প্রেরণা: বেঙ্কটেশের সঙ্গে শাহরুখ। ছবি: এক্স।
আমদাবাদে আইপিএল-এর প্রথম কোয়ালিফায়ারে তাঁর রান ছিল অপরাজিত ৫১। চেন্নাইয়ে ফাইনালে ৫২ রানে অপরাজিত থেকে তিনি মাঠ ছেড়েছিলেন। বড় মঞ্চে বেঙ্কটেশ আয়ার বরাবর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিপক্ষের সামনে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের তৃতীয় বার আইপিএল ট্রফি জয়ের নেপথ্যে অন্যতম নায়ক তিনি।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়াম থেকে কাপ নিয়ে ফেরার পরে টিম হোটেলে সারা রাত উৎসব হয় ক্রিকেটারদের। পরের দিন সকালে প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণা হয় বেঙ্কটেশের। বিকেল পর্যন্ত বিশ্রাম না নিলে বিমানযাত্রাতেও সমস্যা হত। সন্ধেয় বিমানবন্দরে রওনা দেওয়ার আগে হোটেলের লবিতে বসে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রাজি হয়ে যান তিনি।
শাহবাজ় আহমেদের বলে স্কুপ শট মেরে যখন তিনি শেষ রান নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড় শুরু করেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেন রিঙ্কু সিংহ। কোলে তুলে নেন রামনদীপ সিংহ।
দু’হাত আকাশের দিকে তুলে বেঙ্কটেশ বলে ওঠেন, ‘‘কাম অন।’’ ডাগআউটে তখন উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে আন্দ্রে রাসেলের। বেঙ্কটেশের চোখের কোণও কি ভেজেনি? কেকেআর তারকা বলছেন, ‘‘অবশ্যই ভিজেছিল। এখনও মনে আছে ২০২১-এর ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। ফাইনাল হারের যন্ত্রণা কী রকম হতে পারে, এই দলের অনেকেই জানে। এ বার জয়ের স্বাদও সকলে পেল।’’ যোগ করেন, ‘‘দীর্ঘদিনের লড়াই, পরিশ্রম এবং দলীয় দায়বদ্ধতার ফল পেয়েছি। আনন্দে চোখের কোণ তো জলে ভিজবেই।’’
শেষ দু’বছর ধরেই কেকেআর জার্সিতে বড় রান করে আসছেন বেঙ্কটেশ। কিন্তু নাইট শিবিরে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যাঁর প্রত্যেকটি প্লে-অফ ম্যাচেই অর্ধশত রান রয়েছে। বড় মঞ্চ দেখলেই জ্বলে ওঠেন। বেঙ্কটেশ বলছিলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলকে সাহায্য করতে চাই বরাবরই। চাপ উপভোগ করি। প্লে-অফ ও ফাইনালে কম রান তাড়া করতে হলেও চাপ থাকেই। আক্রমণাত্মক শট খেলে সেই চাপ কাটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি দাদার (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) বড় ভক্ত। তিনিও কিন্তু বড় ম্যাচে রান করতেন। আমিও চেষ্টা করি যে, দলের যেখানে আমাকে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন, আমি যেন সেই সময় সেরাটা দিতে পারি।’’
ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে এখনই চিন্তা করছেন না বেঙ্কটেশ। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ভারতীয় দলে ফিরতে পারলে তো ভালই লাগবে। কিন্তু আমি নিজেকে চাপের মধ্যে ফেলতে চাই না। ভাল খেললে ফল মিলবেই।’’
নাইট শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, লোকসভা নির্বাচনের পরে ট্রফি নিয়ে প্যারেড হতে পারে কলকাতায়। বেঙ্কটেশ বলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য অনেককেই পাওয়া যাচ্ছে না। যদি কয়েক দিন পরেও ট্রফি প্যারেড কলকাতায় হয়, আমি তো যাবই। ইডেনে যাঁরা ম্যাচ দেখতে আসেন, তাঁদের সামনে এই ট্রফি তুলে ধরতে চাই। তাঁদের সমর্থন না পেলে আমরা আজ এই জায়গায় পৌঁছতেই পারতাম না।’’
২০১২ ও ২০১৪ আইপিএল জেতার পরে নাইট কর্ণধার শাহরুখ খান উৎসবে মেতে উঠেছিলেন কলকাতার মানুষদের সঙ্গে। কিন্তু এ বার মাঠেও যেন তাঁকে সেরা ছন্দে পাওয়া গেল না। তবে বেঙ্কটেশ জানালেন, ট্রফি জয়ের পরে উৎসবে কোনও খামতি রাখেননি বলিউডের মহাতারকা। তাঁর কথায়, ‘‘এসআরকে থাকা মানেই আনন্দ। পুরো মরসুম জুড়ে আমাদের পাশে থেকেছেন। খারাপ ক্রিকেট খেললেও কোনও চাপ তৈরি হতে দেননি। বারবার বলতেন, ক্রিকেট উপভোগ করো। ম্যানেজমেন্ট তোমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনও মাথা ঘামাবে না। তাঁর এই বার্তাই আমাদের চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ঐক্যবদ্ধ করেছে দলকে।’’