বিদ্ধ: উৎসবের জায়গায় নাইটদের বিমর্ষ সব মুখ।
কী বলা হবে একে?
আইপিএলের নতুন রূপকথা? নাকি গলি থেকে রাজপথে উত্থানের আর রোমহর্ষক কাহিনি?
রাহুল অজয় ত্রিপাঠীর যে ক্রিকেটের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি টুর্নামেন্টে খেলার কথাই ছিল না! আইপিএলের রেকর্ড বইতে হয়তো লেখা আছে, এ বছরের নিলাম থেকে মাত্র দশ লক্ষ টাকায় মহারাষ্ট্রের এই ক্রিকেটারকে কিনেছিল পুণে সুপারজায়ান্ট। আসলে তো সেই তথ্যটার পিছনেও ছিল চূড়ান্ত নাটক আর রোমাঞ্চ। পুণের কিছু উৎসাহী ক্রিকেট কর্তা না থাকলে নিলামেও থাকার সৌভাগ্য হয় না ত্রিপাঠীর।
কেকেআর কর্তাদের যেমন সৌরভ-উত্তর যুগে বার বার শুনতে হয়েছে, বাংলা থেকে কোনও ক্রিকেটার কেন কলকাতার আইপিএল দলে নেই, সে রকমই অবস্থা হয়েছিল পুণে কর্তাদের। তাঁদেরও স্থানীয় কয়েক জন বলেন, পুণে থেকে কেন কাউকে নিচ্ছেন না আপনারা? পুণে টিম ম্যানেজমেন্ট পাল্টা প্রশ্ন করেছিল, আছে কে নেওয়ার মতো?
নজরে: ধোনি রান না পেলেও জিততে সমস্যা হল না। এএফপি
তখনই রাহুল ত্রিপাঠীর নাম বলেন পুণের স্থানীয় ক্রিকেট কর্তারা। স্থানীয় কর্তাদের জোরাজুরিতে পুণের তিন জন ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি বিশেষ ট্রায়ালের ব্যবস্থা হয়। সেই তিন জনের মধ্যে এক জন ছিলেন ত্রিপাঠী। ট্রায়ালে দেখে তাঁকেই ভাল লাগে পুণের কোচ স্টিভন ফ্লেমিংয়ের। দ্রুত তাঁকে নিলামে তোলার ব্যবস্থা হয় এবং মাত্র ১০ লক্ষ টাকার বেস প্রাইসে অমূল্য রত্ন পেয়ে যায় পুণে। নিলামে তাঁর জন্য ‘বিড’ করা দূরে থাক, রাহুল ত্রিপাঠীর নামও কেউ শুনেছিল কি না সন্দেহ। যদিও তত দিনে মহারাষ্ট্রের হয়ে বেশ কিছু ভাল ইনিংস খেলে ফেলেছিলেন তিনি। তার মধ্যে বিজয় হজারে ট্রফিতে বাংলার বিরুদ্ধে ৭৪ বলে ৯৫ রানের ইনিংসও ছিল।
আরও পড়ুন: প্লে-অফের আগে হয়তো উথাপ্পা নেই
সেদিন বিজয় হজারেতে নিজে ভাল খেললেও বাংলা তিনশোর ওপর রান তাড়া করে জিতেছিল। বুধবার রাতে নিজে জিতলেন, দলকেও জেতালেন। ৫২ বলে ৯৩ রানের ইনিংস দেখে উঠে পুণে থেকে রাহুলের শুভানুধ্যায়ী ক্রিকেট কর্তারা বলছিলেন, ‘‘নিলামের সময় কেউ ওর নাম শোনেনি। কিন্তু আমরা জানতাম। এ বছরের শুরুতেই দু’টো স্থানীয় সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টে ও দু’বার ছয় বলে ছয় ছক্কা মেরেছে।’’
নারাইন-অস্ত্র কাজে লাগল না নাইটদের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সেই ছয় ছক্কার অভিযান দেখেই পুণের অনামী ক্রিকেট কর্তারা ঠিক করেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। ধোনি অধিনায়ক না থাকলেও তাঁর কাছেও বার্তা পাঠানো হয়। ট্রায়ালে পাশ করে নিলামে ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে এখন কোটি টাকার ফসল দিচ্ছেন রাহুল ত্রিপাঠী। যাঁর বাবা সেনাবাহিনীর কর্নেল। ছেলে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছে। পুণেতেই বাড়ির পাশে যুদ্ধে আহত সেনাদের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার। যুদ্ধে কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে সোজা দাঁড়াতে পারেন না। সেখানে খুব ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে যান রাহুল। ব্যাট হাতে মাঠের মধ্যে তিনি এ বারের আইপিএলে ‘মোস্ট অ্যাডভেঞ্চারাস ক্রিকেটার’-এর পুরস্কার থাকলে পেতে পারতেন। কিন্তু মাঠের বাইরে পার্টি বা লেট নাইটের কোনও গল্প পাওয়া যাবে না। কলকাতায় পৌঁছেও ধোনির ঘরে ছুটে যান। আর ধোনি ক্লাস নেওয়ার মতো তাঁকে বুঝিয়ে চলেছেন, মাটিতে পা রেখে চলা কত প্রয়োজনীয়।
পুণের যে ক্লাবে তিনি খেলেন, সেখানে আজ পর্যন্ত কখনও কোনও অভিযোগ জমা পড়েছে বলে শোনা যায়নি। কখনও দেরিতে প্র্যাকটিসে এসেছেন বলে কোচের ধমক খাননি। হালফিলে পুণের ক্রিকেট বলতে ছিল কেদার যাদব। দশম আইপিএল উপহার দিয়ে গেল এক মিষ্টি মুখকে।
পুণের নতুন ফুল হয়ে ইডেনে ফুটলেন রাহুল ত্রিপাঠী। ফুটলেন কেকেআর-কে কাঁটায় বিদ্ধ করে!