পতন: ফিল্ডিং করতে গিয়ে পড়ে গেলেন নাইটদের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। ছবিটাও হয়ে থাকল শুক্রবারের ম্যাচের প্রতীকি। মাঠেও পতন গম্ভীরের দলের। বরাবরের গাঁট মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে হেরে ফাইনালে যাওয়া আর হল না কেকেআরের। ছবি: পিটিআই।
টিম নিয়ে তিনটে ফাটকা খেলার মাশুল দিতে হল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। প্রথম ফাটকা, গত দুই মরসুমে যাঁকে কোনও ম্যাচে বসানো হয়নি, সেই ইউসুফ পাঠানকে বাদ দেওয়া। বহুবার দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন যিনি, তাঁকে এই ম্যাচেই বসিয়ে দেওয়া হল!
দ্বিতীয় ফাটকা, ট্রেন্ট বোল্টের জায়গায় অঙ্কিত রাজপুত! যে মঞ্চে মিচেল জনসন, লাসিথ মালিঙ্গা, যশপ্রীত বুমরাদের মতো পেসাররা বিপক্ষে, সেখানে বাইরে বোল্ট!
তৃতীয় ফাটকা, ফের ক্রিস লিন ও সুনীল নারাইনকে ওপেন করতে পাঠানো। একটা ম্যাচে তাঁরা ছ’ওভারে ১০৫ তুলেছেন বলে বারবারই কি এই অঘটন ঘটবে?
এই তিন ফাটকাতেই শুক্রবার চিন্নাস্বামীতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ছ’উইকেটে হার। শেষ ‘দশ কি দহাড়’।
কেন এই তিন ফাটকা, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য খেলার শেষে সাংবাদিকদের সামনে এলেনই না নাইট অধিনায়ক। পাঠিয়ে দিলেন পীযূষ চাওলাকে, যিনি প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘আমাকে কেন এই প্রশ্ন করছেন? আমি তো আর দল বাছি না। এটুকু বলতে পারি, আমরা খারাপ ব্যাটিং করেছি বলে হেরেছি।’’
আরও পড়ুন: চাপ ও ভুল সিদ্ধান্তেই বিপর্যয় নাইটদের
টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য অধিনায়ক, সেখানেও ফিরে গেলেন সেই দুই ম্যাচে, কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, যে দু’টো জিতলে না কি এই পরিস্থিতির মুখে দাঁড়াতেই হতো না তাঁদের। ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে বললেন, ‘‘ওই দুটো ম্যাচ জেতা থাকলে আমাদের তো এখানে আসতেই হতো না।’’ মরা-বাঁচার ম্যাচে কেন এতগুলো ফাটকা, তার ধারকাছ দিয়েও গেলেন না। অবশ্য সত্যিটা স্বীকার না করেও পারলেন না, ‘‘এত কম রান নিয়ে জেতা যায়? এই উইকেটে ১৩০-১৪০ তুললেও লড়াই করা যেত। সেটাও তো পারলাম না আমরা।’’
ওদিকে তখন চিন্নাস্বামীর ভিআইপি গ্যালারিতে যেন শাহরুখ খান নন, তাঁর পাথরের মূর্তি বসে।
নাইটদের ইনিংসে ধস নামানোর নায়ক কর্ণ শর্মাই সাংবাদিক বৈঠকে এসে আসল কথাটা বলে গেলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম ছ’ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছি।’’
প্রথম স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট হওয়ার আগেই নাইটদের অর্ধেক ব্যাটিং লাইন-আপ ডাগ আউটে চলে যাওয়ার পরে এ কথা বলতেই পারেন কর্ণ। সাড়ে দশ ওভারে ৫০ রান। একশো তুলতে নাইটদের লেগে গেল ১৭ ওভার। শেষে ১০৭-এ অলআউট। এর পর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া বেঙ্গালুরুতে তুষারপাতের মতোই অসম্ভব।
চিন্নাস্বামী ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ উধাও হয়ে গিয়ে যে এমন নরকে পরিণত হয়েছে, তা তো জানাই ছিল। এর আগে তো এই বাইশ গজেই জোড়া ম্যাচ খেলে গিয়েছে কেকেআর। একটা আবার অবিশ্বাস্য ঝোড়ো পার্টনারশিপের পর। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় নাইট ব্যাটসম্যানরা যে সব শট খেলে আউট হলেন, তার দোষ এই বাইশ গজের ঘাড়ে চাপানোটা ‘স্রেফ মুশকিলহি নেহি, নামুমকিন ভি হ্যায়’।
দলের ছেলেদের শট বাছাই নিয়ে গৌতম গম্ভীর আগেও অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। কিন্তু এ দিন যে ভাবে তিনি কর্ণ শর্মাকে আলগোছে শটে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় হাঁকাতে গিয়ে হার্দিক পাণ্ড্যর হাতে ক্যাচ তুলে দেন, তার পর তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগের আঙুল উঠলে অন্যায় হবে না।
চিন্নাস্বামীর উইকেট ব্যাটসম্যানদের বন্ধু হয়ে উঠতে না-ই পারে, কিন্তু ১০৭-এ শেষ হয়ে যাওয়ার মতো বোধহয় না। বোলিংও তেমন বিষাক্ত নয়। এই মরসুমে চিন্নাস্বামীতে কুড়ি ওভারে এটাই সবচেয়ে কম রানের ইনিংস। আর সেটাও নাইটদের!
কর্ণ শর্মা তাঁর একই ওভারে পরপর দু’বলে গম্ভীর ও কলিন দে গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে কেকেআরের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে বড় ঘা-টা দেন। এই কর্ণকেই কি না আগের দিন টিম হোটেলের রেস্তোরাঁয় উমেশ যাদবের সঙ্গে বসে আড্ডা মারতে দেখা গিয়েছিল। বন্ধুত্ব যে মাঠের বাইরে রেখেই নামতে হয়, সেটা এ দিন উমেশদের বুঝিয়ে দিলেন কর্ণ।
এই কর্ণকে বধ করার জন্য কোনও অর্জুন ছিল না গম্ভীরের কাছে। বরং শিক্ষানবিশদের মতো শট নিয়ে আউট হওয়া একাধিক ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে পেলেন তিনি।