দুরন্ত: নাইটদের কাঁটা হয়ে উঠলেন এবি ডিভিলিয়ার্স। আইপিএল
এমন দিন খুব কমই আসে, যখন বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে। মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখছেন উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানের জাদু!
ক্রিকেট ইতিহাসে বহু রুদ্ধশ্বাস দ্বৈরথের সাক্ষী থাকা শারজায় সোমবার সে রকমই এক বিরল দিন ছিল। যখন বিরাট কোহালিও পার্শ্ব চরিত্র হয়ে দেখতে থাকলেন, মঞ্চ আজ অন্য এক মহানায়কের। বৈচিত্র্য, বিনোদন, শিল্পকলা, বহুমুখী প্রতিভায় যাঁকে ক্রিকেটের পাবলো পিকাসো বলা যায়! তিনি আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডিভিলিয়ার্স ৩৩ বলে ৭৩ রানের (৫টি চার, ৬টি ছক্কা) এমন এক ইনিংস খেলে গেলেন, যা শারজায় সেই সচিন তেন্ডুলকরের মরুঝড় ইনিংসের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছিল।
আর এই ভয়ঙ্কর সুন্দর ইনিংসের জবাব যিনি পেশিশক্তি দিয়ে দিতে পারতেন সেই আন্দ্রে ‘মাস্ল’ রাসেল ব্যাট হাতে ফের নিষ্প্রভ। ১০ বলে ১৬ করে বিদায় নিলেন। বোলার রাসেল দিলেন চার ওভারে ৫১। শারজার গ্যালারিতে শাহরুখ খানের মুখ দেখে ‘কভি খুশি কভি গম’ টাইটেলও দেওয়া যাবে না। এ দিন যে শুধুই ‘গম’। নাইট মালিকের সামনে চলল এবি নাইট্স!
এর সঙ্গে সুনীল নারাইনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়ারদের রিপোর্ট জমা দেওয়া। নারাইনকে এ দিন খেলানোর সাহস দেখাতে পারেনি কেকেআর। আর এক বার যদি আম্পায়ারেরা জানান, তাঁর অ্যাকশন অবৈধ, তা হলে এই আইপিএল থেকেই বাতিল হয়ে যাবেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনার। রাসেলও চোট নিয়ে খেললেন। ফিল্ডিংয়ে প্রথম বল যেটা ধরলেন, তার পরেই দেখা গেল খোঁড়াচ্ছেন। নারাইন এবং রাসেলের কিছু হওয়া মানে কেকেআরের উড়ান টেক-অফ করার আগেই ইঞ্জিন বিকল। ৮২ রানে হারের চাবুক কার্তিকদের সামনে রাস্তাটাকেই না কণ্টকিত করে তোলে!
কলকাতাপ্রেমীর জার্সি ছেড়ে ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে দেখলে অবশ্য সোমবার ছিল নানা শটের আতসবাজি প্রদর্শনীর রাত। ডিভিলিয়ার্সকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন মাঠের বাইশ গজে নয়, নিজের বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে ফ্যান্টাসি ক্রিকেট খেলছেন আর অ্যামাজ়ন স্পিকারে নানা শটের অর্ডার দিচ্ছেন। অ্যালেক্সা— পুল শট। সঙ্গে সঙ্গে রাসেলের শর্ট বল আছড়ে পড়ল মিডউইকেট বাউন্ডারিতে। অ্যালেক্সা— স্ট্রেট লিফটার! সঙ্গে সঙ্গে কামিন্সের ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতির মিসাইল বোলারের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। নগরকোটি ভাল ‘স্লোয়ার কাটার’ করছিলেন। কোহালিও সমস্যায় পড়ছিলেন। এবি দু’তিনটে বল দেখে নিয়ে গিয়ার পাল্টে ব্যাকফুটে দাঁড়িয়ে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। একটা ছক্কা স্টেডিয়ামের ছাদ পেরিয়ে রাস্তায় গিয়ে চলমান গাড়ির উপরে পড়ছিল প্রায়। রাসেল শরীর থেকে দূরে অফস্টাম্পের উপর ইয়র্কার করলেন। এ বারের আইপিএলে এই বলটা খুব ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এবি যে অন্য গ্রহের ব্যাটসম্যান! অ্যালেক্সা— ইয়র্কার বাউন্ডারি! পয়েন্টের উপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পৌঁছে গেল বল।
এবি-বিরাট জুটিতে উঠল ১০০ রান। শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে ৮৩। যার নব্বই শতাংশ এবির ব্যাট থেকে। এবং কোন পিচে? শারজা হলেও এটা শুরুর সেই শারজা নয়। পিচ মন্থর হতে শুরু করেছে। স্ট্রোক নেওয়া কঠিন হচ্ছে। এখানে এবির ২২১-এর উপরে স্ট্রাইক রেট অবিশ্বাস্য! শিশিরের তত্ত্ব নিয়েও প্রশ্ন থেকে গেল। রাতে বল করেও সফল আরসিবির দুই স্পিনার। যুজ়বেন্দ্র চহাল চার ওভারে দিলেন ১২ রান, এক উইকেট। ওয়াশিংটন সুন্দর চার ওভারে ২০ রান দিয়ে দুই উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে নাইটরা অবশ্য শুরুতেই সেমসাইড গোল খেয়ে বসে থাকল। মাত্র একটা ম্যাচে ব্যর্থ হতেই রাহুল ত্রিপাঠীকে ওপেন থেকে সরিয়ে দিল তারা। শুভমন গিলের সঙ্গে ওপেন করতে গেলেন এই ম্যাচে নারাইনের জায়গায় প্রথম খেলতে নামা টম ব্যান্টন। বিগ ব্যাশে নজর কাড়া ব্যান্টনকে দেখেই মনে হল, প্রবল স্নায়ুর চাপে রয়েছেন!
জনতার আদালতে ধ্বনি উঠছে, কেকেআর দল পরিচালন সমিতির নানা তুঘলকি সিদ্ধান্ত টিমটাকে ভোগাচ্ছে। কখনও অইন মর্গ্যানের ব্যাটিং অর্ডার, কখনও রাসেলের ব্যাটিং অর্ডার। সঠিক প্রথম একাদশ নির্বাচন করতে না পারা। কিছু না কিছু রোজই লেগে আছে। এবি যে দিন খেলবেন, তাঁকে থামানোর বোলার খুঁজে পাওয়া কঠিন। নাইটদের অদ্ভুত সব সিদ্ধান্তের স্রোতই বা কে থামাবে!