গত বছরের ঘটনা। চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে আইপিএলের প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। তার পরেই মুম্বইয়ের মুকেশ অম্বানীর বাড়ি অ্যান্টিলিয়ায় টিম বন্ডিং সেশনের ডাক দেওয়া হয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
দলের প্লেয়ারদের একে অপরকে জানা, চেনা, বোঝাপড়া তৈরিই ছিল আসল উদ্দেশ্য। গত বারের মতো এ বারেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিকেটারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মুকেশ অম্বানীর বাড়ি অ্যান্টিলিয়ায়।
অতলান্তিক মহাসাগরের একটি দ্বীপের নামে এই বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘অ্যান্টিলিয়া’। বাড়ি দেখে রীতিমতো চমকে যান মুম্বই ইন্ডিয়ানসের খেলোয়াড়রা। অ্যান্টিলিয়া বিশ্বের অন্যতম দামি বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকেন সপরিবার মুকেশ অম্বানী। বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬০০ জন কর্মচারী রয়েছেন। ক্রিস্টাল, মার্বেল এবং মুক্তো দিয়ে তৈরি করা ২৭ তলার এই বাড়ির প্রতিটা তলাই স্বতন্ত্র। যা বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
টিম বাস থেকে ক্রিকেটাররা নামার আগে বাসে উঠেই তাঁদের অভ্যর্থনা জানান দলের মালকিন নীতা অম্বানী। নীতার ব্যাখ্যা, “অল্পের জন্য কোনও ম্যাচ হেরে গেলে মনে কষ্ট হয়, একটা দলের বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। কঠিন মুহূর্তে ইতিবাচক থাকতে হবে। দলের বন্ধন যেন দৃঢ় থাকে, সে দিকে নজর রাখতে হবে।” তারপর নীতাই তাঁদের বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসেন।
বাড়ির ভিতরে তাঁদের স্বাগত জানান মুকেশ অম্বানীর ছেলে আকাশ। বিশাল একটি ঘরে আরামদায়ক আসনে বসে কিছুক্ষণ তাঁর কথা শোনেন ক্রিকেটাররা। তারপরই মেতে ওঠেন চমকদার অ্যান্টিলিয়া ঘুরে দেখতে।
অ্যান্টিলিয়ায় রয়েছে দেড়শোরও বেশি গাড়ি। তার জন্য বাড়ির ছয়টি তলা কেবল গাড়ি রাখার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। একটার পর একটা অত্যাধুনিক গাড়ির সংগ্রহ রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয় খেলোয়াড়দের। পুরো গ্যারাজ ঘুরে দেখেন তাঁরা।
চার লক্ষ বর্গফুটের এই বাড়িটা অনায়াসে যে কোনও পাঁচতারা হোটেলকেও লজ্জা দেবে। জিম, হেল্থ স্পা, বিউটি পার্লার, বলরুম, তিনটি সুইমিং পুল, ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি সিনেমা হল। যোগাসন এবং নাচের জন্য আলাদা স্টুডিওর বন্দোবস্তও করা হয়েছে অ্যান্টিলিয়ায়। যা দেখে রীতিমতো ছুটোছুটি করতে শুরু করেন কেউ কেউ। এমন সুন্দর ঘরে গ্রুফি না তুললে হয়!
খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল অ্যান্টিলিয়ায়। শরীরচর্চার জন্য কৃত্রিম ঘাসের গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস নেট। কখনও সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নীচে নেমে রানিং ট্র্যাকে হাঁটলেন, কখনও আবার ব্যাট হাতে প্র্যাকটিসটাও সেরে ফেললেন।
শরীরচর্চার জন্য একটা বড় ঘরের গোটা মেঝে জুড়ে রয়েছে রানিং ট্র্যাক।
অ্যান্টিলিয়ায় রয়েছে ৯টি লিফ্ট। প্রতিটিই ‘সুপার ফাস্ট’। আর ছাদে রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড। ছাদে উঠেও গ্রুফি নেন খেলোয়াড়রা।
খেলোয়াড়দের বিনোদনের জন্য রোলার কোস্টারের ব্যবস্থাও রয়েছে অ্যান্টিলিয়ায়। তিনজন খেলোয়াড় চোখে থ্রিডি চশমা লাগিয়ে যখন রোলার কোস্টার উপভোগ করছেন, নীচে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাকিরা।
টিম বন্ডিং সেশন প্রতিটি ক্রিকেটার দারুণ উপভোগ করেন। গত বার অবশ্য মরসুমটা ভাল যায়নি মুম্বইয়ের। চলতি আইপিএলের শুরুটাও খুব ভাল হয়নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। এ বারও প্রথম ম্যাচেই দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে হারতে হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
চলতি মরসুমেও ঠিক এরকমই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের টিম বন্ডিং সেশনের আয়োজন করা হয় অ্যান্টিলিয়ায়। সেটা অবশ্য এবারে খুবই কাজের হয়েছে দলের জন্য। শুরুটা ভাল না হলেও ফাঁড়া কাটিয়ে ন’টার মধ্যে ছয় ম্যাচ জিতে লিগ তালিকায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এখন দু’নম্বরে।