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বল করছেন দিল্লির এই পেসার। তাঁকে নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। এখনও পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। তার মধ্যে একটি ম্যাচে মাত্র এক ওভার বল করেই মাঠ ছাড়তে হয়। বাকি দু’টি ম্যাচেই সেরা তিনি। নিয়েছেন ৬টি উইকেট। চোটের কারণে খুব বেশি না খেললেও মায়াঙ্ককে আগামী দিনে ভারতের জার্সিতে দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। মায়াঙ্কের মতো পেসারদের উঠে আসার নেপথ্যে অবশ্যই রয়েছেন ঘরোয়া দলের কোচেরা। বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বললেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটের অবদান তো অবশ্যই রয়েছে। না হলে এমন পেসারদের তুলে আনা সম্ভব হত না। এক দিনে পেসার তৈরি করা যায় না। শুধু তো গতি নয়, লাইন, লেংথ ঠিক রাখতেও শিখতে হয়। সেটার জন্য বিশেষ অনুশীলন প্রয়োজন। ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচেরা সেটাই করান।”
মায়াঙ্ক যাদব। —ফাইল চিত্র।
অভিষেক শর্মা: সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ওপেনার গত মরসুমেও ভাল খেলেছিলেন। তাঁর সেই আত্মবিশ্বাস এ বারের প্রতিযোগিতাতেও দেখা যাচ্ছে। অভিষেকের স্ট্রাইক রেট ১৯৭.১৯। তরুণ পঞ্জাব তনয় ট্রেভিস হেডের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন। এখনও পর্যন্ত দু’টি ম্যাচে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। দলের বড় রান তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেন অভিষেক। ছ’ম্যাচে ২১১ রান করেছেন তিনি। একটি ম্যাচে অর্ধশতরান করেছেন।
আশুতোষ শর্মা: একার দাপটে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন আশুতোষ। মধ্যপ্রদেশে জন্ম হলেও তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন রেলওয়েজ়ের হয়ে। এ বারের আইপিএলে ৪ ম্যাচে ১৫৬ রান করা এই ক্রিকেটার গুরুত্বপূর্ণ সময় দলকে জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু দলে ফিনিশারের ভূমিকায় খেলা এই তরুণ ব্যাটারকে শেষ পর্যন্ত খেলার চেষ্টা করতে হবে। না হলে দলকে জিতিয়ে ফেরা হবে না। আর তিনি আউট হয়ে গেলে পঞ্জাবের জয়ের আশাও শেষ হয়ে যায়।
শশাঙ্ক যাদব: পঞ্জাব কিংস দলে আশুতোষের সঙ্গী শশাঙ্ক। ছত্তীসগঢ়ের এই ক্রিকেটারকে ‘ভুল’ করে কিনেছিল পঞ্জাব। কিন্তু এখন সেই ক্রিকেটারই দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে গিয়েছেন। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২৯ বলে ৬১ রান করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি। আশুতোষকে সঙ্গে নিয়ে ২০০ রান তাড়া করে জিতিয়েছিলেন দলকে। শেষ চার ওভারে ৫০ রান করে জিতিয়েছিলেন শশাঙ্ক। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেও দ্রুত রান তুলছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। ফলে দলকে জেতাতে পারেননি। সৌরাশিসের মতে, “ঘরোয়া ক্রিকেটারেরা আইপিএলে ভাল খেলছেন। রান করছেন, উইকেট নিচ্ছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, অভিজ্ঞতায় তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের থেকে পিছিয়ে। আইপিএল সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জায়গা।”