ম্যাচ জিতে উল্লাসে মেতেছেন কলকাতার ক্রিকেটারেরা। ছবি: পিটিআই।
বেঙ্কটেশ আয়ারের ব্যাটে লেগে বল উইকেটরক্ষকের পিছনে চলে যেতেই উচ্ছ্বাস শুরু কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে। মাঠের মাঝে বেঙ্কটেশকে জড়িয়ে ধরলেন শ্রেয়স আয়ার। মাঠে ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়লেন রিঙ্কু সিংহ, হর্ষিত রানারা। একে অপরের ঘাড়ে উঠে পড়ছেন তাঁরা। উচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাচ্ছেন সাপোর্ট স্টাফেরাও। মাঠে সপরিবার নেমে পড়লেন বাদশা শাহরুখ খানও।
মাঠের এক দিকে রাখা ছিল আইপিএল ট্রফি। তাতে খোদাই করা হচ্ছিল কেকেআরের নাম। ট্রফি পাওয়ার জন্য তর সইল না শ্রেয়সদের। চারপাশে দাঁড়িয়ে কাছ থেকে ট্রফি দেখলেন তাঁরা। আর একটু হলে তুলেই ফেলছিলেন। শ্রেয়সদের উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল, এই ট্রফি জেতার গুরুত্ব তাঁদের কাছে কতটা।
চলতি আইপিএলে প্রতিটি ম্যাচের পরে গৌতম গম্ভীরের নাম করেছেন ক্রিকেটারেরা। দলের সাফল্যে তাঁর কতটা অবদান সেটা জানান তাঁরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও সেটা দেখা গেল। গম্ভীরকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিলেন নারাইন। কেকেআরের প্রতিটি ম্যাচের পরে মাঠ প্রদর্শন করেন শাহরুখ। এই ম্যাচেও করলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী গৌরি খান, ছেলে আরিয়ান ও আব্রাম, মেয়ে সুহানা। অনন্যা পাণ্ডে, শানায়া কপূর, শাহরুখের ম্যানেজার পুজা দাদলানিও ছিলেন সঙ্গে। মাঠ প্রদর্শন করার আগে কেকেআর ক্রিকেটারদের কাছে যান শাহরুখ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। জড়িয়ে ধরেন। গম্ভীরের কপালে চুমু খান শাহরুখ। ক্রিকেটারদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন শাহরুখ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। শাহরুখকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তাঁরা। তার পরে মাঠ ঘুরে দর্শকদের ধন্যবাদ দেন শাহরুখ। চেন্নাই ফাইনালে না থাকলেও মাঠ ভর্তি ছিল। খেলা শেষে শাহরুখকে দেখতে থেকে গিয়েছিলেন দর্শকেরা। তাঁরাও বাদশাকে দেখে হাততালি দেন।
সেই সময়ই ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে ও ম্যাথু হেডেন ধরলেন দলের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফকে। তাঁরা নিজেদের মনের কথা জানালেন।
আন্দ্রে রাসেল— আনন্দ বোঝানোর কোনও ভাষা নেই। আমরা সবাই একটা দল হিসাবে একটাই লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছি। এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। আমাদের তরফ থেকে এটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়িকে উপহার।
বরুণ চক্রবর্তী— বিদেশি ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা ভাল দল তৈরি করার কৃতিত্ব আমি দেব অভিষেক নায়ারকে।
অভিষেক নায়ার (সহকারী কোচ)— আমি প্রথম মরসুম থেকে আইপিএল খেলা শুরু করেছি। ১৬ বছর সময় লাগল প্রথম ট্রফি জিততে। দলের সবার জন্য গর্বিত। বোঝাতে পারব না আমি কত খুশি। রাসেল দারুণ খেলেছে। অনেক দিন পরে এত আনন্দ হচ্ছে।
বেঙ্কটেশ আয়ার— খুব খুশি হয়েছি। নায়ারের বড় ভূমিকা রয়েছে। দলের সবাই এই জয়ের নেপথ্যে রয়েছে। অভিষেক দলের জন্য যা করেছে তা বাইরে থেকে কেউ দেখতে পায়নি। এই জয় সমর্থকদের জন্য। ১০ বছরের অপেক্ষা শেষ হল।
হর্ষিত রানা— আমি কতটা খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না।
রমনদীপ সিংহ— খুব খুশি। এই দিনটার জন্য খুব পরিশ্রম করেছি। তাই আরও আনন্দ হচ্ছে।
নীতীশ রানা— গম্ভীর ভাইকে মেন্টর করার পরে ওকে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম, আমি কতটা খুশি হয়েছি। ও উত্তরে বলেছিল, আমি তখনই খুশি হব যখন ওই ট্রফিটা তুলব। আজ সেই দিন। আমি ওই মেসেজ কোনও দিন ভুলব না।
রিঙ্কু সিংহ— আমার সাত বছরের স্বপ্ন পূর্ণ হল। শেষ পর্যন্ত আমি ট্রফিটা তুলব। গোটা দলকে নিয়ে গর্বিত। ঈশ্বর এটাই চেয়েছিল।
বৈভব অরোরা— আমার কাজ ছিল নতুন বলে উইকেট নেওয়া। তার পরে স্পিনারেরা নিজেদের কাজ করেছে। আজও আমার লক্ষ্য ছিল শুরুতে উইকেট নেওয়া। সেটা করতে পেরেছি।
অঙ্গকৃশ রঘুবংশী— এখনও হজম হচ্ছে না। আশা করছি রাতে উল্লাস করব।
সুযশ শর্মা— দারুণ পরিবেশ। গম্ভীর স্যরকে অনেক ধন্যবাদ। বাকি কোচদেরও ধন্যবাদ।
ভরত অরুণ (বোলিং কোচ)— গত দু’বছর খুব কঠিন ছিল। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। হর্ষিত দুর্দান্ত খেলেছে। নিজের শক্তির উপর ভরসা রেখেছে। স্টার্ক দলে থাকায় বাকি সবার আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল। ও বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরে ও নিজের সেরাটা দেওয়া শুরু করেছে। নারাইন ও বরুণ দারুণ বল করেছে। নারাইনের ব্যাটিং আমাদের কাজে লেগেছে। ওটা গম্ভীরের পরিকল্পনা ছিল। সব মিলিয়ে খুব ভাল পারফরম্যান্স।