যাত্রা: চেন্নাই থেকে মুম্বইয়ের পথে প্রসিদ্ধ, কুলদীপরা টুইটার
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ট্রফি খরা কি এ বারও কাটবে? সারা দেশে করোনা অতিমারি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেও কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের মনে ভিড় করতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন।
২০১৪-তে শেষ বার আইপিএল জিতেছিল কেকেআর। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে। তার পরে আর ট্রফি নিয়ে ইডেনে বিজয়োৎসব করতে পারেনি শাহরুখ খানের দল। এ বারে অনেকে আশা করেছিলেন, যে-হেতু অইন মর্গ্যানের মতো বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের হাতে নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে, ভাগ্যের চাকা হয়তো ঘুরবে। কিন্তু ক্রিকেটে একটা কথা আছে, অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তাঁর দল। মর্গ্যানের দলকে কে জেতাবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আন্দ্রে রাসেলের মতো শক্তিমানের ব্যাটে সেই ঝড় দেখা যাচ্ছে না। উপরের দিকের ব্যাটিং তিন তরুণ তুর্কির উপরে নির্ভরশীল। শুভমন গিল, নীতীশ রানা, রাহুল ত্রিপাঠী। কিন্তু শুভমন লম্বা ইনিংস খেলে জেতাতে পারছেন না। আগ্রাসী ভঙ্গিতে শুরু করে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছেন। নীতীশ রানা, রাহুল ত্রিপাঠীরা আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট খেলেন না। অথচ আইপিএলে শীর্ষমানের বোলিং খেলতে হয়। তাই তাঁদের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
কেকেআরের সব চেয়ে বড় ভরসা তাদের মাঝের দিকের ব্যাটিং। অইন মর্গ্যান, দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেল, শাকিব-আল-হাসান। এই চার জনের উপর সব চেয়ে বেশি নির্ভর করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কারও কাছ থেকে ম্যাচ জেতানো ইনিংস তো দূরের কথা, মোটামুটি দরের ব্যাটিংও পাওয়া যায়নি। ভারতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া কার্তিককে জামাই আদর করে রেখে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনও ম্যাচই তিনি জেতান না। নতুন অধিনায়ক মর্গ্যানের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, তিনিও অতীতের ছায়া এবং আইপিএলের মতো হাড্ডাহাড্ডি টি-টোয়েন্টি লিগে জেতানোর ক্ষমতা হারিয়েছেন। শাকিবকে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু মনে রাখা হয়নি যে, বেশ কিছুটা সময় ধরে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন নির্বাসিত থাকায়। বোলিংয়ে তেমন ধার দেখা যাচ্ছে না শাকিবের। সব চেয়ে আশ্চর্যের, ২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে দারুণ সফল বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সে ভাবে ব্যাট হাতেও কিছু করতে পারছেন না।
কারও কারও মত, শাকিবকে আরও উপরের দিকে খেলানো যায়, বেশি বল পেলে তিনি অনেক খোলা মনে খেলতে পারবেন। দলেরও উপকার হবে। কিন্তু কেকেআরে এ সব কে ভাববে? যে দলের মস্তিষ্করা প্রথম ওভারে দুই উইকট নেওয়া বোলারকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেয়, তাদের থেকে
কী প্রত্যাশিত?
এক-এক সময় মনে হবে, কেকেআর আসলে হারছে নিলাম টেবলের ব্যর্থতায়। দক্ষতাসম্পন্ন ক্রিকেটার কোথায় শাহরুখের দলে যে ম্যাচ জেতাবেন? বিরাট কোহালি, এবি ডিভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের দক্ষতার কাছাকাছি কেউ নেই এই কেকেআর দলে। এমন কোনও নাম নেই যাঁকে দেখে প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। রাসেলের নাম শুনে আগে ভয় পেতেন বোলাররা, এখন পান না। তার কারণ, ক্রমাগত ফিটনেসকে অবহেলা করে তিনি এমন জায়গায় পৌঁছেছেন যে, দু’ওভার বল করার পরেই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আইপিএলে কেকেআরের সাফল্য ভীষণ ভাবেই নির্ভর করে থেকেছে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকার উপর। আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন। প্রথম জনকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, দ্বিতীয় জনকে বেঞ্চেই বসিয়ে রাখা হয়েছে। নারাইনকে যদি বসিয়েই রাখা হবে, তা হলে তাঁকে নিলামে তুলে দিয়ে নতুন মুখ খুঁজলেন না কেন নাইট কর্তারা? এই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না।
এ বারের নিলাম বড় ভাবে হয়নি। খুব বেশি ভাল ক্রিকেটারকে পাওয়া যায়নি। তার মধ্যেও সেরাদের জন্য ঝাঁপিয়েছে প্রত্যেকটি দল। আরসিবি যেমন কখনও আইপিএল জেতেনি। তবু নিলাম থেকে তুলে নিয়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কাইল জেমিসনের মতো ক্রিকেটারকে। আর কেকেআর? নিলাম থেকে তাদের সংগ্রহ করুণ নায়ার, পবন নেগির মতো কয়েকটি মুখ, যাঁদের কথা এই মুহূর্তে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে কেউ
ভাববেই না। একমাত্র বলার মতো সংযোজন শাকিব-আল-হাসান।
গত বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ব্যর্থ হতে থাকা দলের অধিনায়কত্ব মাঝপথে বদল করা হল। কার্তিককে সরিয়ে মর্গ্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হল। এ বার তা হলে আরও ভাল ভাবে পরিকল্পনা করে দলকে সাজানো হল না কেন? বেশির ভাগ দল প্রস্তুতির জন্য আগে থেকে সেই শহরে পৌঁছে শিবির করেছিল। ধোনির চেন্নাই যেমন চলে গিয়েছিল মুম্বইয়ে। তাঁদের সেখানে খেলতে হবে বলে। আর কেকেআর কী করল? খেলবে চেন্নাইয়ে, শিবির করল মুম্বইয়ে! অন্তত আগে থাকতে চেন্নাইয়ে পৌঁছে গিয়ে তাঁবু ফেললে সেখানকার স্পিন-সহায়ক, মন্থর পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যেত। নাইটদের বোধ হয় চমকে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের শেষ নেই!