নায়ক: বৃহস্পতিবার ইডেনে ব্যাটে ঝড় নারাইনের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
সুনীল নারাইনের ‘ফার্স্ট নেম’টা এক কিংবদন্তি ওপেনারের নামে— সুনীল গাওস্কর। ট্যাক্সিচালক পিতা তাঁদের দেশে চার ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারকে খালি মাথায় শাসন করা সানির অসংখ্য ভক্তদের এক জন ছিলেন। কিন্তু কোথায় সানির মতো ব্যাটিং, পুত্র বড় হয়ে হয়ে গেল কি না বোলার!
কে জানত, নারাইন এক দিন তাঁর ‘সুনীল’ নামকরণ সার্থক করার সুযোগ পাবেন! কে জানত বিস্ময় স্পিনার ইডেনে এ বারের প্রথম আইপিএল ম্যাচে হয়ে উঠবেন বিস্ময় ওপেনার! অ্যাকশন নিয়ে ঝামেলার মধ্যেও আইপিএলের সবচেয়ে সফল স্পিনার নারাইন। এ দিনের হিসেব ধরে ৬৯ ম্যাচে সংগ্রহ ৮৭ উইকেট। কিন্তু কে ভেবেছিল, তিনি ব্যাট হাতেও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতবেন!
খোঁজখবর করে দেখা যাচ্ছে, নারাইন টি-টোয়েন্টিতে আগেও ওপেন করেছেন। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে মেলবোর্ন রেনেগেড্স দলের হয়ে একটি ম্যাচে ওপেন করে ১৩ বলে ২১ রান করেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহকারী কোচ সাইমন ক্যাটিচ অস্ট্রেলীয়। বিগ ব্যাশ সম্পর্কে পুরো মাত্রায় ওয়াকিবহাল। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে শাহরুখ খান যে ত্রিনব্যাগো নাইট রাইডার্স টিম কিনেছেন, তাতেও এই কম্বিনেশন রয়েছে। ত্রিনব্যাগো অর্থাৎ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগো। সেই দলেরও প্রধান স্পিনার নারাইন, কোচের নাম সাইমন ক্যাটিচ। ইডেনে নারাইনকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহারের পিছনে ক্যাটিচের হাত থাকলে অবাক হওয়ার নেই।
সে দিন টুইটারে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন নারাইন। এ দিন ইডেনের জয়ধ্বনি হয়ে উঠলেন। করলেন ১৮ বলে ৩৭ রান। চারটি চার, তিনটি বিশাল ছক্কা। প্রথমার্ধে সহজতম ক্যাচ হাতছাড়া করে খলনায়ক হতে হতেও ব্যাট হাতে সংহার তাঁকে সেই নায়কের আসন ফিরিয়ে দিল। গৌতম গম্ভীর ৪৯ বলে ৭২ অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরলেন। উমেশ যাদব তাঁর আগুনে ফর্ম ধরে রেখে প্রাণবন্ত ইডেন উইকেটে চার উইকেট নিলেন। কিন্তু কেকেআরের ৮ উইকেটে জয়ে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকলেন ওপেনার নারাইন। চলতি আইপিএলে কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব অধিনায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দারুণ অধিনায়কত্ব করছেন বলে গত কালই কলকাতায় এসে বলছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। ‘ম্যাড ম্যাক্স’-এর স্মার্ট ক্যাপ্টেন্সি বেসামাল হয়ে পড়ল নাইটদের একটা চালেই। কিংগস ইলেভেন ভাবতেই পারেনি, বলের বিস্ময় ছেড়ে ব্যাট হাতে চমক হিসেবে উদয় হবেন নারাইন!
দু’দিন আগে ইডেনের প্র্যাকটিসে শুরুতে নেটে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারকে। তখন কেউ এটা আন্দাজ করতে পারেনি। এ রকম তো কতই হয়। বোলারদের আগে ব্যাট করিয়ে নাও। পরে যাতে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ ধরে বল করে যেতে পারেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, সে দিন নেট প্র্যাকটিসেই আসলে ওপেনার নারাইনের প্রস্তুতি চলছিল।
নাইট শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নারাইনকে ওপেনার হিসেবে পাঠানোটা যতটা না ছিল ফাটকা, তার চেয়েও বেশি ছিল হোমওয়ার্ক। গম্ভীর এবং রবিন উথাপ্পা আইপিএলের সবচেয়ে সফল ওপেনিং জুটি। নাইটদের প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছেন। দুরন্ত রেকর্ড একসঙ্গে ব্যাট করে। ২০১৪-তে তাঁরা ওপেনিং জুটিতে তুলেছিলেন ১১ ম্যাচে ৪৯০ রান। ২০১৫-তে ১৩ ম্যাচে ৪২২। গত বছর ১৫ ম্যাচে ৫৬৬। সেই জুটিকে এ বারে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর তার কারণ হচ্ছে, ওপরের দিকে ভাল স্ট্রাইক রেট না থাকা। গম্ভীর-উথাপ্পা সফল ওপেনিং জুটি হতে পারেন, কিন্তু তাঁরা সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট থাকা জুটিও।
সে সব অঙ্ক কষেই বিগ হিটার ক্রিস লিন-কে এ বার শুরুতে আনা হয়েছিল। লিন চোটের কারণে বাইরে থাকায় নামানো হল নারাইন-কে। সেই মাস্টারস্ট্রোকে ১৭০ রানও সফল ভাবে তাড়া করা সম্ভব হল। একমাত্র চিন্তা হয়ে থাকল বিশ্রী ফিল্ডিং।
ইডেন বা কলকাতা যদিও ফিল্ডিং নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করবে বলে মনে হয় না। তাদের মুখে একটাই জপমন্ত্র— নারাইন, নারাইন!
স্কোরকার্ড
কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব ১৭০-৯ (২০)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৭১-২ (১৬.৩)
কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব
হাসিম আমলা ক গম্ভীর বো গ্র্যান্ডহম ২৫
মনন ভোরা বো পীযূষ ২৮
মার্কাস স্টইনিস বো নারাইন ৯
ম্যাক্সওয়েল ক উথাপ্পা বো উমেশ ২৫
ডেভিড মিলার ক মণীশ বো উমেশ ২৮
ঋদ্ধিমান সাহা ক ওকস বো উমেশ ২৫
অক্ষর পটেল ক নারাইন বো উমেশ ০
মোহিত শর্মা ক সূর্যকুমার বো ওকস ১০
বরুণ অ্যারন ক গম্ভীর বো ওকস ৪
সন্দীপ শর্মা ন.আ. ০
অতিরিক্ত ১৬
মোট ১৭০-৯
পতন: ৫৩-১ (ভোরা, ৫.১), ৬৬-২ (স্টইনিস, ৭.৪), ৯৭-৩ (আমলা, ১১.৪), ৯৮-৪ (ম্যাক্সওয়েল, ১২.১),
১৫৫-৫ (মিলার, ১৭.৩), ১৫৫-৬ (ঋদ্ধিমান, ১৭.৪), ১৫৬-৭ (পটেল, ১৭.৬), ১৬৯-৮ (মোহিত, ১৯.৫), ১৭০-৯ (বরুণ, ১৯.৬)।
বোলিং: বোল্ট ৪-০-৩৬-০, উমেশ ৪-০-৩৪-৪, ওকস ৩-০-৩০-২, নারাইন ৪-০-১৯-১, পীযূষ ৩-০-৩৬-১, গ্র্যান্ডহম ২-০-১৫-১।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
সুনীল নারাইন ক পটেল বো বরুণ ৩৭
গৌতম গম্ভীর ন.আ. ৭২
রবিন উথাপ্পা বো পটেল ২৬
মণীশ পাণ্ডে ন.আ. ২৫
অতিরিক্ত ১১
মোট ১৭১-২
পতন: ৭৬-১ (নারাইন, ৫.৪), ১১৬-২ (উথাপ্পা, ৯.৬)।
বোলিং: সন্দীপ ৩-০-২৮-০, ইশান্ত ২-০-১৬-০, ম্যাক্সওয়েল ১-০-১৮-০,
বরুণ ২-০-২৩-১, মোহিত ৩-০-৩০-০, পটেল ৪-০-৩৬-১, স্টইনিস ১.৩-০-১৪-০।