সিএসকের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ২৬টি ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। হেরেছে ১৭ বার। জিতেছে আট বার। এক ম্যাচ অমীমাংসিত। সেই পরিসংখ্যান যদিও কোনও প্রভাব ফেলে না ম্যাকালামের ক্রিকেট-দর্শনে।
ভরসা: এ মরসুমের প্রথম ম্যাচ থেকেই রাসেলের ব্যাটে ঝড় দেখার আশায় নাইট সমর্থকেরা। কেকেআর
নতুন মরসুম, নতুন ভাবে গড়ে ওঠা দল। নব আঙ্গিকে সেজে উঠেছে আইপিএলও। যা এখন আর আট দলের প্রতিযোগিতায় আবদ্ধ নেই। বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশ দলের। ১৫তম আইপিএলের প্রথম ম্যাচে আজ, শনিবার মুখোমুখি হতে চলেছে গত বারের দুই ফাইনালিস্ট। চেন্নাই সুপার কিংস ও কলকাতা নাইট রাইডার্স। শেষ বার কেকেআরকে পিছনে ফেলে চতুর্থ বারের মতো কাপ তুলেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তিনি এ বার দলে থাকলেও নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজার হাতে। নাইট শিবিরেও নতুন অধিনায়ক। তিনি শ্রেয়স আয়ার। শনিবারের দ্বৈরথ দুই নতুন নেতার। যাঁরা ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন সম্প্রতি।
শেষ বারের ফাইনালে হারের যন্ত্রণা নাইট শিবিরে এখনও দগদগে। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দফায় দল ছন্দে ফিরে ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেও তৃতীয় বারের মতো ট্রফি হাতে তুলতে পারেনি। তবে কেকেআর কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম প্রতিশোধের চিন্তা করছেন না। ভাল ক্রিকেট উপহার দেওয়াই লক্ষ্য তাঁর দলের। যে কোনও প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভাল হলে গোটা মরসুমের ছন্দ পাওয়া যায়। সেটাই মূল উদ্দেশ্য কেকেআরের। কিন্তু প্রথম ম্যাচে নাইট শিবির পাচ্ছে না তাদের পছন্দের
পেস-বোলিং শক্তিকে।
পাক সফরে রয়েছেন প্যাট কামিন্স। প্রথম পাঁচ ম্যাচ পাওয়া যাবে না তাঁকে। টিম সাউদিও নেই চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে। আনন্দবাজারেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, প্রথম ম্যাচে নিউজ়িল্যান্ডের পেসারকে পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার সাংবাদিকদের পাঠানো প্রশ্নে কেকেআর ডট ইনকে ম্যাকালাম বলেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে সাউদিকে আমরা পাচ্ছি না। নিউজ়িল্যান্ড থেকে ভারতে আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে। উমেশ যাদব রয়েছে। পাওয়ারপ্লেতে ওর পরিসংখ্যান খুবই ভাল। ওকেই ব্যবহার করা হবে নতুন বলে। তার সঙ্গে আক্রমণ সামলাবে শিবম মাভি।’’
উমেশ, মাভির পাশাপাশি আন্দ্রে রাসেলকে ভুলে গেলে চলবে না। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী হয়ে ওঠার পাশাপাশি বল হাতেও তাঁর ইয়র্কার সামলানো সহজ নয়।
ম্যাকালামের মূল ভরসা দলের স্পিন বিভাগ। বলছিলেন, ‘‘প্রথম একাদশে সুনীল নারাইন ও সিভি বরুণ তো আছেই। ওদের বিস্ময় স্পিন সামলানো কঠিন। মহম্মদ নবিও এ বার আমাদের সদস্য। তা ছাড়া নীতীশ রানা ও শ্রেয়স আয়ারও ভাল স্পিন
করাতে পারে।’’
ওপেনিংয়ে কেকেআর কাদের ভাবছে, তা নিয়েও জানতে চাওয়া হয় ম্যাকালামের কাছে। তিনি কারও নাম না নিলেও জানিয়ে দিয়েছেন, পাওয়াহিটারের সঙ্গে এমন একজন ব্যাটারকে পাঠানো হবে যাঁর ক্রিকেট ব্যাকরণ মজবুত। সে ক্ষেত্রে কি বেঙ্কটেশ আয়ারের সঙ্গে অজিঙ্ক রাহানেকে দেখা যেতে পারে? ম্যাকালামের উত্তর, ‘‘ওপেনিংয়ে কে আসবে, তা একেবারেই ফাঁস করব না। তবে এর মধ্যে কোনও রকেট বিজ্ঞান নেই। বিধ্বংসী ব্যাটারের সঙ্গে টেকনিক্যালি মজবুত একজনকেই শুরুতে রাখা হবে।’’
কেকেআর শিবিরে এ বার প্রতিষ্ঠিত উইকেটকিপারের অভাব রয়েছে। শেল্ডন জ্যাকসন কিপিং করতেন। কিন্তু তাঁর রাজ্য সৌরাষ্ট্রের হয়ে আর কিপিং করেন না। স্যাম বিলিংসও কিপিং করতে পারেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কয়েকটি ম্যাচেই কিপিং করেছেন। তাঁদের সঙ্গেই কিপার হিসেবে দলে রয়েছেন বাবা ইন্দ্রজিৎ। ম্যাকালামের মন্তব্যে ইঙ্গিত রয়েছে, জ্যাকসনের উপরেই কিপিংয়ের দায়িত্ব এসে পড়তে পারে। কোচের কথায়, ‘‘জ্যাকসন, ইন্দ্রজিৎ ও বিলিংস আছে দলে। এ বারের আইপিএলে জ্যাকসনের উপরে নজর রাখা যেতে পারে। ওর হাতে বড় শট আছে। কিপিংয়ের চেয়েও ব্যাটিং বেশি শক্তিশালী। ৩৬ বছর বয়স হলেও ওর ব্যাটের সুইং দেখার মতো। কিপারদের মূল কাজ হচ্ছে বিস্ময় স্পিনারদের সামলানো। সেটা পারলেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এত দিন বিস্ময় স্পিনারদের সঙ্গে অনুশীলন করার পরে আশা করি ওদের কোনও অসুবিধা হবে না।’’
সিএসকের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ২৬টি ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। হেরেছে ১৭ বার। জিতেছে আট বার। এক ম্যাচ অমীমাংসিত। সেই পরিসংখ্যান যদিও কোনও প্রভাব ফেলে না ম্যাকালামের ক্রিকেট-দর্শনে। বলে দিলেন, ‘‘নতুন করে দল গড়েছি। প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। শ্রেয়সকে দেখেই বলে দেওয়া যায়, ও আগামী দিনের মহাতারকা। পরিসংখ্যান নিয়ে চিন্তা করব কেন?’’
সব অঙ্ক পাল্টে দিতেই আজ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নামছে নাইট-বাহিনী।