শ্রীবৎস গোস্বামী।
করোনা অতিমারির মধ্যে ক্রিকেট মাঠের চ্যালেঞ্জ। অনেক নতুন অভ্যেস তৈরি করতে হল আমাদের...
বিমানবন্দরের সতর্কতা: ১৯ অগস্ট ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি মুম্বইয়ের উদ্দেশে। কলকাতা বিমানবন্দরে এসে বুঝতে পারলাম চারিদিকে সবাই কতটা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছেন। বোর্ডিং পাসের সঙ্গেই আমাদের দেওয়া হল মুখাবরণ ও ফেস শিল্ড। যা না পরলে বিমানে ওঠা বারণ। ২৩ অগস্ট মু্ম্বই থেকে দুবাই যাওয়ার পথে আরও কড়াকড়ি। ‘ফেস শিল্ড’ ও দস্তানা ছাড়া বিমানযাত্রা করা যাবে না।
বিমানে বিশেষ নিয়ম: শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার জন্য তিনটি রোয়ের আসনে বসানো হল দু’জনকে। দু’টি রোয়ের আসনে বসল একজন। যা আগে কখনও দেখিনি। ‘ফেস শিল্ড’, মুখাবরণ ও দস্তানা হাতে রীতিমতো গরম লাগতে শুরু করে। অগত্যা মানিয়ে নিতেই হবে।
দুবাই যাত্রা: আমার সঙ্গেই মুম্বইগামী বিমানে ছিল ‘পপস’ (ঋদ্ধিমান সাহা), শাহবাজ় (নাদিম) ও আমার স্ত্রী পায়েল। তিন দিন মুম্বইয়ে থাকার পরে উঠে পড়ি দুবাইগামী বিমানে। দুবাই বিমানবন্দরে নেমেই করোনা পরীক্ষা হল আমাদের। বিমানবন্দর থেকে হোটেল যাওয়ার রাস্তায় চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য। আকাশছোঁয়া বিল্ডিং। মেঘ ভেদ করে আকাশে চোখ মেলছে বুর্জ-খলিফা। রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শান্ত সমুদ্র। কিছুটা যাওয়ার পরেই হোটেল। ব্যস, সেখানেই শেষ আমাদের শহর-ভ্রমণ।
আরও পড়ুন: নজরে চেন্নাইয়ের শিবির, যাত্রাপথে উদাসীন মনোভাব
ব্যালকনিতে কফি পার্টি: হোটেলে ঢুকতেই মনে হল অন্য জগতে এসে গিয়েছি। করোনা পরীক্ষা করে প্রত্যেককে বলে দেওয়া হল ঘর থেকে বাইরে যাওয়া চলবে না। শুরুতে একটু অদ্ভুত লাগছিল। রুম সার্ভিস রুমের বাইরে খাবার রেখে কলিং বেল টিপে চলে যাচ্ছে। কেউ দেখাও করতে পারছে না। কিন্তু আবিষ্কার করলাম আমার ব্যালকনির ডান পাশে উপরের দিকে পপস (ঋদ্ধি)-এর ব্যালকনি, বাঁ-দিকে সিদ্ধার্থ কলের। ঠিক নীচে থাকে শাহবাজ় ও বিজয় শঙ্কর। এখন ব্যালকনিতে বসেই চলে আমাদের গল্প ও ট্রেনিং। যে যার নিজের রুমে কফি বানিয়ে বিকেলে ব্যালকনিতে আসে। সামনে দাঁড়িয়ে গল্পের মধ্যে ডুবে যাই কফি পার্টিতে। এটাই এখন আড্ডা।
অনুশীলনের উত্তেজনা: শনিবার থেকে আমাদের অনুশীলন শুরু হবে। বহু দিন পরে মাঠে ফিরতে পারব ভেবেই ভাল লাগছে। দুপুরে চেন্নাই সুপার কিংসে করোনা সংক্রমণের খবর পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, প্রত্যেকে যেন দ্রুত
সুস্থ হয়ে ওঠে। এত দিন ঘরের মধ্যেই চলছিল আমাদের ট্রেনিং। দল থেকে প্রত্যেকের কাছে ‘থেরা ব্যান্ড’ ও ফিটনেস সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। এটা ভেবেই ভাল লাগছে, শনিবার থেকে আর ঘরে থাকতে হবে না। মাঠে দস্তানা হাতে ফিরব। নেটে ব্যাট করার সুযোগ পাব। সাবধানে থাকতে হবে তো বটেই কিন্তু ক্রিকেটেও ফিরতে পারব। মাঠের সবুজ গালিচায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারব আবার।
(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)