৫৪ বলে ৮০। কেকেআরের বিরুদ্ধে ঝোড়ো ইনিংস রোহিত শর্মার। বুধবার আবু ধাবিতে। পিটিআই
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বরাবরই কলকাতা নাইট রাইডার্সের পথের কাঁটা। এই নিয়ে ২৬টি দ্বৈরথে মুম্বই জিতল ২০ বার। ছ’বার জিতেছে কেকেআর। বুধবার আবু ধাবিতেও হার মানতে হল দীনেশ কার্তিকদের। নাইটদের হারের চারটি কারণ খুঁজে পেলাম।
এক, অবশ্যই পাওয়ারপ্লে-তে ২৬ রানের ফারাক। দুই, রোহিত শর্মার ৮০ রানের ইনিংস। তিন, যশপ্রীত বুমরার করা ১৬তম ওভারে আন্দ্রে রাসেল ও অইন মর্গ্যানের ফিরে যাওয়া। চার, মুম্বইয়ের ক্ষুরধার ফিল্ডিং। এই চারটি কারণেই এ বারের আইপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৪৯ রানে হারতে হল নাইটদের। বড় ব্যবধানে হার মানে নেট রানরেটেও বড় ধাক্কা। নাইটদের নেট রানরেট এখন -২.৪৫। শেষের দিকে এই নেট রানরেটই কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
প্রথম ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে ৫৯ রান করেছিল মুম্বই। রোহিত শর্মার প্রিয় জায়গায় বল করে কাজ সহজ করে দেয় প্যাট কামিন্স। সন্দীপ ওয়ারিয়রকে এক ওভারে চারটি চার মেরে ছন্দে ফেরে সূর্যকুমার যাদব। জবাবে সুনীল নারাইনকে নামিয়ে ওপেনিংয়ে চমক দিতে চেয়েছিল কেকেআর। এই রণনীতি আর কত দিন চলবে? গত বছরও দেখা গিয়েছে, ওপেনিংয়ে ধারাবাহিক ভাবে রান করতে পারছে না নারাইন। এ বারও একই পরিকল্পনা দেখে অদ্ভুত লেগেছে। শুভমন গিলের থেকেও ভাল শট বাছাই আশা করেছিলাম।
বিপক্ষে রোহিত শর্মার ইনিংস দেখে শেখা উচিত ছিল শুভমনের। ৫৪ বলে ৮০ রান করে যাওয়া রোহিত বরাবরই ফিল্ডিং দেখে খেলে। কামিন্সের মতো তারকা পেসারকে স্বাগত জানাল ওভারবাউন্ডারি দিয়ে। সেখানেই যাবতীয় আত্মবিশ্বাস ভেঙে গিয়েছে অস্ট্রেলীয় পেসারের। রোহিতের প্রিয় শট ফ্রন্টফুট পুল। সেই জায়গায় ক্রমাগত বল করে গেল কামিন্স। সাড়ে ১৫ কোটি টাকা দিয়ে এ বার ওকে নিয়েছে কেকেআর। তার প্রতিদান, তিন ওভারে ৪৯! আশা করি, পরের ম্যাচে পুরনো ছন্দে ফিরে আসবে কামিন্স।
নায়ক: দুরন্ত ইনিংসে ম্যাচের সেরা অধিনায়ক রোহিতই। পিটিআই
ঠিক যেমন প্রত্যাবর্তন হল বুমরার। প্রথম তিন ওভারে পাঁচ রান দিয়ে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেয় বুমরা।
১৬তম ওভারের প্রথম বলে বিধ্বংসী রাসেলকে ফেরায় লেগকাটারে। সেই ওভারের চতুর্থ বল, বুমরার অফকাটার বুঝতে না পেরে কুইন্টন ডি’ককের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যায় অইন মর্গ্যান। এক ওভারেই সব আশা শেষ হয়ে যায় নাইটদের। মুম্বই বোলিংয়ের সব চেয়ে ইতিবাচক দিক, প্রথম দশ ওভারে ওরা একেবারে রান আটকে দিয়েছে। প্রতিআক্রমণের কোনও রাস্তাই খোলা রাখেনি নাইটদের জন্য। কেকেআরে শিবম মাভি ছাড়া কোনও বোলারকেই খুব একটা বৈচিত্র প্রয়োগ করতে দেখলাম না। বুমরা, কায়রন পোলার্ডরা কিন্তু কখনওই ব্যাটসম্যানকে থিতু হতে দেয়নি। ওভারে চারটি চার ধরনের বল করে বিভ্রান্ত করেছে ব্যাটসম্যানকে।
আরও পড়ুন: বুমরাদের বডিলাইন আক্রমণে ধরাশায়ী কেকেআর
সহজে রান আটকানোর কাজ করেছে ফিল্ডিংও। হিট-উইকেট হয়ে ফিরে যাওয়া হার্দিক পাণ্ড্য যে কতটা ফিট, তা নীতীশ রানার ক্যাচটা দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। ডিপ-একস্ট্রা কভার অঞ্চলে পিছনের দিকে দৌড়ে গিয়ে বাউন্ডারির সামনে তালুবন্দি করে রানাকে।
একটি ব্যাপার ভেবে খারাপ লাগছে। গত বারের মতো এ বারও নাইটরা কিন্তু রাসেল-নির্ভরই রয়ে গেল। অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক তিন নম্বরে ব্যাট করতে এসে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিল। ৩০ রান করার পরে একজন লেগস্পিনারকে এ ভাবে সুইপ মারতে যাওয়া একেবারেই মানা যায় না। হয়তো ভেবেছিল, শেষের দিকে রাসেল ও মর্গ্যান ঝড় তুলে ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দেবে। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে এই রাসেল-নির্ভরতা কাটাতে হবে নাইটদের। বিধ্বংসী অলরাউন্ডারকে আরও স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলার জায়গা দিতে হবে। প্রয়োজনে রাসেলকে আগে নামানো হোক। যাতে সময় পেয়ে পরের দিকে ক্রিজে তাণ্ডব শুরু করতে পারে। প্রথম ম্যাচে কিছু ভুল হতেই পারে। পরের ম্যাচ থেকে এ ধরনের ভুল শুধরেই হয়তো নামবে নাইটরা।
আরও পড়ুন: কেকেআরের বিরুদ্ধেই ৯০৪ রান, আইপিএলে নজির গড়লেন রোহিত