কোহালির মুখে জয়ের হাসি। ছবি: আইপিএল।
লজ্জার হার কলকাতা নাইট রাইডার্সের। বুধবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ৩৯ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে হারাল কলকাতাকে। এবং পয়েন্ট তালিকায় উঠে এল দু’নম্বরে। ১০ ম্যাচে বিরাট কোহালির দলের পয়েন্ট ১৪। আর ১০ ম্যাচে ১০ পয়েন্টে চারেই থাকল অইন মর্গ্যানের দল।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কলকাতা নাইট রাইডার্স ৮ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল মাত্র ৮৪। জবাবে ১৩.৩ ওভারে ম্যাচ জিতে নিল ব্যাঙ্গালোর (৮৫-২)।
প্রথমার্ধে ৪০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পড়ার পর মনে হচ্ছিল কলকাতার ইনিংস পুরো ২০ ওভার টিকবে না। তা না হলেও, এ দিন লজ্জার রেকর্ড করল কেকেআর। ১০ উইকেট পড়েনি, আইপিএলে এমন ইনিংসের ক্ষেত্রে এটাই সর্বনিম্ন স্কোর।
এই পরিস্থিতি থেকে জিততে হলে বিপক্ষ ইনিংসে দ্রুত আঘাত হানতে হত কলকাতার বোলারদের। কিন্তু তা হয়নি। ব্যাঙ্গালোরের দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও দেবদত্ত পাড়িকল যোগ করেছিলেন ৪৬ রান। ফিঞ্চ (২১ বলে ১৬) ও পাড়িকল (১৭ বলে ২৫) পর পর ফিরলেও কলকাতা ম্যাচে ফেরেনি। তিনে নামা গুরকিরাত সিংহ (২৬ বলে ২১) ও চারে নামা বিরাট কোহালি (১৭ বলে ১৮) ফেরেন ম্যাচ শেষ করে। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে দু’জনের জুটিতে যোগ হয় ৩৯ রান। জয়সূচক শট আসে কোহালির ব্যাট থেকে।
এই হারের পর ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে মর্গ্যানের নেতৃত্ব নিয়েও। কেন লকি ফার্গুসনকে তিনি দ্রুত আক্রমণে আনলেন না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। আগের ম্যাচের নায়ক ফার্গুসনকে এদিন বল দেওয়া হল পাওয়ারপ্লে-র পর সপ্তম ওভারে। তার আগে প্রথম ৬ ওভারে আরসিবি তুলে ফেলেছিল ৪৪। ফার্গুসন আক্রমণে এসেই ফেরালেন ফিঞ্চকে। আর তাতেই বাড়ল চর্চা। ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রশ্ন তুললেন, ডেথ ওভারের জন্যই কি ফার্গুসনের ওভার বাঁচিয়ে রাখছিলেন মর্গ্যান!
আরও পড়ুন: চোটের জন্য ছিটকে গেলেন ডোয়েন ব্র্যাভো, আরও চাপে চেন্নাই
আরও পড়ুন: চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া বিদেশি পেসারের বদলে উইকেটকিপার নিল নাইট রাইডার্স
বিধ্বংসী মেজাজে থাকা মহম্মদ সিরাজই এ দিন ভাঙলেন কলকাতাকে। ডান হাতি পেসারের দাপটে ১৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল কেকেআর। এর মধ্যে সিরাজের একারই ছিল ৩ উইকেট। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে ওঠা গেল না। সিরাজের বোলিং গড় অবিশ্বাস্য। ৪-২-৮-৩।
দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনিং জুটি ভেঙেছিল কলকাতার। সিরাজের তৃতীয় বলে ফিরেছিলেন রাহুল ত্রিপাঠী (৫ বলে ১)। পরের বলেই নীতিশ রানাকে (১ বলে ০) অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেছিলেন মহম্মদ সিরাজ। শুধু জোড়া ধাক্কাই দেননি, মেডেন ওভারও নিয়েছিলেন সিরাজ। ৩ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করেছিল ইনিংস।
পরের ওভারে নবদীপ সাইনির বলে ফিরেছিলেন শুভমন গিল (৬ বলে ১)। ক্রিস মরিসকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ৩ রানেই পড়েছিল তৃতীয় উইকেট। চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ১৪ রানে। সিরাজের বলে এবি ডিভিলিয়ার্সকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন টম ব্যান্টন (৮ বলে ১০)। পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারের শেষে রান উঠেছিল মাত্র ১৭।
কলকাতার পঞ্চম উইকেট পড়েছিল ৩২ রানে। লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহালের গুগলিতে ঠকে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক (১৪ বলে ৪)। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম দেখিয়েছিল, বল লাগছে স্টাম্পে। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন প্যাট কামিংস। চহালের ডেলিভারি বুঝতে পারেননি তিনিও। কিন্তু, তাঁকে বাঁচিয়েছিল ডিআরএস। দেখিয়েছিল, বল পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আরও এক বার বেঁচেছিলেন কামিংস। এ বার ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন উঠেছিল। রিভিউ নিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর। রিপ্লে দেখিয়েছিল, বল স্টাম্পে লাগছে না।
ফিল্ডিং নয়, ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অইন মর্গ্যান। তাঁর যুক্তি, রান তাড়া করার চেয়ে প্রথমে ব্যাটিং করাতেই দল বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু, অর্ধেক দল যে ৩২ রানেই আউট হয়ে যাবে, তা নিশ্চয়ই দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। ১১ ওভারের শেষে কলকাতার রান ছিল ৩৯। তিনি একক লড়াই জারি রেখেছিলেন। কিন্তু, ৩৪ বলে ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি। ওয়াশিংটন সুন্দরকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন কেকেআর অধিনায়ক।
দু’বার বেঁচে গেলেও বেশি ক্ষণ থাকেননি কামিংস (১৭ বলে ৪)। চহালের বলে দেবদত্ত পাড়িকলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। কলকাতার ষষ্ঠ উইকেট পড়েছিল ৪০ রানে। সপ্তম উইকেট পড়েছিল ৫৭ রানে, যখন মর্গ্যান ফিরেছিলেন। সেখান থেকে কলকাতাকে ৮৪ রানে পৌঁছে দিল কুলদীপ যাদব ও লকি ফার্গুসনের জুটি। শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ১২ করলেন কুলদীপ। ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকলেন ফার্গুসন।
এই ম্যাচেও কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ফেরেননি সুনীল নারাইন। তিনি ১০০ শতাংশ ফিট নন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা অধিনায়ক। পুরো সুস্থ নন বলে দলে ছিলেন না আন্দ্রে রাসেলও। ২০১২ সালের এপ্রিলের পর এই প্রথম কলকাতা দলে নারাইন ও রাসেলের কেউই নেই। রাসেল ও শিবম মাভির পরিবর্তে দলে এসেছিলেন টম ব্যান্টন ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ।
টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। ব্যাঙ্গালোর দলে একটি পরিবর্তন হয়েছিল। শাহবাজ আহমেদের জায়গায় এসেছিলেন মহম্মদ সিরাজ।