আশা প্রায় শেষ। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে ফের হেরে প্লে অফের দৌড় থেকে প্রায় ছিটকে গেল নাইটরা। টানা পাঁচ ম্যাচে হার। অথচ আইপিএলের শুরুটা তো ভালই ছিল কেকেআরের জন্য। কোথায় ভুল হচ্ছে নাইটদের? শুধুই কি দল নির্বাচন নাকি মানসিকতাটাই নেই জেতার?
প্রথমত, উপ্পলে এই ম্যাচটা কেকেআরের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জিতলে প্লে-অফের দৌড়ে ভালমতো থাকত কেকেআর। কিন্তু আত্মবিশ্বাসটাই যেন আর নেই। হারার আগেই যেন হেরে যাচ্ছে দল।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং একেবারেই ভাল হচ্ছে না। কোনও ম্যাচে কুলদীপ ভাল খেলছেন, কোনও ম্যাচে হ্যারি গার্নি। বোলিং স্তম্ভের প্রত্যেকেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেললে এতটা সমস্যায় পড়তে হত না।
লড়াকু মনোভাবটাই হারিয়ে ফেলে রাস্তাটা আরও কঠিন হয়ে গেল তাদের জন্য। বিশষে করে দলে তারুণ্যেরও অভাব রয়েছে। চাওলা, উথাপ্পা এমনকি কার্তিককেও ক্রিকেটের ভাষায় তরুণ আর বলা যায় না।
হায়দরাবাদের ম্যাচে কুলদীপের বদলে দলে নেওয়া কে সি কারিয়াপ্পাও পারলেন না দলের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে। ২ ওভারে ৩৪ রান দিলেন তিনি। ‘বৃদ্ধ’ পীযূষ দিলেন ৩ ওভারে ৩৮ রান দিলেন।
এই নাইট দলে ভাল কোনও পেসার নেই। হ্যারি গার্নি, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ বা এই ম্যাচে খেলতে নামা ইয়ারা পৃথ্বী রাজ, কারওই নতুন বলে বিপক্ষকে ধাক্কা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
ব্যাট করতে নেমে কলকাতার স্কোর চার উইকেটে ৭৩ হয়ে গিয়েছিল, ৮.২ ওভারে। কিন্তু সেই সময় রাসেলকে নামানো হয়নি। ১৫.৩ ওভারে রাসেল নামলেন রবিবার খেলতে। নয়টি বল খেলে ১৫ রান করেন রাসেল, বেশি বল খেলার সুযোগই মেলেনি তাঁর, কারণ ব্যাটিং অর্ডারে অনেক পিছনে রয়েছেন তিনি।
রাসেলের হাতে জেতানোর রান তোলার মতো যথেষ্ট বলই পড়ে থাকছে না। এসেই ব্যাট চালাতে হচ্ছে। ক্রিজে থিতু হওয়ার সময়টুকু নেই। দ্বিতীয়ত, মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিও এটা, কারণ টিমের পাল্স রেট এত নেমে যাচ্ছে তখন যে, সব বলেই ছক্কা মারতে হবে তাঁকে।
উথাপ্পার বদলে দলে নেওয়া রিঙ্কু সিংহ ২৫ বলে ৩০ রান করলেন এ দিন, লিন করলেন ৪৭ বলে ৫১ রান, অর্থাৎ রান তোলার গতিটা কেকেআরের ক্ষেত্রে একটা বড় দুর্বলতা হয়ে দেখা দিচ্ছে বার বার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উপরের দিকে ব্যাট করার সাহস দেখালেন না দীনেশ কার্তিক নিজেও। কিন্তু বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়া কার্তিকের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ ছিল আগে নেমে ব্যাট করলে। আরসিবির ম্যাচেও তাই হয়েছে।
দীনেশ কার্তিকের শরীরী ভাষা কোনও ম্যাচেই ঠিক নেতৃত্বের উপযুক্ত নয়। খুব ঝিমিয়ে পড়া মনে হচ্ছে তাঁকে। কোচ জাক কালিসের ক্ষেত্রেও তাই। দু’জনের কেউই দলকে মোটিভেট করতে পারছেন না।
রবিবারের ম্যাচে তিনটে ক্যাচ মিস করলেন নাইট ফিল্ডাররা। প্রথম ক্যাচ মিস হল বেয়ারস্টো যখন এক রানে ব্যাট করছেন। ওই ক্যাচটা নিলে ম্যাচের ফল বদলাতে পারত। আত্মবিশ্বাসের কারণেই মনোসংযোগের অভাব ঘটছে।
কেকেআরের মূল শক্তির জায়গাটা হল স্পিন, চাওলা কিংবা নারাইন প্রতিপক্ষকে লড়াই দিতে পারেন এই জায়গায়, কিন্তু তা হচ্ছে না, কারণ পিচ একেবারেই স্পিনারদের সাহায্য করছে না।
এ ছাড়াও সুনীল নারাইনের ইকনমি রেট প্রায় আটের কাছে। কৃপণ বোলিং করছেন সুনীল বললে ভুল হবে না খুব একটা।
প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে স্লগ ওভার বোলিং ভুগিয়েছে। একমাত্র দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের সুপার ওভারে ১১ রান দেওয়া বাদ দিলে স্লগ ওভার বোলিংয়ের অবস্থা শোচনীয় নাইট বাহিনীতে। সব মিলিয়ে বারবার পিছিয়ে পড়ছে তারা।
ঘরের মাঠ ইডেনেও পিচের তেমন সাহায্য পাচ্ছে না বোলাররা। ফলে কেকেআরের প্লে-অফে ওঠার কাজটা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।