ঋদ্ধিমান সাহা: বাংলার এই উইকেটকিপার যে কতটা কার্যকরী তা ভালই দেখা গিয়েছে এ বারের আইপিএল-এ। উইকেটের পিছনে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে না। ব্যাট হাতেও যে সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি কার্যকরী তা-ও প্রমাণ করেছেন।
ঋদ্ধিমান সাহার দুরন্ত ব্যাটিংয়ে বদলে গিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ইনিংসের শুরুতে অধুনা তাঁর দুরন্ত ফর্ম দলের বাইরে রাখছে সাদা বলে বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার জনি বেয়ারস্টোকেও। তিনি যে বিশ্বসেরা উইকেটকিপার, তা মেনে নিয়েছেন আরেক বিশ্বসেরা বিরাট কোহালিও। কিন্তু ব্যাটিংয়ে তিনি খানিকটা ‘কম আক্রমণাত্মক’ বলেই পরিচিত ছিলেন। অনেকেরই বক্তব্য ছিল, ঋদ্ধির ব্যাটিংয়ে ‘আগ্রাসন’ কম। অতএব তিনি টেস্ট দলে উপযুক্ত। একদিনের আন্তর্জাতিক বা টি ২০ ক্রিকেটে নন।
এবারের আইপিএলে ঋদ্ধি সেই ধারণাকে সপাটে বোলার্স ব্যাকড্রাইভ করেছেন। সময়মতো গিয়ার বদলাচ্ছেন। আগ্রাসন আনছেন বল বুঝে। চারটি ম্যাচে তাঁর রান ২১৪। গড় ৭০। দু’টি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেট ১৩৯.৮৬। ঋদ্ধির পক্ষে বিস্ময়কর বৈকি।
দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ঋদ্ধির দুরন্ত ইনিংসের পর সচিন তেন্ডুলকর টুইট করেছেন, ‘দারুণ ব্যাটিং, ঋদ্ধি। বলের লাইন-লেন্থ অনুযায়ী নিজেকে পাল্টে ফেলেছো। উপভোগ করলাম তোমার এই ইনিংস’। ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রীও লেখেন, ‘পৃথিবীর সেরা গ্লাভম্যানের থেকে দুরন্ত ইনিংস’।
কোন মন্ত্রের ঋদ্ধি এতটা আক্রমণাত্মক এবং আগ্রাসী হয়ে উঠলেন?
এ বারের আইপিএলে শুরুর দিকে ঋদ্ধিকে বাইরে রেখেই নামছিল হায়দরাবাদ। চার বিদেশির নিয়মে দলে রাখা যাচ্ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারকেও। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে প্রথম তাঁকে মাঠে নামান অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। সেই ম্যাচে চার নম্বরে নেমে ৩১ বলে ৩০ রান করেন ঋদ্ধি। যদিও ততটা স্বচ্ছন্দ দেখায়নি তাঁকে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কেন তাঁকে চারে নামানো হল? ওপেনিংয়ে শতরান করা ঋদ্ধির কাছে মিডল অর্ডার কি খুব স্বচ্ছন্দের নয়? বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক তথা প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলছেন, “সাদা বলের ক্রিকেটে চার নম্বরটা ঠিক জায়গা নয় ঋদ্ধির জন্য। স্পিনারের বিরুদ্ধে শুরু করতে ও খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়। ওর জায়গা ওপেনিংই।”
এবারের আইপিএলে ঋদ্ধি।
দিল্লির বিরুদ্ধে দুবাইয়ের মাঠে ঋদ্ধিকে নিয়েই ওপেন করতে নামেন ওয়ার্নার। বদলে যায় ঋদ্ধির খেলা। ৪৫ বলে ৮৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন তিনি। সম্বরণের মতে, এই ঋদ্ধি অনেক বেশি আগ্রাসী। তাঁর কথায়, “অনেক বেশি সাহসী ইনিংস খেলছে ঋদ্ধি। মারার বলটা ঠিক মেরে দিচ্ছে। পায়ে বল করলে সেই বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।”
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক এবং বাংলা দলে ঋদ্ধির বহুদিনের সহযোদ্ধা মনোজ তিওয়ারি অবশ্য বলছেন, “ঋদ্ধি এরকমই খেলে। বাংলার হয়েও ওকে এভাবেই খেলতে দেখেছি।”
তবু ঋদ্ধিকে কেন বার বার পিছিয়ে পড়তে হয় ঋষভ পন্থ, সঞ্জু স্যামসনদের সঙ্গে দৌড়ে? সম্বরণ বলছেন, “আমাদের দেশে কিছু খেলোয়াড়কে লাল বলের প্লেয়ার বলে দাগ দিয়ে দেওয়া হয়। এক সময় রাহুল দ্রাবিড়কেও বলা হতো একদিনের ক্রিকেটে চলে না। এখন আবার চেতেশ্বর পূজারা, ইশান্ত শর্মা, ঋদ্ধিমানদের সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়। আমি নির্বাচক থাকলে এখনই সাদা বলের ক্রিকেটে নিতাম ঋদ্ধিকে।” আর মনোজ বলছেন, “নিজেকে বার বার প্রমাণ করেছে ঋদ্ধি। আর কত প্রমাণ করবে? আগেও আইপিএলে ভাল খেলেছে। সেঞ্চুরি করেছে। এ বার ওর ছোট ফরম্যাটে সুযোগ পাওয়াই উচিত।”
আরও পড়ুন: প্লে অফে কার বিরুদ্ধে কে খেলবে, জেনে নিন
২০১৪ সালে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে কলকাতার বিরুদ্ধে ১১৫ রানের ঋদ্ধির ইনিংস এখনও স্মরণীয়। ঋদ্ধির ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। যদিও সে কথা মানতে নারাজ বাংলার প্রাক্তন উইকেটরক্ষক সম্বরণ। তাঁর কথায়, “দিল্লির বিরুদ্ধে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য উইকেটকিপিং করতে পারেনি ঋদ্ধি। দুবাইয়ের গরমে সেটা হতেই পারে।” বয়সের জন্য ঋদ্ধিকে পিছিয়ে রাখার যুক্তিও মানতে চাইছেন না সম্বরণ। বস্তুত, তিনি মানতে চাইছেন না, অদূর ভবিষ্যতে সাদা বলে ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না ঋদ্ধিকে।
সমাপতন। কিন্তু এক বাঙালির ব্যাটেই এ বারের আইপিএলে প্লে অফে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হল কলকাতার। বদলে কলকাতা পেল এক বাঙালি নায়ককেই। সমাপতন। সুখকর সমাপতন।
আরও পড়ুন: লোকেশ রাহুলের ফিটনেস মন্ত্র লুকিয়ে তাঁর এই বেঙ্গালুরু অ্যাপার্টমেন্টে, দেখে নিন অন্দরের ছবি
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ