Umran Malik

Umran Malik: গতি দেখে উমরানকে রঞ্জির নেটে বল করতেই দেননি জম্মু-কাশ্মীরের কোচ অজয় রাতরা

ছোটবেলার কোচ বলেছেন, ‘‘মাত্র পাঁচ বছর আগে ডিউস বলে বল করতে শুরু করেছে উমরান। নিজের চেষ্টাতেই ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছে। এটা ওরই কৃতিত্ব।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৩০
Share:

উমরান মালিক। ছবি: আইপিএল

পারভেজ রসুলের কথা সকলেই জানেন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় দলের হয়ে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। এ বারের আইপিএলে আগেই নজর কেড়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের আর এক ক্রিকেটার রাসিখ সালাম। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জোরে বোলারের পর আলোচনায় উপত্যকার আরও এর জোরে বোলার। উমরান মালিক।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এই জোরে বোলার দ্বিতীয় বার আইপিএল খেলছেন। শুধু খেলছেনই না, বাইশ গজে আগুন ছোটাচ্ছেন। জম্মুর বাইশ বছরের এই তরুণের বলের গতি চমকে দিচ্ছে বিশ্বের তাবড় ব্যাটারদের। শুক্রবার কেকেআর-এর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বল করেছেন উমরান। প্রশংসা পেয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদেরও।

Advertisement

ভারতের জোরে বোলারদের মধ্যে উমরানের বলের গতি এখন সর্বোচ্চ। তাঁর এই উত্থানকে এক কথায় বলা যেতে পারে, গলি থেকে রাজপথ। গতির উড়ানে চড়েই গলি ক্রিকেট থেকে আইপিএলের ঝকঝকে মঞ্চে উমরান। শ্রীনগরে জন্ম হলেও উমরানরা থাকেন জম্মুতে। আইপিএলে উমরানের সাফল্যের পর তাঁর ক্রিকেট জীবন কোন খাতে বইবে, তা অজানা। উমরানের বাবা ফল-সবজি বিক্রেতা। কিন্তু এখনই খ্যাতনামী। উমরানের বাবা আবদুল রশিদ বলেছেন, ‘‘এখন আর আমার কাছে কেউ অতিরিক্ত লঙ্কা বা ধনে পাতা চায় না। সবজির দাম নিয়েও কেউ আর আগের মতো দরাদরি করে না।’’ আসলে আইপিএলে ছেলের পারফরম্যান্স এখন মহল্লায় তাঁরও দর বাড়িয়ে দিয়েছে।

ম্যাথু ওয়েড, হার্দিক পাণ্ড্যরাও উমরানের বাউন্সারে পরাস্ত হয়েছেন। অনুশীলনেও উমরানের বিষাক্ত বাউন্সার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। কিউয়ি জোরে বোলার লকি ফার্গুসনের সঙ্গে তাঁর গতির অলিখিত লড়াই শুরু হয়েছে আইপিএলে। জম্মু-কাশ্মীরের হয়ে তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা উমরান তাতেও এগিয়ে। গুজরাত টাইটান্সের সঙ্গে খেলায় ফার্গুসনকে গতির লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছেন উমরান। ম্যাচে তাঁর দ্রুততম বলের গতি ছিল ১৫৩.৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। পরের চারটি দ্রুততম বলের গতি ঘণ্টায় ছিল যথাক্রমে ১৫১.২ কিলোমিটার, ১৫০.১ কিলোমিটার, ১৪৯.৯ কিলোমিটার এবং ১৪৯.৩ কিলোমিটার।

Advertisement

উমরানের গতি নজর কাড়ছে। ছবি: আইপিএল

২০২১ সালের আইপিএলে উমরান হায়দরাবাদের নেট বোলার ছিলেন। নটরাজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় উমরান সুযোগ পান মূল দলে। সে বারও বল হাতে গতির ঝড় তুলেছিলেন ২২ বছরের তরুণ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ১৫২.৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেছিলেন। যা ছিল প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দ্রুততম বল। তাঁর বোলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন বিরাট কোহলীও। উমরানের মতো প্রতিভাকে আগলে রাখার কথা বলেছিলেন কোহলী। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেট বোলার হিসেবে ভারতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন উমরান।

জম্মুর গুজ্জর নগরের শাহিদি চকে ফল-সবজির দোকান আবদুল রশিদের। সেটি এখন উমরানের বাবার দোকান বলে বিখ্যাত। আইপিএলে ছেলের সাফল্যে খুশি রশিদও। তিনি বলেছেন, ‘‘এই দোকান থেকে আমি সংসার চালাই। এখন আমার ছেলের নাম দেশের ঘরে ঘরে সকলে জানেন। কিন্তু তার জন্য আমি কাজ থামাতে রাজি নই। দোকান করে যাব।’’ তিনি মনে করেন উমরান এখন আর শুধু তাঁর ছেলে নয়। গোটা দেশের প্রিয় পাত্র। বলেছেন, ‘‘ও এখন ভারতের সন্তান। ঈশ্বর চাইলে এক দিন দেশের নামও উজ্জ্বল করবে।’’

গোটা দেশ চমকে গেলেও তাঁর প্রথম কোচ রণধীর সিংহ মানহাসের দাবি, আরও বেশি গতিতে বল করতে পারেন উমরান। রণধীর বলেছেন, ‘‘মাত্র পাঁচ বছর আগে ডিউস বলে বল করতে শুরু করেছে উমরান। নিজের চেষ্টাতেই ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছে। এটা ওরই কৃতিত্ব।’’ জম্মুর মৌলানা আজাদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দেন রণধীরের বন্ধু আবদুল সামাদ। প্রতিভা দেখে সামাদের কাছে উমরানকে পাঠান রণধীর। টেনিস বলের ক্রিকেটার উমরানের বোলিং দেখে ভাল লাগে তাঁরও।

রণধীর বলেছেন, ‘‘শুরুতে অনুশীলনে মন দিত না উমরান। এক সপ্তাহ আসার পর তিন-চার দিন বেপাত্তা হয়ে যেত। এটার জন্য ওকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ওর কোনও ধারনাই ছিল না। এক দিন ডেকে বললাম, উমরান তুমি কিন্তু ভারতের হয়ে খেলতে পার। ১০-১৫ সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর হাসতে শুরু করল। উত্তরে বলল, ‘স্যর আপনি কি সত্যি বলছেন?’ ওর দিকে একটু কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলাম, ‘আমরা সঙ্গে কখনও এ ভাবে কথা বলবে না।’ সে দিনের পর থেকে আর কখনও অনুশীলনে কামাই করেনি।’’

উমরান যখন অনূর্ধ্ব ১৯ জম্মু-কাশ্মীর দলের ট্রায়ালে যোগ দেন, সে সময় তাঁর জুতো পর্যন্ত ছিল না। বিনু মাঁকড় প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু সেই ম্যাচ বৃষ্টিতে বাতিল হয়ে যায়। পরের বছর অনূর্ধ্ব ২৩ দলের ট্রায়ালে যোগ দিলেও সুযোগ মেলেনি। ২০১৯-২০ মরসুমে জম্মু-কাশ্মীরের রঞ্জি দলের নেট বোলার ছিলেন উমরান। কিন্তু তৎকালীন কোচ অজয় রাতরা মাত্র চারটি বল করার পর উমরানকে আর বল করতে দেননি। তিনি মনে করেছিলেন উমরানের বলে দলের যে কোনও ব্যাটার আহত হতে পারেন। কিন্তু ওই চার বলেই ভারতীয় দলের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক উমরানের জাত চিনে নিয়েছিলেন। উপত্যকার ক্রিকেট কর্তাদের সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, এমন এক জন বোলারকে বাদ দিয়ে কী ভাবে আপনারা রঞ্জি দল গঠন করলেন?

রাতরা বলেছেন, ‘‘নেটে উমরানের বল দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। আরও বিস্মিত হয়েছিলাম রঞ্জি দলে ওকে না দেখে। পাটা উইকেট থেকেও অবিশ্বাস্য বাউন্স পাচ্ছিল।’’ এর পর দলের অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফ এবং নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে মূল দলে উমরানকে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন রাতরা।

ক্রিকেট জীবনে বিভিন্ন সময়ে কোচদের কাছে যে প্রচুর সাহায্য পেয়েছেন, তা অস্বীকার করেন না উমরান। এখন হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ডেল স্টেনের কাছে তালিম পাচ্ছেন উমরান। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে উমরানকে দেখছেন, তাঁরা মনে করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন জোরে বোলারের পরামর্শে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন উমরান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement